Over Hydration Risks

ঘুমের আগে গ্লাসভর্তি জল পান করার অভ্যাস? এর ফলে শরীরে কী প্রভাব পড়ছে জানেন

রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে জল খাওয়া নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি রয়েছে। কেউ কেউ বলেন শোয়ার আগে জল খেলে উপকার মেলে, আবার, অনেকেরই ধারণা ঘুমের আগে জল খেলে নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটবে। তবে দু’টির মধ্যেই সত্যতা রয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৫ ১৬:২৮
Share:

শোয়ার আগে জলপান করেন? ছবি: সংগৃহীত।

ঘুমের সময়েও নানা শারীরবৃত্তীয় কাজের মাধ্যমে শরীর থেকে ধীরে ধীরে জল বেরোতে থাকে। মূত্রত্যাগ ছাড়াও ঘাম, নিঃশ্বাস এবং স্বাভাবিক বিপাকীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জল নিঃসরণ ঘটতে থাকে বলেই অনেকেরই তেষ্টার চোটে ঘুম ভেঙে যায়। অথবা সকালে চোখ খুলতেই টের পাওয়া যায়, গলা শুকিয়ে কাঠ। কেবল তা-ই নয়, অনেক ক্ষেত্রে সকালের ক্লান্তির কারণও জলশূন্যতা হতে পারে। রাতে ডিহাইড্রেশন হলে পর দিন সকালেও তার প্রভাব পড়ে। তাই বলা হয়, সন্ধ্যার পর থেকে রাত পর্যন্ত হাইড্রেটেড থাকলে শরীরে তরলের ভারসাম্য বজায় থাকে, এবং দেহের তাপমাত্রা কমে গিয়ে ঘুমোনোর জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে শরীর। পাশাপাশি, জলের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে পুষ্টির প্রবাহ ঠিক থাকে এবং দূষিত পদার্থ বেরিয়ে যেতে পারে।

Advertisement

কিন্তু রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে জল খাওয়া নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি রয়েছে। কেউ কেউ বলেন শোয়ার আগে জল খেলে উপকার মেলে, আবার, অনেকেরই ধারণা ঘুমের আগে জল খেলে নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটবে। তবে দু’টির মধ্যেই সত্যতা রয়েছে। জল রাতের দিকে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে ঠিকই, কিন্তু বেশি পরিমাণে খেলে ঘুম বার বার ভেঙে গিয়ে শরীর খারাপ হয়ে যায়। তাই অভ্যাসটা উপকারী যেমন, তেমনই ভুল হলে ঝুঁকিও আছে। তাই উপকার এবং অপকার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া ভাল।

রাতে কতখানি জল খান? ছবি: সংগৃহীত।

ঘুমোনোর আগে জল খাওয়ার উপকারিতা

Advertisement

রাতে ডিহাই়ড্রেশনের ঝুঁকি কমে: সারা দিনে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান না করে থাকেন, তা হলে ঘুমোনোর আগে জল খেয়ে শুতেই হবে। না হলে ঘুমের মধ্যেই ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। তা ছাড়া ঘুমের মধ্যে মুখ শুকিয়ে যাওয়া এবং সকালে উঠে তেষ্টায় কষ্ট পাওয়ার সমস্যাও থাকবে না।

দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে: দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার নেপথ্যে জলের বড় ভূমিকা রয়েছে। রাতের দিকে অল্প পরিমাণে জল খেলে শরীরের তাপমাত্রা কমে গিয়ে ঘুম ভাল আসে। শরীর আরাম পায়, মনমেজাজও ঠিক হয়।

প্রাকৃতিক ভাবে দূষিত পদার্থ বেরোয়: প্রাকৃতিক ভাবে শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করে পরিষ্কার রাখার জন্য খুবই কার্যকরী জল। রাতে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে গিয়ে রক্ত চলাচল উন্নত করে।

মনমেজাজ ভাল থাকে: শরীরে জলশূন্যতা দেখা দিলে মনমেজাজ খারাপ থাকে, বিরক্তি তৈরি হয়। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাও কমে যায় অনেক সময়ে। তাই রাতের দিকে খানিক জল খেয়ে শুলে সারা রাতে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা দেখা দেবে না। এতে মনমেজাজ ভাল থাকে, মাথা বেশি ভাল কাজ করে।

হ্যাংওভারের সমস্যা মেটে: রাতে মদ্যপান করলে ঘুমোনোর আগে অল্প পরিমামে জল পান করলে জলশূন্যতার সমস্যায় ভোগার ঝুঁকি কমে যায়। পর দিন সকালে উঠে সতেজ বোধ করতে পারেন।

ঘুমোনোর আগে জল খাওয়ার অপকারিতা

রাতে ঘনঘন প্রস্রাব পায়: বার বার মূত্রত্যাগ করার জন্য মধ্যরাতে উঠলে ঘুমের ছন্দ নষ্ট হয়। পর দিন ক্লান্তিভাব বাড়ে এবং শরীরের স্বাভাবিক বিশ্রামের সময়টি বাধাপ্রাপ্ত হয়। শারীরিক এ সমস্যাকে বলা হয় নকটুরিয়া। শৌচালয় যাওয়ার জেরে বার বার ঘুম ভাঙলে ফের ঘুম আনাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।

শরীরে তরলের পরিমাণ বেড়ে যায়: অতিরিক্ত জল খেয়ে ঘুমোতে গেলে শরীর তরলের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে না। এর ফলে পেটফাঁপার সমস্যাও বেড়ে যেতে পারে। শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

গুরুতর রোগের ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক: কিডনির সমস্যা, ডায়াবিটিস, হার্টের রোগ, ইত্যাদি থাকলে তাঁদের রাতের দিকে বেশি জল খাওয়া উচিত নয়। এ সমস্ত ক্ষেত্রে রোগের ঝুঁকি আরও বেড়ে যেতে পারে।

শরীরে জলের পরিমাণ ঠিক রাখার কার্যকরী নিয়ম কী?

শরীরে জলের পরিমাণ ঠিক রাখার সমাধান হচ্ছে সঠিক সময় এবং সঠিক পরিমাণ। ঘুমের অন্তত এক ঘণ্টা আগে জল খাওয়ার অভ্যাস রাখলে শরীর সময় মতো বাড়তি জল ছেঁকে ফেলতে পারে। রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমে। শোয়ার আগে যদি তেষ্টা পায়, দু’তিন চুমুক জলই যথেষ্ট। গ্লাস ভরে খাওয়ার দরকার নেই। অনেকেই হালকা গরম জল বেছে নেন, কারণ এতে অন্ত্র, কোলন একটু শিথিল হয়। দিনের বেলায় যথেষ্ট পরিমাণে জল খেয়ে নিলে রাতের দিকে চাপ পড়ে না। দিনভর হাইড্রেশন ঠিক থাকলে, রাতে তত বেশি জল খাওয়ার প্রয়োজনই পড়ে না। সন্ধের পর ধীরে ধীরে জল খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিলে শরীর স্বাভাবিক ভাবেই ঘুমের রুটিনে ঢুকে পড়ে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement