আঠারোর ‘আস্পর্ধা’! ট্রাম্পকে শিক্ষা দিলেন অসমের তরুণী

৭২ বছরের এক ব্যক্তিকে আবহাওয়া ও জলবায়ুর ফারাক বুঝিয়েছেন ১৮ বছরের মেয়েটি। সেটাই বদলে দিয়েছে তাঁর জীবন। রাতারাতি আন্তর্জাতিক খ্যাতি। ফোন। টুইট। মেসেজের বন্যা! 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:২০
Share:

আস্থা শর্মা

৭২ বছরের এক ব্যক্তিকে আবহাওয়া ও জলবায়ুর ফারাক বুঝিয়েছেন ১৮ বছরের মেয়েটি। সেটাই বদলে দিয়েছে তাঁর জীবন। রাতারাতি আন্তর্জাতিক খ্যাতি। ফোন। টুইট। মেসেজের বন্যা!

Advertisement

কারণ, যাঁকে টুইটারে প্রকৃতির পাঠ দিয়েছেন আস্থা শর্মা, তিনি খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বুধবার ওয়াশিংটনের তাপমাত্রা শূন্যের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে নেমেছিল। ট্রাম্প টুইট করেন, ‘হিংস্র ও দীর্ঘায়িত শীত সব রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে।

কোথায় গেল বিশ্ব উষ্ণায়ন!’ আবহাওয়ার রেকর্ড অবশ্য বলছে, ১৮৮০ সালে ওয়াশিংটনের তাপমাত্রা নেমেছিল শূন্যের চেয়ে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘গান’ ছেড়ে জীবনের গানে প্রাক্তন মাওবাদীরা

কিছু ক্ষণের মধ্যেই ট্রাম্পের ওই টুইট লক্ষাধিক বার রি-টুইট হয়। যার বেশির ভাগটাই ট্রাম্পের জ্ঞানের বহর নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ। বারাক ও মিশেল ওবামার ভক্ত যোরহাটের ১৮ বছরের ছাত্রী আস্থারও হাত নিশপিশ করছিল। ট্রাম্পের টুইটের জবাবে লেখেন, “আমি আপনার থেকে ৫৪ বছরের ছোট। মোটামুটি নম্বর পেয়ে সবে হাইস্কুলের পরীক্ষায় পাশ করেছি। কিন্তু আমিও আপনার জ্ঞাতার্থে জানাতে পারি, কাকে বলে আবহাওয়া আর কাকে বলে জলবায়ু। চাইলে আপনার বোঝার সুবিধার জন্য আমার এনসাইক্লোপিডিয়া বইটি আপনাকে ধার দিতে পারি। ওটা দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে আমার কাছে আছে। বইটায় ছবি ও তথ্য দিয়ে সব ভাল করে বোঝানো আছে।”

সঙ্গে সঙ্গে ‘হিট’ আস্থার টুইট। পরে আস্থা ফের লেখেন, “আমার মনে হয় প্রেসিডেন্ট বোঝাতে চেয়েছেন, এই ‘আর্কটিক কোল্ড ব্লাস্ট’ বিশ্ব উষ্ণায়নের তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করে। কিন্তু আমার মতে, এক বার ‘আর্কটিক কোল্ড ব্লাস্ট’ হওয়া মানেই বিশ্ব উষ্ণায়ন মিথ্যে হয়ে যায় না। আমি ভুল হতে পারি। কিন্তু নিজের মতটা জানালাম মাত্র।”

ছোট্ট মেয়ের এমন সাহস নেটিজেনদের খুবই মনে ধরেছে। কেউ আবার আস্থার উদ্দেশে টুইট করে বুঝিয়েছেন, অত বিনয়ী হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। এটা প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক সত্য। বিশেষজ্ঞরা এই সূত্রে ফের বুঝিয়ে ছেড়েছেন, আবহাওয়া মানে বিশেষ কোনও দিনের তাপমাত্রা, জলীয় বাষ্প, বায়ুচাপ ইত্যাদি। আর জলবায়ু হল দীর্ঘদিনের আবহাওয়া পরিস্থিতির গড় ও সামগ্রিক চিত্র। বিশ্বের জলবায়ু বদলেরই একটি দীর্ঘকালীন লক্ষণ হল বিশ্ব উষ্ণায়ন।

আরও পড়ুন: ‘ভোট এক্সপ্রেসে’ রাজা উজির, রোষে মামা

এ সব বিজ্ঞানের কথা ছাপিয়ে চলছে আস্থার প্রশংসা। বেশির ভাগই ট্রাম্পের দেশের মানুষ। আস্থার সাহসী টুইটের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তাঁরা। কালিওপা ডেভ যেমন লিখছেন, ‘ওই টুইটের সঙ্গে একটা কার্টুন থাকলে আরও জমত।’ ব্র্যাড অসবর্নের টুইট, ‘আমার নতুন হিরো আস্থা শর্মা।’ ডন জোনস লেখেন, ‘এত ক্ষণে নিশ্চয়ই ওয়াশিংটন ডিসির তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি বেড়ে গিয়েছে। কারণ ট্রাম্পকে টুইটের আগুনে রোস্ট করে ফেলেছেন আস্থা শর্মা।’ গত ৪৮ ঘণ্টায় টুইটারে আস্থার বিদেশি ফলোয়ার লাফিয়ে বেড়ে দু’শো ছাপিয়ে গিয়েছে!

প্রশ্ন হল, ট্রাম্পের কাজকর্ম কথাবার্তায় মজা তো অনেকেই পাচ্ছেন। বিরক্তও হচ্ছেন অনেকে। হঠাৎ যোরহাটে বসে একটা মেয়ে কেন বিশ্বের ‘সবচেয়ে ক্ষমতাবান’ শাসকটিকে জ্ঞান দেওয়ার আস্পর্ধা দেখাতে গেলেন? এত শত ভাবেনি আস্থা। ভাবেইনি, এক অখ্যাত মেয়ের একটা কমেন্টে এমন প্রতিক্রিয়া হবে। আসলে আসলে আঠারো বছর বয়সেই তো স্পর্ধারা মাথা তোলার ঝুঁকি নেয়। তাই নিজের সম্পর্কে আস্থার মন্তব্য, ‘‘আমার সমস্যা হল, এই কঠোর বাস্তবের দুনিয়ায় আমি রূপকথার চরিত্র হয়ে থাকতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন