প্রতি দিন নানা খাবারে চিজ় খাচ্ছেন? শরীরের জন্য ভাল হচ্ছে কি? ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
খাবারের জগতে চিজ়ের খাতির আলাদাই। পিৎজ়া হোক বা রিসোত্তো— খাবারে মিশে থাকা চিজ়ের স্বাদ অনবদ্য। মুচমুচে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই হোক বা ভাজাভুজি—চিজ় সসে্র সঙ্গত কিন্তু দারুণ জমে। স্যান্ডউইচ থেকে স্যালাডেও চিজ়ের সঙ্গ দারুণ।
খেতে স্বাদু। প্রোটিনেও ভরপুর। পুষ্টিগুণ কম নয়। কিন্তু নিয়মিত চিজ় খাওয়া কি স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল?
‘নেচার কমিউনিকেশনস’ জার্নালে ২০২৫ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা সংক্রান্ত তথ্য বলছে, চিজ়ের মতো দুগ্ধজাত পণ্য কার্ডিয়োভাস্কুলার অসুখের ঝুঁকি কমায় ৩.৭ শতাংশ। স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় ৬ শতাংশ। ২০২৩ সালের একটি সমীক্ষাতেও প্রকাশ পেয়েছে চিজ় হার্টের অসুখ, টাইপ ২ ডায়াবিটিস, হাড় ভঙ্গুর হওয়ার প্রবণতা কমায়।
পুষ্টিগুণ: দুধ থেকে তৈরি হয় চিজ়। তৈরির পদ্ধতি, স্বাদ, গুণগত মানের উপর ভিত্তি করে এর নানা রকম নামও আছে।উপকারিতাও কম নয়। এক টুকরো পার্মেসন চিজ় মানবদেহে দৈনিক ক্যালশিয়ামের চাহিদার ৩০ শতাংশ পূরণ করতে পারে। তা ছাড়া, এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিনও মেলে। জ়িঙ্ক, রাইবোফ্ল্যাভিন, ভিটামিন বি১২-এর উপস্থিতি খাবারটির পুষ্টিগুণ বাড়িয়েছে। স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে, লোহিত কণিকা উৎপাদনে ভিটামিন এবং খনিজগুলির ভূমিকা রয়েছে। কোনও কোনও চিজ়ে মেলে ভিটামিন কে২, স্বাস্থ্যের জন্য যা বিশেষ উপযোগী। চিজ় ইনসুলিন সেনসিটিভিটি কমিয়ে টাইপ ২ ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
কোন ধরনের চিজ় স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল? ছবি: সংগৃহীত।
সেডার, পার্মেসন-সহ কিছু কিছু চিজ়ে থাকে প্রোবায়োটিক। পেটের স্বাস্থ্যের জন্য তা অত্যন্ত ভাল।
ক্যালশিয়াম থাকার জন্য হাড় মজবুত রাখতেও চিজ় খাওয়া দরকার। বিশেষত, বয়সকালে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এই ধরনের ঝুঁকি কমাতে পাতে চিজ় রাখা ভাল। শুধু পুষ্টিগুণে নয়, চিজ় সমৃদ্ধ খাবার পরিতৃপ্তিও আনে। কিন্তু স্বাস্থ্যকর উপায়ে খেলেও রোজ কি চিজ় খাওয়া ভাল, এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে।
উপকার সত্ত্বেও ঝুঁকি আছে
· পুষ্টিগুণে ভরপুর চিজ় নিয়মিত খাওয়া যায়, তবে পরিমিতিবোধ খুব জরুরি। চিজ়ে ক্যালোরির পরিমাণ অত্যন্ত বেশি। ফলে প্রতি দিন চিজ় খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। তা ছাড়া, এই খাবারে ফ্যাটের মাত্রাও বেশি।
· কোনও কোনও চিজ়ে সোডিয়ামের মাত্রা বেশি। ফলে রক্তচাপ উপরের দিকে থাকলে চিজ় বেশি খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে।
· রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে, নুন যুক্ত চিজ় খাওয়া বন্ধ করতে হবে। চিজ় খেলেও খুব সামান্য পরিমাণে খেতে হবে।
· দুধে থাকা ল্যাক্টোজ় হজমে সমস্যা হলে, সব ধরনের চিজ় হজম হবে না। এই ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
কী ভাবে চিজ় খেলে ভাল?
বিভিন্ন রকম চিজ়ের পুষ্টিগুণ আলাদা। স্বাস্থ্যের কথা ভাবলে গোডা, পার্মেসন, সেডার— এই ধরনের চিজ় ভাল। এতে থাকে প্রোবায়োটিক, যা পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখে।
পিৎজ়া, পাস্তা নিয়মিত খাওয়া ঠিক নয়। চিজ়ের পুষ্টিগুণ পেতে হলে ফল, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
কম নুন এবং কম ক্যালোরির চিজ় বেছে নেওয়া ভাল।
সুতরাং চিজ় স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর নয়। একাধিক গবেষণায় এর পুষ্টিগুণ প্রমাণিত। কিন্তু পরিমিত পরিমাণে না খেলেই সমস্যা। তখন উপকার, অপকারে বদলে যেতে পারে।