Madhyamik Exam 2024

প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এল সাফল্য

পরিবার থেকে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছিল মেয়ে। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে মেয়েকে তার পরে আর পড়াতে পারেননি তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২৪ ০৯:৫৫
Share:

জগন্নাথ দলুই। নিজস্ব চিত্র

জন্মের সময় থেকেই দু’টি হাত ছিল না, বাবা-মা সেই কারণে নাম রেখেছিলেন জগন্নাথ। দৈনন্দিন কাজ, খাবার খাওয়া সব কাজে মা-ই ছিল তার ভরসা। বয়স একটু বাড়তেই দৃষ্টিশক্তিও ক্ষীণ হতে শুরু করে ছেলেটির। এখন তা কার্যত নেই-এর পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। তবু প্রতিবন্ধকতার কাছে মাথা নত করেনি জগন্নাথ দলুই। সব বাধা অতিক্রম করে এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষায় তার স্কুলের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর (৩৪৩) পেয়ে সফল ভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে সে।

Advertisement

জগন্নাথের মা ঝর্না দলুই জানান, তিনি বা তাঁর স্বামী কেউই কখনও স্কুলের মুখ দেখেননি। ইচ্ছা ছিল, সন্তানদের শিক্ষিত করে তোলার। এর আগে পরিবার থেকে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছিল মেয়ে। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে মেয়েকে তার পরে আর পড়াতে পারেননি তাঁরা। এদিকে ছেলে জগন্নাথের শারীরিক পরিস্থিতির কারণে আদৌ তাকে পড়াশোনা করানো যাবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ছিলেন তাঁরা। তবে সিউড়ির সুরেন ব্যানার্জী স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উৎসাহে ভর করেই ছেলের পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। এতদিনে মিলল তার ফলও।

শিক্ষকদের অবদানের কথা বলতে গিয়ে কৃতজ্ঞতা ঝরে পড়ল জগন্নাথের গলাতেও। সে বলে, “আমি কোনও দিন ভাবিনি আমি মাধ্যমিক পাশ করব। কিন্তু আমাদের স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ভেবেছিলেন। আমাকে বই থেকে পড়া শোনানো, পরীক্ষার জন্য অনুলেখক জোগাড় করে দেওয়া— সব বিষয়ে তাঁরা আমার পাশে ছিলেন। বাড়িতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমাকে সব রকম সাহায্য করেছেন আমার মা। এঁরা না থাকলে আমার স্বপ্ন পূরণ হত না।” জগন্নাথের বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন, মা গৃহ সহায়িকার কাজ করেন। আগামী দিনে যদি সরকারি বা বেসরকারি কোনও সহযোগিতা মেলে তবে বাংলা বিষয় নিয়ে উচ্চশিক্ষার ইচ্ছে রয়েছে জগন্নাথের।

Advertisement

অন্য দিকে, শারীরিক প্রতিকূলতা পেরিয়ে মাধ্যমিকে উল্লেখযোগ্য ফল করেছে সিউড়ির অরবিন্দ ইনস্টিটিউট ফর সাইটলেস স্কুলের তিন পরীক্ষার্থী বাবলু মাহারা, আয়ুব মিঞা এবং মুস্তাকিন ওয়াসিম। তাঁরা প্রত্যেকেই ৮৫ শতাংশের উপর নম্বর পেয়েছে। সিউড়ি শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের রেজিস্ট্রেশনে পরীক্ষা দিয়েছিল এই তিন ছাত্র।

বাবলু, আয়ুব ও মুস্তাকিনের শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি ছিল আর্থিক অনটনও। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজনগরের ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা বাবলু মাহারার বাবা নেই, মা গৃহ সহায়িকার কাজ করেন। মাধ্যমিক পরীক্ষায় তার প্রাপ্ত নম্বর ৬২৫। আয়ুব মিঞার বাড়ি ভীমগড়ে। তার বাবা দর্জির কাজ করতেন, কিন্তু ইদানীং তিনিও দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। পরীক্ষায় আয়ুব পেয়েছে ৫৯৯ নম্বর। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার বাসিন্দা মুস্তাকিন ওয়াসিমের বাবা চাষ করেন এবং মা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কাজ করেন। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬১৩। শারীরিক বা পারিবারিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বাধা হতে পারেনি তাদের সাফল্যের ক্ষেত্রে। মনের জোর ও কাছের মানুষের সাহায্যে এরা সকলেই আজ সফল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন