বিচার চেয়ে বিক্ষোভ অমৃতসরের পড়ুয়াদের। শনিবার। ছবি: পিটিআই।
প্রশ্ন ফাঁস আর নতুন পরীক্ষার দিনক্ষণ নিয়ে অসন্তুষ্ট সিবিএসই-র ছাত্রছাত্রীরা আজ নেমে এলেন রাস্তায়। আর ‘শুধু দিল্লি-হরিয়ানায় প্রশ্ন ফাঁস হয়ে থাকতে পারে’ বলে কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করলেও এই ঘটনায় ঝাড়খণ্ডে গ্রেফতার করা হল ১২ জনকে। তাঁদের মধ্যে ২ জন পটনার।
জুলাইয়ে শুধুমাত্র দিল্লি-হরিয়ানায় অঙ্ক পরীক্ষা নতুন করে হতে পারে শুনে গত কালই অসন্তোষ জানিয়েছিলেন দশম শ্রেণির পরীক্ষার্থীরা। আজ রাজধানীর বিক্ষোভে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরাই ছিলেন সংখ্যায় বেশি। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, ২৫ এপ্রিল ফের অর্থনীতির পরীক্ষা হলে তাঁরা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য কী ভাবে প্রস্তুত হবেন? একই সময়ে তো ওই সব পরীক্ষাও শুরু হয়ে যাবে। আজ সকালে প্রথমে তাঁরা সিবিএসই-র সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান। তার পরে দফায় দফায় কখনও সংসদ মার্গ, কখনও বিকাশ মার্গে চলে বিক্ষোভে। যোগ দেন এসএসসি পরীক্ষার্থীরাও। বিকেলে প্রতীকী প্রতিবাদে একদল ছাত্রছাত্রী সিবিএসই-র দফতরে গিয়ে প্রশ্নপত্র ‘লিক’ আটকাতে ‘এম-সিল’ দিয়ে আসেন।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের তদন্তে গত কালই ঝাড়খণ্ডের চাতরায় ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আজ গ্রেফতার হন আরও ছ’জনকে। এসপি অখিলেশ বি ভেরিয়ার বলেন, ‘‘ধৃত ১২ জনের মধ্যে ৯ জনই অপ্রাপ্তবয়স্ক ছাত্র।’’ ঝাড়খণ্ড পুলিশের দাবি, বিহারের দুই ছাত্র ঝাড়খণ্ডের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে দশম শ্রেণির অঙ্কের প্রশ্নপত্র বিলি করেছিল। সন্দেহ করা হচ্ছে, সেই প্রশ্নই উত্তর-সহ চাতরার একটি কোচিং সেন্টার থেকে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা দরে বেচা হয়।
চাতরার ওই কোচিং সেন্টারের দুই ছাত্রকে জেরার পরে সেখানকার দুই কর্তা পঙ্কজ সিংহ ও সতীশ পাণ্ডেকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তার পরে গ্রেফতার করা হয় হিমেশ নামে ওই কোচিং সেন্টারের এক শিক্ষককে। সবাইকে জেরার পরে পটনা থেকে দু’জন ও চাতরা থেকে পাঁচ জন ছাত্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অন্য একটি সূত্রের আবার দাবি, পরীক্ষার দিনে হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্নপত্র পেয়ে ওই কোচিং সেন্টার থেকে সরাসরি পরীক্ষাকেন্দ্রে উত্তর সরবরাহ করা হয়েছিল। এর পাশাপাশি, নজরে রয়েছে গয়া জেলার বারাচাট্টি এলাকার একটি কোচিং সেন্টার। ধৃতদের মধ্যে এবিভিপি-র দুই সদস্যও রয়েছেন বলে সূত্রের বক্তব্য।
বুধবার দশম শ্রেণির অঙ্ক পরীক্ষার ঠিক আগে সিবিএসই চেয়ারপার্সন অনিতা করবাল একটি ই-মেলে সম্ভাব্য প্রশ্নপত্র পেয়েছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, যিনি মেল পাঠিয়েছিলেন, গুগলের সাহায্য নিয়ে তাঁকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে তাঁর নাম জানানো হয়নি। এখনও পর্যন্ত জেরা হয়েছে ৫৩ জন ছাত্রছাত্রী ও ৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে। অনেকের মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্কুল-শিক্ষাসচিব অনিল স্বরূপ যুক্তি দিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে প্রশ্ন ফাঁস আর হবে না— এমন গ্যারান্টি দেওয়া সম্ভব নয়। এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন স্কুল শিক্ষাসচিব কে সুজাতা রাও বলেছেন, ‘‘পরীক্ষা ব্যবস্থা নিশ্ছিদ্র করা সরকারের দায়িত্ব। অনিলের সঙ্গে আমি একমত নই।’’ বেসরকারি স্কুলগুলির একটি সংগঠন আজ কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের ইস্তফা দাবি করেছে। দিল্লি হাইকোর্টে মামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে অভিভাবকদের একটি সংগঠন। নতুন করে পরীক্ষা নিয়ে দু’টি আর্জি জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে। একটি করেছেন দীপক কনসল নাম এক আইনজীবী। অন্যটি রোহন ম্যাথু নামে কেরলের এক ছাত্রের। এরই মধ্যে দ্বাদশ শ্রেণির হিন্দি-র প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। সিবিএসই-র দাবি, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ওই প্রশ্নপত্র জাল।