কী কী টিকা নিলে অসুখবিসুখ দূরে থাকবে, কারা নেবেন? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ছোটদেরই জন্যই শুধু নিয়ম মাফিক প্রতিষেধক রয়েছে, তা নয়। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও রয়েছে একাধিক টিকা। সময়ান্তরে সে সব নিয়ে রাখলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়বে এবং সংক্রামক অসুখবিসুখ ধারেকাছে ঘেঁষবে না। শীতের সময়ে নানা ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়ার উৎপাত বাড়ে। ইদানীং ভাইরাল জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে, থাবা বসাচ্ছে হেপাটাইটিসের মতো লিভারের জটিল সংক্রমণ জনিত রোগ। তা ছাড়া ভাইরাল কনজাঙ্কটিভাইটিস, ডায়েরিয়ার প্রকোপ তো রয়েছেই। তাই বড়দেরও কিছু প্রতিষেধক নিয়ে রাখা জরুরি। তবে কে কোন টিকা নেবেন, তা বয়স, ওজন ও শারীরিক অবস্থার উপরেই নির্ভর করবে।
কোন কোন টিকা নিয়ে রাখলে ভাল?
ফ্লু-এর টিকা
ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নিয়ে রাখা খুবই জরুরি। চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডলের মতে, ভাইরাল জ্বর বা ‘ফ্লু’ এখন ঘরে ঘরে হচ্ছে। সে জন্য ফ্লু-এর টিকা নিয়ে রাখলে ভাল হয়। ফ্লু-এর টিকা মানে হল ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রতিষেধক। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, এই টিকা ০.৫ মিলিলিটার ডোজ়ে প্রতি বছর নিতে হবে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস যে হেতু বছর বছর তার চরিত্র বদলে ফেলে, তাই এক বার টিকা নিয়ে রাখলে কোনও কাজ হবে না। প্রতি বছরই নিয়ম করে প্রতিষেধক নিতে হবে।
হাঁপানি বা সিওপিডি-র রোগী অথবা ক্রনিক শ্বাসপ্রশ্বাসের অসুখ, ফুসফুসের সংক্রামক রোগ আছে, এমন রোগীদেরই ফ্লু-এর টিকা নিয়ে রাখলে ভাল হয়। তবে অবশ্যই এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
টিটেনাসের প্রতিষেধক
প্রাপ্তবয়স্কদের টিড্যাপ টিকার একটি ডোজ় নিয়ে রাখা ভাল। প্রতি ১০ বছর অন্তর টিটেনাস বুস্টার নিলে ভাল হয়। অন্তঃসত্ত্বাদের গর্ভাবস্থার ২৭ থেকে ৩৬ সপ্তাহের মধ্যে টিড্যাপ নেওয়া জরুরি, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মতোই টিকার ডোজ় নিতে হবে।
নিউমোনিয়ার টিকা
নিউমোনিয়ার দু’রকম টিকা আছে— নিউমোকক্কাল কনজুগেট ভ্যাকসিন (পিসিভি) এবং নিউমোকক্কাল পলিস্যাকারাইড ভ্যাকসিন (পিপিএসভি)। পিসিভি টিকা শিশু ও বয়স্কদের জন্য। আর পিপিএসভি টিকা তাঁদেরই দেওয়া হয়, যাঁদের বয়স ষাট পেরিয়েছে এবং হাঁপানি, সিওপিডি বা ফুসফুসের কোনও রোগ রয়েছে। শীতকালে তাপমাত্রা কম থাকায় উপযুক্ত আবহাওয়া পেয়ে নিউমোনিয়া সৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়া কিংবা ভাইরাস আরও বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি বা হাঁচি থেকে এই রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে। একে ‘ড্রপলেট ইনফেকশন’ বলা হয়। চার বছর বা তার কম বয়সের শিশু এবং ষাট বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের ব্যক্তিদের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাই টিকা নিয়ে রাখা জরুরি।
হেপাটাইটিস বি-এর প্রতিষেধক
হেপাটইটিস বি-ভাইরাস সরাসরি লিভারকে আক্রমণ করে। ক্রনিক ও অ্যাকিউট এই দুই ধরনের সংক্রমণ হয়। আক্রান্তের রক্ত-সহ যে কোনও দেহরস থেকে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত ৬ মাসের ব্যবধানে দু’টি টিকা নিতে হয়। হেপাটাইটিসের বি-এর টিকার তিনটি ডোজ় এক মাস অন্তর নিতে হয়। চতুর্থ টিকা নিতে হয় প্রথম ডোজ়ের ঠিক এক বছর পরে। পাঁচ বছর পরে নিতে হয় বুস্টার ডোজ়।