KK

Kk Death: ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন’ কেকের আকস্মিক মৃত্যুর কারণ! কী এই রোগ

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকরা ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন’-এর কারণেই মৃত্যু হয়েছে বলে অনুমান করছেন। এর লক্ষণগুলি কী কী?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২২ ১২:০১
Share:

হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত এমন আকস্মিক মৃত্যু যথেষ্ট ভাবাচ্ছে চিকিৎসকদের ছবি: সংগৃহীত

দেখতে দেখতে ৩ দিন পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু প্রিয় গায়কের এই আকস্মিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ। গোটা একটা প্রজন্ম প্রেমে পড়েছিলেন কেকের গানের। পছন্দের গায়কের এমন হঠাৎ করে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না তাঁর অসংখ্য অনুরাগীরা। গত মঙ্গলবার সন্ধেয় অনুষ্ঠান শেষ করে মধ্য কলকাতার এক বিলাসবহুল হোটেলে ফেরার পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন কেকে। তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃত্যুর আসল কারণ নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে একটা ধন্দ ছিল। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকরা ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন’-এর কারণেই মৃত্যু হয়েছে বলে অনুমান করছেন। যা সাধারণত হার্ট অ্যাটাক নামে পরিচিত সাধারণের কাছে।

Advertisement

গোটা বিশ্বে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ শুধু হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, অনিয়িমত খাওয়াদাওয়া, মানসিক উদ্বেগের মতো কয়েকটি কারণে হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু কেকে অত্যন্ত শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন করতেন বলেই জানা গিয়েছে। নিয়মিত শরীরচর্চার পাশাপাশি খাওয়াদাওয়াতেও বিধিনিষেধ মেনে চলতেন। তা সত্ত্বেও হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত এমন আকস্মিক মৃত্যু যথেষ্ট ভাবাচ্ছে চিকিৎসকদের।

ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরলের মতো কোনও শারীরিক সমস্যায় কেকে ভুগতেন কি না সে ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। ছবি: সংগৃহীত

কী এই মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন?

Advertisement

সেন্টার ফল ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ট প্রিভেনশন অনুসারে, হৃদ্‌পিণ্ডের পেশির একটি অংশ অনেক সময় পর্যাপ্ত রক্ত পায় না। কিন্তু রক্তপ্রবাহ পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে যত দেরি হয় ততই হৃদ্‌পিণ্ডের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে করে। এই অবস্থাকে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বলা হয়।

এর লক্ষণগুলি কী কী?

১) নিশ্বাস নিতে কষ্ট।

২) অত্যধিক ক্লান্তি বোধ।

৩) বুকে ব্যথা।

৪) তলপেটে এবং ঘাড়ে ব্যথা হওয়া।

৫) চোখে অন্ধকার দেখা।

কোন কারণ ঝুঁকি বাড়ে এই রোগের?

মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির অন্যতম কারণ উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ধূমপানের প্রবণতা, স্থূলতা এই রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি কোনও মানসিক চাপও হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।

ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরলের মতো কোনও শারীরিক সমস্যায় কেকে ভুগতেন কি না সে ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। দর্শকের প্রত্যাশা পূরণের চাপ সব শিল্পীদেরই থাকে। এ নতুন কিছু নয়। কেকে-রও হয়তো ছিল। মানসিক ভাবে হালকা থাকতে মাঝেমাঝে ধূমপান করতেন বলে শোনা যায়। তবে ৫৪ বছরেও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মঞ্চ মাতিয়ে রাখতেন। কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে আসতেই কপালে ভাঁজ চিকিৎসকদের।দেখা গিয়েছে, কেকের হৃদ্‌পিণ্ডের চারপাশে পুরু মেদের আস্তরণ। সেটি সাদা হয়ে গিয়েছিল। হৃদ্পি‌ণ্ডের মোড়ক খুলতেই দেখা যায় কপাটিকাগুলি অস্বাভাবিক রকম শক্ত হয়ে রয়েছে। পুলিশ সূত্রে সেই খবর সামনে এসেছে বৃহস্পতিবার।

শুধু তাই নয়, কেকের শরীরে ১০ রকম হজমের ওষুধ এবং ভিটামিন সি পাওয়া গিয়েছে। হজমের সমস্যার জন্য কেকে নিয়মিত মুঠো মুঠো অ্যান্টাসিড এবং গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেতেন বলেও জানা গিয়েছে। তাঁর রক্তেও সেই নমুনা পাওয়া গিয়েছে। কেবল অ্যালোপ্যাথি নয়, আয়ুর্বেদিক এবং হোমিওপ্যাথি ওষুধেরও হদিস মিলেছে প্রয়াত গায়কের পাকস্থলীতে।

অভ্যন্তরীণ প্রত্যঙ্গের খুঁটিনাটি পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে আরও বিশদে যেতে চাইছেন চিকিৎসকরা। কেকের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নমুনা হিস্টোপ্যাথলজিকাল পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। হিস্টোপ্যাথোলজি হল কোষের বিশদ পরীক্ষা, যেখানে যাবতীয় অস্বাভাবিকতা, ব্লক জনিত ত্রুটি খতিয়ে দেখা যাবে।

ডাক্তাররা বলছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হৃদ্‌পিণ্ডে কাঠিন্য দেখা যায়। তবে কেকের হৃদ্‌পিণ্ডের যে চেহারা ধরা পড়েছে তা স্বাভাবিক নয়। কোথায় কোথায় ধমনীর পথ আটকে গিয়েছিল সে সব জানতে হবে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩১ মে সকালে কেকে তাঁর ম্যানেজারকে বলেছিলেন শরীরে জোর পাচ্ছেন না। সেই রাতেই, অর্থাৎ মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে, তিনি স্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘‘কাঁধ এবং বাহু কনকন করছে।’’ সেই অবস্থাতেই মঞ্চে ওঠেন কেকে।অসুস্থ অবস্থাতেই অনুষ্ঠান করে যান। তার পর অনুষ্ঠান শেষে অসুস্থ হয়ে পড়েন। হোটেলে ফিরে সোফায় বসতে গিয়ে মেঝেতে বসে পড়েন গায়ক। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন