ছবি: (এআই সহায়তায় প্রণীত)।
অসুরনাশিনী দশভুজা দেবী দুর্গা যেমন অশুভ শক্তি নাশ করে শুভ শক্তি দান করেন, তেমনই নাশ করেন কোষ্ঠীতে থাকা ভয়ঙ্কর অশুভ যোগ বা দোষ। নাশ বা হ্রাস করেন ভয়ঙ্কর অশুভ গ্রহের কুপ্রভাব। জ্যোতিষশাস্ত্রের ভীতি সঞ্চারকারী একটি ভয়ঙ্কর যোগ হল গুরুচণ্ডাল যোগ। গুরুচণ্ডাল যোগ বলার থেকে দোষ বলাই বেশি যুক্তিপূর্ণ। গুরুচণ্ডাল নামই বুঝিয়ে দেয় এই দোষ কেন ভীতি সঞ্চারকারী। জ্যোতিষশাস্ত্র মতে, বৃহস্পতি দেবগুরু এবং রাহু হল দৈত্য, চণ্ডাল। কোষ্ঠীতে বৃহস্পতি এবং রাহু একসঙ্গে অবস্থান করলে সৃষ্টি হয় গুরুচণ্ডাল দোষ।
জ্যোতিষশাস্ত্র মতে রাহু-কেতু হল উত্তর এবং দক্ষিণ গাণিতিক বিন্দু বা নোড। উত্তর গাণিতিক বিন্দু বা রাহুর নির্দিষ্ট দূরত্বে যে গ্রহ অবস্থান করে সেই গ্রহের পূর্ণ ফল দানের ক্ষমতা নষ্ট হয়। রাহু বা উত্তর গাণিতিক বিন্দুর কাছাকাছি বৃহস্পতি অবস্থান করলে বৃহস্পতিরও ফলদানের ক্ষমতার পরিবর্তন হয় এবং রাহুর কুপ্রভাবে প্রভাবিত হয়। তবে এ ক্ষেত্রে উভয় গ্রহের অবস্থান বিবেচনা করা প্রয়োজন।
বৃহস্পতি এবং রাহুর গতি বিপরীত। এই কারণে জন্মপত্রিকায় রাহুর গতিপথে বৃহস্পতি অবস্থান করলে তা শক্তিশালী দোষ সৃষ্টি করে। সাধারণত রাহু এবং বৃহস্পতির অবস্থান ১০ ডিগ্রির মধ্যে হলে যোগ বা দোষ ফলপ্রসূ হয়। গ্রহদ্বয়ের অবস্থান ৫ ডিগ্রির মধ্যে হলে তা হয় ভয়ঙ্কর। নাড়ী জ্যোতিষ মতে, কোষ্ঠীতে রাহুর ডিগ্রি বেশি এবং বৃহস্পতির ডিগ্রি কম হলে সেটি মারাত্মক হতে পারে। বিপরীত হলেও সমস্যা থাকে, কিন্তু অতটা ভয়ঙ্কর না।
এই দোষে সমস্যা কেন হয়?
জ্যোতিষশাস্ত্র মতে, বৃহস্পতি শুভ গ্রহ। এই গ্রহ সর্বদা শুভ ফল দান করে। বিদ্যা, শিক্ষা, বিচার-বিবেচনার ক্ষমতা, সুস্থ চিন্তাভাবনা, ন্যায়বিচার ইত্যাদির উপর বৃহস্পতির প্রভাব রয়েছে। নাড়ী জ্যোতিষ মতে, বৃহস্পতিকে লগ্ন ধরা হয়। বৃহস্পতির সঙ্গে রাহুর অবস্থান বেশ কিছু বিষয়ে অশুভ ইঙ্গিত নির্দেশ করে। কারণ, রাহু ভ্রান্তিদায়ক গ্রহ। নেশার প্রতি আসক্তি, কুসঙ্গ, উদ্ভ্রান্ত ও অবাস্তব চিন্তা ইত্যাদির নেপথ্যে থাকে রাহু। গুরুচণ্ডাল যোগে রাহুর প্রভাব বৃদ্ধি পায় এবং বৃহস্পতির প্রভাব হ্রাস পায়। এর ফলে সুস্থ চিন্তা, সুস্থ জীবনধারা ব্যাহত হয়। ভ্রান্তির কারণে কুপথে চালিত হয়। নাড়ী জ্যোতিষ মতে, এই দোষ আয়ুর উপরও প্রভাব দান করে। বৈদিক জ্যোতিষ মতে, গুরুচণ্ডাল যোগে রাহুর দশা, অন্তঃদশা ও প্রত্যন্ত দশাকালে বিশেষ সচেতনতা অবলম্বন জরুরি।
মুক্তি পাওয়ার উপায় কী?
চলছে দেবীপক্ষ। দুর্গাপুজোর আনন্দে আমরা সকলেই মেতে উঠি। নতুন জামা, আলো, বন্ধুদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যাওয়া এই সকল ব্যাপার নিয়ে মেতে থাকি। এরই পাশাপাশি মন দিয়ে দেবী দুর্গার আরাধনা করলেও গুরুচণ্ডাল দোষ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। রাহুর কুপ্রভাব নাশ হয়।