পরোটা কী ভাবে খেলে স্বাস্থ্যকর হবে? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
পরোটা ছাড়া কিছু ভালই লাগে না। সকালের জলখাবার হোক, দুপুরের খাওয়া বা রাতে— নানা রকম পরোটাই থাকে পাতে। সঙ্গে ঘরে পাতা দই ও খানিকটা আচার। এই খেয়েই দিব্যি সুস্থ আছেন দিল্লির মন্ত্রী মনজিন্দর সিংহ সিরসা। ঘরে বানানো পরোটা ছাড়া তাঁর মুখে কিছু রোচে না। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী জানিয়েছেন, ঘরে তৈরি পরোটার চেয়ে ভাল খাবার আর কিছু হয় না। এই খেয়ে তাঁর পেটের গোলমাল নেই আর ওজনও বাড়েনি।
পরোটা নিঃসন্দেহে মুখরোচক খাবার। উত্তর ভারতে পরোটা-বিলাস থাকলেও বাঙালির পাতের তিনকোনা ময়দার পরোটারও জবাব নেই। এখনকার বাঙালি হেঁশেলে আবার রসিয়ে আলুর পরোটা, ফুলকপি বা মেথির পরোটাও তৈরি হয়। কিন্তু কথা হল, পরোটা বাঙালি বাড়িতে কালেভদ্রেই হয়। রোজের ডায়েটে ভাত বা রুটি খাওয়ারই চল বেশি। মন্ত্রীর মতো যদি তিন বেলা পরোটা খেতে মন চায়, তা হলে সেই অভ্যাস কি স্বাস্থ্যকর? বাড়িতে বানানো পরোটা খেলে কি ওজন বাড়বে না?
মন্ত্রী জানিয়েছেন, আলু, ফুলকপি বা যে কোনও সব্জির পুর বানিয়ে পরোটা তৈরি হয় তাঁর বাড়িতে। এমনকি রাতের বেঁচে যাওয়ার ডাল ময়দার সঙ্গে মিশিয়ে ডাল-পরোটাও তৈরি হয়। তা খেতেও খুব সুস্বাদু। অর্থাৎ, পুর ভরা পরোটাই বেশি পছন্দ তাঁর। এই বিষয়ে পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তীর মত, পরোটা পুর ভরা হোক বা ছাড়া, কখনওই তিন বেলা সেটি খাওয়া স্বাস্থ্যকর নয়। বিশেষ করে কলকাতার আবহাওয়া যেমন, তাতে পরোটা বা ময়দার তৈরি খাবার বেশি খেলে তা হজম করা কঠিন। এখানকার আবহাওয়ায় সহজপাচ্য খাবারই ভাল। পরোটা মাঝেমধ্যে খেলে ক্ষতি নেই, তবে পুর ভরা পরোটায় ক্যালোরি অনেক বেশি। আলু, ফুলকপি, ডিম বা মাংসের পুর তৈরি করতে অনেকটা মশলা লাগে। সেই মশলা মাখানো পুর ঠেসে বেশি করে তেলে ভাজা পরোটা খেলে হজমের গোলমাল হতে বাধ্য। বিশেষ করে যাঁদের অম্বলের ধাত আছে অথবা যাঁরা ওজন কমাতে চাইছেন, তাঁদের জন্য তেলে ভাজা ময়দার পরোটা নৈব নৈব চ।
পরোটা কী ভাবে খেলে স্বাস্থ্যকর হবে?
ময়দা দিয়ে তৈরি পরোটা বেশি খাওয়া ঠিক নয়। তবে যদি পরোটা খুব প্রিয় হয়, তা হলে ময়দার বিকল্প ভাবা যেতে পারে। যেমন রাগি, বাজরা, বেসন বা ওট্সের পরোটা খাওয়া যেতে পারে। আটার পরোটাও মন্দ নয়।
আটায় প্রাকৃতিক ফাইবার, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ থাকে। আটা দিয়ে তৈরি পরোটা খুব কম তেলে ভেজে খাওয়া যেতে পারে।
বাজরায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস থাকে। বাজরা দিয়ে তৈরি পরোটা বা রুটি হজমশক্তি বাড়াবে। ডায়াবিটিসের রোগীদের জন্যও তা উপকারী।
রাগির তৈরি রুটি বা পরোটা খুবই উপকারী। তবে কম তেলে ভাজতে হবে। রাগিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। গ্লুটেনে অ্যালার্জি আছে যাঁদের, তাঁদের জন্য রাগি খুবই ভাল বিকল্প।
ওট্স ফাইবার (বিটা-গ্লুকান), প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে সমৃদ্ধ। এটি কোলেস্টেরল কমাতে এবং হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। ওট্স পিষে নিয়ে তা দিয়ে তৈরি রুটি বা পরোটা স্বাস্থ্যকর। ওজন কমানোর ডায়েটে নিশ্চিন্তে তা রাখা যেতে পারে।