হৃদয় রেখায় বিবাহিত জীবন ও দাম্পত্য সুখ (প্রথম অংশ)

আমাদের করতলে যে হৃদয় রেখা আছে সেই রেখা এক দিকে রক্তমাংসের হৃদপিন্ডের, অন্য দিকে অনুভূতিপ্রবণ হৃদয়ের খবর দেয়। এই রেখা আমাদের জীবনের প্রতিক্রিয়ার চিত্রকে বিশেষ ভাবে ফুটিয়ে তোলে।

Advertisement

অসীম সরকার

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৮ ০০:০০
Share:

শাস্ত্র বলছে,
“যদিদং হৃদয়ং তব
তদিদং হৃদয়ং মম”

এটা হচ্ছে হিন্দু বিবাহের মূল সুর। হিন্দু বিবাহে দেহের সঙ্গে দেহের বিবাহ হচ্ছে না, প্রাণের সঙ্গে প্রাণের বিবাহ হচ্ছে না, বিয়ে হচ্ছে হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের। আর এই হৃদয়ের খবর পেতে হলে আমাদের করতলে যে হৃদয় রেখা আছে তার চরিত্র জানতে হবে।

Advertisement

আমাদের করতলে যে হৃদয় রেখা আছে সেই রেখা এক দিকে রক্তমাংসের হৃদপিন্ডের, অন্য দিকে অনুভূতিপ্রবণ হৃদয়ের খবর দেয়। এই রেখা আমাদের জীবনের প্রতিক্রিয়ার চিত্রকে বিশেষ ভাবে ফুটিয়ে তোলে। এই রেখা আমাদের জীবনের দুঃখ-বেদনা, হতাশা, উচ্ছ্বাস, প্রেম-ভালবাসা, অপত্য স্নেহ ইত্যাদির প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলে।

হ্যাঁ, একমাত্র হৃদয় রেখা ছাড়া হাতের আর কোনও রেখা মানুষের ইমোশনাল দিক বা ভাবাবেগের খবর দেয় না। এই রেখা বলে দেয় একটা মানুষ আর একটা মানুষের সঙ্গে কী ধরনের ব্যবহার করবে। কী ধরনের ভালবাসা দেখাবে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি। কেমন ব্যবহার করবে পিতা-মাতা, ভাইবোন, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে। কেমন সম্পর্ক স্থাপন করবে সমাজের সঙ্গে। কেমন হবে তার যৌন জীবন। কেমন হবে তার স্বামী বা স্ত্রী। যদি বিয়ে হয় আদৌ কি সুখী দাম্পত্য জীবন পাবে?

Advertisement

যাকে আমরা হৃদয় রেখা বলি সেটা বৃহস্পতির ক্ষেত্র থেকে আরম্ভ হয়ে শনির ক্ষেত্রর নীচ দিয়ে, রবির ক্ষেত্রের নীচ দিয়ে, পরিশেষে বুধের ক্ষেত্রে শেষ হয়। এটাই হৃদয় রেখার স্বাভাবিক গতি। এই রকম হৃদয় রেখা যার হাতে থাকবে সেই মানুষটির ব্যবহারও স্বাভাবিক হবে।

হৃদয় রেখা যত বড় সেই মানুষটাও তত হৃদয়বান। হৃদয়বান মানুষ পরোপকারী হয়। বিপরীতে হৃদয় রেখা যত ছোট হবে মানুষটাও ততটাই স্বার্থপর হবে।

রেখাটি বৃহস্পতির ক্ষেত্র থেকে আরম্ভ হয়ে স্বাভাবিক বক্রতাকে ঠিক রেখে বুধের ক্ষেত্রে শেষ হয়। আর বৃহস্পতির ক্ষেত্র থেকে শুরু হওয়া মানেই বৃহস্পতির শুভগুণাবলী শুষে নেবে। যার হাতে এ রকম রেখা আছে, সে বিবেকবান নারী বা পুরুষ হবে। পুরুষ হলে প্রেমের জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করবে। এদের কাছে প্রেমই আগে তারপর অন্য কিছু। এরা যেটাকে ভালবাসে তার জন্য জীবন সর্বস্ব পণ রাখে। হাতের শুক্রের ক্ষেত্র ঠিক থাকলে জাতক/জাতিকা বেশ রোমান্টিক হয়।

এ বার রেখাটি শনি ও বৃহস্পতির আঙ্গুলের মাঝখান শুরু হয়ে মানে বৃহস্পতি ও শনির উভয়ের গুণাবলী গ্রহণ করে বুধের ক্ষেত্র পর্যন্ত প্রসারিত হয়। যার করতলে এই রকম রেখা আছে, সেই ব্যাক্তি প্রেম বা বিবাহকে বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখে। সে বিশ্বাস করে না পর্ণ কুটিরে থেকে যথেষ্ট পরিমাণ মাখন ও রুটি ছাড়া প্রেম হয়। এরা হিসেব কষে প্রেমের দিকে একটু একটু করে পা ফেলে। এরা সেই অর্থে স্বার্থপর নয়। এরা আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রেম বা বিবাহ করে। এরা প্রবল জীবন সংগ্রাম করে।

রেখাটি আরও ছোট হলে, অর্থাৎ রেখটি যদি শনির ক্ষেত্র থেকে আরম্ভ হয়ে রেখাটি শনির গুণাবলী শুষে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বুধের ক্ষেত্র পর্যন্ত যায়। সে ক্ষেত্রে যার করতলে এরকম রেখা থাকবে, সে হবে স্বার্থপর, কামুক, অর্থলোভী। বাইরে থেকে এদের বোঝা বেশ মুশকিল। বাস্তবে এদের প্রেম-ভালবাসার উপর এদের কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। অনেক সময় এরা বৃদ্ধ পিতামাতাকে দেখে না। এরা নিজের পুত্র বা কন্যা সন্তানদের দেখবে না। এমনকি হতাকারী পর্যন্ত হতে পারে। তবে সেটা নির্ভর করে করতলে আরও অনেক কিছুর উপর।

এ বার রেখাটি রবির ক্ষেত্র থেকে শুরু হওয়া মানেই রবির গুণাবলী নিয়ে বুধের ক্ষেত্রে শেষ হয়। এখানে আরও ছোট ফলে এরা আরও স্বার্থপর বা অনেক ক্ষেত্রে এরা জড় বুদ্ধিসম্পন্ন হয় বা এদের হৃদপিণ্ডের ত্রুটি থাকার জন্য স্বল্পায়ু হয়ে থাকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে এদের প্রেমে ভ্যানিটি থাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন