Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

‘ভোট এক্সপ্রেসে’ রাজা উজির, রোষে মামা 

দশ মিনিটে ভোটের হাওয়া বুঝিয়ে দিলেন— “মামার কাজ ভাল, কিন্তু নেতাগুলো দেমাগি। ভোটের পর আর মুখ দেখান না। মহারাজা যদি ঠিক মতো লড়েন, বিজেপি আর ফিরছে না!”

সওয়ার: ছাদে চড়েই যাত্রা গ্বালিয়র থেকে শিউপুর কালানের ন্যারোগেজ ট্রেনে। —নিজস্ব চিত্র।

সওয়ার: ছাদে চড়েই যাত্রা গ্বালিয়র থেকে শিউপুর কালানের ন্যারোগেজ ট্রেনে। —নিজস্ব চিত্র।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
সবলগড় (মধ্যপ্রদেশ) শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৮ ০২:০৭
Share: Save:

রাজার ট্রেনেই যত রাজা-উজির। দু’বেলা দু’মুঠো খাওয়া জোটে না। বিনা টিকিটে ‘রাজা’র ছাদে চড়ে বসে যান। তবে ভোটের সময়ে ফকিরও রাজা, সে কথা বিলক্ষণ জানেন শিবহরি লেখের। দশ মিনিটে ভোটের হাওয়া বুঝিয়ে দিলেন— “মামার কাজ ভাল, কিন্তু নেতাগুলো দেমাগি। ভোটের পর আর মুখ দেখান না। মহারাজা যদি ঠিক মতো লড়েন, বিজেপি আর ফিরছে না!”

‘মামা’ শিবরাজ সিংহ চৌহান আর ‘মহারাজা’ হলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, ব্রিটিশ আমলে তাঁর পরিবারই এই ট্রেন চালু করেন। গ্বালিয়র থেকে শিউপুর কালান। এখন এটাই দেশের দীর্ঘতম ন্যারো গেজ রেল। ২০০ কিলোমিটার যেতে বারো ঘণ্টা। রাজার ট্রেন বটে, কিন্তু আলো-পাখা নেই। দেশলাই বাক্সের মতো ছ’টা কামরা। তাতেই রোজকার গুঁতোগুঁতি। কে বলবে, ট্রেনের ছাদে চড়লে জেল-জরিমানা হয়? রেলকর্মীরা অবশ্য বলছেন, “গরিব লোকগুলোকে কী আর বলব? বাসে টিকিট না নিলে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। সরকার ট্রেন চালাচ্ছে, সরকার বুঝুক।”

চলন্ত ট্রেনেই ইঞ্জিন থেকে বেরিয়ে এল লম্বা হাত। ভূতের গল্প নয়, চালক হাত মেলালেন। কার সঙ্গে? রেল লাইনের পাশে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে বিজেপি নেতা। লাইনের দু’ধারের বাড়িতে বাড়িতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রচার। মাঝে ট্রেন এল, তো চালকের সঙ্গেও হয়ে গেল কুশল বিনিময়। ট্রেন থামাতে হল না, গতিও কমাতে হল না। এ ট্রেনের সঙ্গে বাচ্চারাও সাইকেলে পাল্লা দেয়। সেকেন্ডের হ্যান্ডশেক। ক্যামেরায় চেষ্টা করলাম ধরার। পাদানিতে বসে সহযাত্রী কৃষ্ণকান্ত সাগর বললেন, “পনেরো বছরে জমি খসেছে। কিন্তু ঘরে ঘরে বিজেপি কেমন লেগে আছে দেখুন। সংগঠনই বাঁচিয়ে দেবে বিজেপিকে।” কথা কেটে অমিত রাই বললেন, “রোজগার নেই, চাষের দাম নেই। ব্যপম-এর চক্রী আর খনি মাফিয়ারা লুটে নিল, এ সবের কোনও বিচার হবে না?” ট্রেন যেন ‘ভোট এক্সপ্রেস’।

আরও পড়ুন: বাপ-মা তুলেই তরজার ফুলঝুরি

ক্যামেরা হাতে দেখে ঘোসীপুরা স্টেশনে পিছু পিছু ঘুরছেন এক ভদ্রলোক। ট্রেন থামবে দশ মিনিট। শেষে পথ আটকে প্রশ্নই করে বসলেন: “ক্লিকিং? হোয়ার গোয়িং?” বললাম, ‘‘হিন্দিতেই বলুন না!’’ এ বারে একগাল হেসে বললেন, “আমি হেমন্ত ভাটনাগর। স্টেশন ম্যানেজার। টয়লেটের ছবি তুলুন না। মোদীর ‘স্বচ্ছ ভারত’ টের পাবেন। আর ‘ওয়েটিং রুম’টা একটু দেখুন। বসারই জায়গা নেই, তো ওয়েট করা!” হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন রেল লাইনে, “তিন নম্বর লাইনটা দেখতে পাচ্ছেন?” আবর্জনার ফাঁক দিয়ে বোধহয় উঁকি দিচ্ছে একটা লাইন। এত ক্ষণ ঠাওর হয়নি।

আরও পড়ুন: কালো ধন এল কত? জবাব দিতে নারাজ মোদী

“আমার খাতায় কিন্তু আছে ওই তিন নম্বর লাইন। তবে হাপিস! বলেও লাভ হয় না।” রাজনীতিটাও রেলের ভাষাতেই বোঝেন স্টেশন ম্যানেজার। বলেন, “ও মশাই, মোদী তো বেলাইন। ওঁকে আমার নাম করে জানান, তাঁর রেললাইনটাই চুরি হয়ে গিয়েছে!”

সরকারি বাবুরও এমন রোষ?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE