আধুনিক যুগে ভূত চতুর্দশী পালনকে অনেকে অবৈজ্ঞানিক ও কুসংস্কার বলে অভিহিত করে থাকেন। তবে বেশির ভাগ বাঙালি পরলোকগত পিতৃপুরুষের আত্মার সদ্গতির কামনায় বহু কাল আগে থেকে চলে আসা এই প্রথাকে খুব সাড়ম্বরে পালন করে থাকেন। এটা মূলত বাঙালি হিন্দুর উৎসব, কারণ বাংলা ছাড়া ভারতের অন্য কোনও রাজের হিন্দুরা সে ভাবে এই ভূত চতুর্দশী উদযাপন করে না। পশ্চিম ভারতে এই তিথিকে ‘নরক চতুর্দশী’ বলে।
অনেকে বলে থাকেন ভুত চতুর্দশীর দিন পরলোকগত চৌদ্দ পুরুষের আত্মারা নিজ নিজ বাড়িতে নেমে আসেন। তাই তাদের আসা যাওয়ার পথকে আলোকিত করতেই নাকি এই দিন সন্ধ্যাবেলা প্রদীপ জ্বলানোর রীতি।
আর একটা মত, চামুণ্ডারূপী চৌদ্দখানা ভূত দিয়ে ভক্তবাড়ি থেকে অশুভ শক্তিকে তাড়াবার জন্যে মাকালী নেমে আসেন।
হিন্দু পুরাণে বলা আছে, এই তিথিতে সন্ধ্যা নামার পর পরই অশরীরী প্রেতাত্মারা বের হয়ে আসেন। আর তাদের হাত থেকে নিস্তার পেতে সন্ধ্যায় পর গৃহস্থের বাড়িতে ১৪টি প্রদীপ জ্বালানোর নিয়ম।
তবে যে মতটি সর্বাধিক প্রচলিত সেটা হল, নরকাসুররূপী রাজা বলি তখন সাধনবলে শক্তি অর্জন করে স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল জয় করে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল, এমনকি দেবতারাও রেহাই পাচ্ছিল না।
এমন অবস্থায় দানব রাজা বলির তাণ্ডব থামাতে দেবগুরু বৃহস্পতি ভগবান বিষ্ণুকে একটা উপায় করতে বললেন।
তখন বামন রূপে ভগবান বিষ্ণূ বলি রাজার কাছে এসে তিন পা জমি ভিক্ষা চাইলেন।
দানবরাজ বলি প্রথমেই বুঝেছিলেন এই বামন আর কেউ নন, স্বয়ং বিষ্ণু। কিন্তু এরপর না বোঝার ভান করে তিনপদ জমি দানের চুক্তিতে রাজি হলেন।
এরপর, ভগবান বিষ্ণু দু’পা দিয়ে স্বর্গ ও মর্ত্য দখল করে নিলেন। তারপর নাভি থেকে তৃতীয় পা বের করে রাখলেন বলি রাজার মাথার উপর, আর বলিকে ঠেলে দিলেন পাতালে। সেই থেকে বলির পাতালই হল আবাস।
প্রশ্ন হল, ভূত চতুর্দশীর সঙ্গে বলিরাজার সম্পর্ক কী?
বলিরাজ জেনে বুঝেও দান করেছিলেন বলে, ভগবান বিষ্ণু রাজা বলির নরকাসুর রূপের পুজোর প্রবর্তন করেন।
নরকাসুররূপী রাজা বলি কালীপুজোর আগের দিন ভূত চতুর্দশীর তিথিতে অসংখ্য অনুচর-সহ ভূত, প্রেত নিয়ে মর্ত্যে নেমে আসেন পুজো নিতে। আর মানুষ পরলোক জগতের ভূত প্রেতকে দূরে রাখতে ১৪ শাক খেয়ে, ১৪ প্রদীপ জ্বালিয়ে এবং ১৪ ফোঁটা দিয়ে এই তিথিকে উদযাপন করে থাকে বহুকাল থেকেই।
১৪টি শাক কী কী? (১) ওল (২) কেঁউ (৩) বেতো (৪) সরষে (৫) কালকাসুন্দে (৬) নিম (৭) জয়ন্তী (৮) শাঞ্চে (৯) হিলঞ্চ (১০) পলতা (১১) গুলঞ্চ (১২) ভাটপাতা (১৩) শুষণী (১৪) শৌলফ
তিথিটা চতুর্দশী তাই ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো হয়ে থাকে পরোলোকগত পিতৃপুরুষ, প্রেতাত্মা, ধর্ম, বিষ্ণু, কান্তারপতি বা অরণে অধিষ্ঠিত দেবতার উদ্দেশে।