অতি প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি মানুষের মধ্যে একটা বিশ্বাস বয়ে চলেছে যে পশু-পক্ষী, কীট-পতঙ্গ আমাদের জীবনে অন্য জগতের অশরীরী বার্তা বহন করে আনে। আমদের মধ্যে যাদের ইএসপি (E.S.P=Extra Sensory Perception) খুব ভাল, তারা এই সব বার্তা সহজে অনুভব করতে পারে। আমরা অনেকেই জানি সাইকিকরা অশরীরী স্পিরিট গাইডের মাধ্যমে চলেন। তেমনই আবার স্পিরিট অ্যানিম্যালের হঠাৎ করে আবির্ভাব হলে তারা তা অনুভবের মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করেন।
পশুপাখি, জীবজন্তুরা খুব সচেতন ও সংবেদনশীল। অশরীরী কোনও কিছুর আবির্ভাব হলে তাদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া চলে। বিভিন্ন পশুপাখি, জীবজন্তু কী ধরনের বার্তা বহন করে আনে, সেই সম্বন্ধে বহু প্রাচীন কাল থেকেই বহু বিশ্বাস আছে। তাদের বিশ্বাস, প্রত্যেক কীটপতঙ্গ, পশুপাখি এক এক ধরনের বার্তা বয়ে নিয়ে আসে, যা স্পিরিট ওয়ার্ল্ডের মেসেজ হিসাবে তাদের জীবনে ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে কাজ করে। এই পশুপক্ষী, কীট-পতঙ্গরা প্রতীক হিসেবে যেমন ভাল বার্তা বয়ে আনে তেমনই খারাপ বার্তা বা দুঃসংবাদ বা মৃত্যুর সংবাদও বয়ে আনে।
এই সব পশুপাখি, জীবজন্তু সম্বন্ধে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রবল ভাবে নানা ধরনের বিশ্বাস চালু আছে। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। আজকের আলোচনা সেই বিষয়ে—
(১) চিল: কেউ যদি হঠাৎ করে বাস্তব জীবনে চিলের দৃশ্য মানস পটে ঘন ঘন দেখে বা স্বপ্নে দেখে বা বাস্তব জীবনে তার হাতের কোনও খবার চিল ছোঁ মেরে নিয়ে যায়, এতে বোঝায় খুব শীঘ্রই তার জীবনে একটা নতুন কোনও শিক্ষা বা নতুন কোনও অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হবে।
(২) ঈগল: ঈগল হচ্ছে দিব্য সুরক্ষা ও উচ্চ আধ্যাত্মিক চেতনার প্রতীক। কেউ যদি দেখে বিনা কারণে ঘন ঘন ঈগল নিয়ে ভাবনা তার মনের মধ্যে এসে যাচ্ছে, অনুভব বা স্বপ্নে প্রায়ই দেখছে, তা হলে তার জীবনে আসন্ন কোনও পরিবর্তন আসছে। এটা আধ্যাত্মিক দীক্ষাও হতে পারে আবার এত দিনের চলে আসা জীবন ছেড়ে অন্য কোনও দেশে চলে গিয়ে নতুন জীবন বা ছন্দে চলাও হতে পারে।
(৩) কাক/দাঁড়কাক: হঠাৎ করে ভর দুপুরে শুনশান ফাঁকা বাড়িতে বিনা কারণে একটা কাক বা দাঁড়কাক তাদের স্বভাব অনুযায়ী ডেকে গেল, এটা আমাদের গ্রাম বাংলায় খুব খারাপ লক্ষ্মণ হিসেবে দেখা হয়। ঠিক একই ভাবে আমেরিকায় অধিবাসীরা সেই চোখেই ব্যাপারটা দেখে থাকে। এই ধরনের ঘটনা ঘটলে যার মনে দাগ কাটবে তার হয়তো মৃত্যুর সময় হয়েছে। এই রকম ঘটনা মৃত্যুর সঙ্কেত বহন করে। ভৌতিক দেহ ছেড়ে অন্য জগতে চলে যাওয়া বোঝায়। এর সঙ্গে বোঝায় আসন্ন পুনর্জন্মের ইঙ্গিত। অন্তত আমেরিকার অধীবাসীরা এই ভাবেই ভাবে।
(৪) প্যাঁচা: প্যাঁচা প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও বোধির বার্তা, আধ্যাত্মিক ভাব বহন করে আনে। হঠাৎ যদি কেউ প্যাঁচার স্বপ্ন দেখে বা হঠাত্ করে প্যাঁচার ভাবনা মানসপটে আসতে থাকে, তা হলে আসন্ন জ্ঞান বা বোধির কোনও অনুভূতি থেকে লাভবান হওয়া বোঝায়। এটা আরও জানায় যে সত্য ধরে সে চলছে সেটা সঠিক।
(৫) কার্ডিন্যাল বার্ড: কার্ডিন্যাল বার্ড বিশেষ করে লাল কার্ডিন্যালকে আমেরিকাজুড়ে খুব পবিত্র চোখে দেখা হয়। এই পাখিদের এক কথায় স্বর্গের বার্তা বহনকারী পাখী হিসেবে সে দেশে দেখা হয়। কারও যদি এই পাখির কথা তার মানস পটে বিনা কারণে আসতে থাকে, বা তার বাড়িতে এই পাখি এসে হঠাত্ করে ডাকতে থাকে, তা হলে বোঝায়, কোনও মৃত বয়স্ক জ্ঞানী ব্যাক্তির কাছ থেকে কোনও বার্তা আছে, বা কোনও পুরুষ স্পিরিট গাইড থেকে নিশ্চয় কোনও বার্তা আছে। এর অর্থ সে ব্যক্তি সঠিক পথেই আছে। সে স্পিরিট গাইড দ্বারা রক্ষিত। সে নির্ভয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে থাকতে পারে। ঈশ্বর তার সহায় আছেন।
(ক্রমশ)