দেবসেনাপতি কার্তিক চিরকুমার কেন?

কাল ও কালের ধারাপাতে কার্তিক পুজোর প্রচলন বঙ্গদেশ জুড়ে। তিনি মহাবীর, মহাধনুর্ধর, দেবকুলের সেনাপতি। কার্তিকের সম্পর্কে বলা চলে, তিনি মহাভাগ, ময়ুরাসন, কাঞ্চনকান্তি, শক্তির বাহক, বরদ, শত্রুনিধনকারী, প্রসন্ন, সন্তানদাতা, সালংকার ও ষড়ানন।

Advertisement

পার্থপ্রতিম আচার্য

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

প্রতি বছর দুর্গাপুজোয় কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী-সহ দেবী দুর্গা পূজিত হন। আবার কার্তিক মাসের সংক্রান্তিতে (বর্তমান বর্ষে ৩০ কার্তিক, শুক্রবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৮) কার্তিক একাই পুজো পেয়ে থাকেন। সন্তান কামনায় কার্তিক পুজোর প্রচলনই সবচেয়ে গুরুত্ববাহী। বিশেষত বন্ধ্যা নারীগণ কার্তিকের মতো সুন্দর ও বীর পুত্রের কামনায় কার্তিক পুজো করে থাকেন। কার্তিক বীরত্বের প্রতীক, দেবকুলের সেনাপতি। আবার অপরূপ সৌন্দর্যেরও প্রতীক তিনি। তিনি যেন অশুভ শক্তির নিধনকারী, স্কন্দকুমার।

Advertisement

কাল ও কালের ধারাপাতে কার্তিক পুজোর প্রচলন বঙ্গদেশ জুড়ে। তিনি মহাবীর, মহাধনুর্ধর, দেবকুলের সেনাপতি। কার্তিকের সম্পর্কে বলা চলে, তিনি মহাভাগ, ময়ুরাসন, কাঞ্চনকান্তি, শক্তির বাহক, বরদ, শত্রুনিধনকারী, প্রসন্ন, সন্তানদাতা, সালংকার ও ষড়ানন।

কার্তিক সম্পর্কে নানারকম কথকথা চালু আছে। এক সময় কার্তিক নাকি দেবকুলে ধর্ষণ করে অনেকের সতিত্ব হরণ করেছিলেন। তা ক্রমে চরম আকার ধারণ করে। নারীগণ অতিষ্ট হয়ে দুর্গার কাছে গিয়ে কার্তিকের অপকীর্তির কথা জানান। দুর্গা তাদের এই সঙ্কট থেকে রক্ষা করবেন, কথা দেন। তারপর থেকে কার্তিক কোনও নারীর কাছে গেলেই দুর্গার রূপ দেখতে পেতেন। তারপর থেকে কার্তিক আর কোনও নারীর কাছে যাননি, আর বিবাহও করেননি।

Advertisement

আরও পড়ুন: কোন বয়সে কী ফাঁড়া, জেনে নিন নিজের জন্মছক থেকেই

প্রচলিত লোককথা থেকে পাওয়া যায় যে, দানবদের পরাজিত করে কার্তিক যখন ঘরে ফিরছিলেন, তখন এক রূপবতী দেবকন্যার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। তাঁর নাম ঊষা। কার্তিক তাঁকে বিয়ে করতে চাইলে তিনি রাজি হন। তাঁকে নিয়ে কৈলাশের কাছে পৌঁছে কার্তিকের মনে হল সরাসরি বাড়িতে বধূ বেশে ঊষাকে নিয়ে যাওয়ার আগে মায়ের অনুমতি নেওয়া উচিত। ঊষাকে তাই এক বীজক্ষেত্রে দাঁড় করিয়ে কার্তিক গেলেন মায়ের কাছে। ঊষা ওদিকে দাঁড়িয়েই আছেন। দুর্গা মৌখিক অনুমতি দিলেন বটে তবে তা আন্তরিক কি না তা ভেবে দেখেননি কার্তিক। খুব তাড়াতাড়ি বর সেজে ঊষাকে আনতে যাওয়ার আগে হঠাৎ কার্তিকের মনে হল মাকে প্রণাম করবার কথা। সবদিক খুঁজে দুর্গাকে পেলেন শেষ পর্যন্ত রান্নাঘরে। কিন্তু এ কী কাণ্ড। মা দুর্গা একটি সদ্য নিহত মহিষ কাঁচাই খাচ্ছেন গোগ্রাসে।

এই ভয়ঙ্কর ও বীভৎস দৃশ্য দেখে কার্তিক বললেন, “এ তুমি কী করছ মা?” দুর্গা বললেন, “বাবা, এখন তো বউ ঘরে আসবে, কোনও দিন খেতে দেবে, কোনও দিন খেতেই দেবে না। তাই সাধ মিটিয়ে শেষ খাওয়া খেয়ে নিচ্ছি।” কার্তিক বুঝলেন দুর্গার মত নেই বিয়েতে। প্রতিজ্ঞা করলেন, জীবনে আর বিয়েই করবেন না। ওদিকে ঊষা বীজক্ষেত্রে অপেক্ষা করেই চললেন, কিন্তু কার্তিক আর ফেরেন না। শেষ পর্যন্ত ঊষা জানতে পারলেন সব, শুনলেন কার্তিকের প্রতিজ্ঞার কথা। লজ্জায় ঊষাও পণ করলেন তিনিও আর কাউকে এই প্রত্যাখ্যাত মুখ দেখাবেন না। চিরকাল ধানক্ষেতে লুকিয়ে থাকবেন। এই কারণেই কার্তিক চিরকুমার হয়ে থেকে গেলেন। আর ঊষা রয়ে গেলেন ধানক্ষেতে। কার্তিক মাসেই আমন ধানের শীষ বের হয়। বলা হয়, এই আমন ধানের শীষই ঊষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন