Nexa Evergreen Case

অভিজাত ফ্ল্যাটের স্বপ্ন দেখিয়ে ২৭০০ কোটি টাকার দুর্নীতি! দুই ভাইয়ের ফাঁদে পড়ে ৭০ হাজার মানুষ প্রতারিত, তদন্তে ইডি

অভিযোগ, গুজরাতের ঢোলেরা শহরে ‘স্মার্ট সিটি’ প্রজেক্টে জমি পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লগ্নিকারী এবং আমানতকারীদের থেকে কোটি কোটি টাকা তুলেছেন সংস্থার মালিকদ্বয় এবং তাঁদের সহযোগীরা।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২৫ ১৮:৫৭
Share:

অভিযুক্ত সুভাষ বিজারানি এবং রণবীর বিজারানি। ছবি: সংগৃহীত।

স্বল্প বিনিয়োগে বড় অঙ্কের আর্থিক লাভ এবং ফ্ল্যাটের লোভ দেখিয়ে অন্তত ৭০ হাজার মানুষকে প্রতারিত করার অভিযোগ রাজস্থানের ভ্রাতৃদ্বয়ের বিরুদ্ধে। ‘নেক্সা এভারগ্রিন’-কাণ্ডে ২৬৭৬ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে উঠে এসেছে তদন্তে। এখন সুভাষ বিজারানি এবং রণবীর বিজারানি নামে দুই সহোদরের খোঁজে পুলিশ।

Advertisement

সম্প্রতি প্রায় ২,৭০০ কোটি টাকার আর্থিক প্রতারণার মামলার তদন্তে গুজরাত এবং রাজস্থানে হানা দেয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। গত বৃহস্পতিবার ওই দুই রাজ্যের প্রায় ২৪টি জায়গায় একসঙ্গে তল্লাশি চালান কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। জানা যায়, ‘নেক্সা এভারগ্রিন’ নামে একটি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছিল রাজস্থান পুলিশ। তার প্রেক্ষিতেই ওই অভিযান।

তদন্তে উঠে এসেছে, বড় অঙ্কের আর্থিক লাভ এবং গুজরাতের ঢোলেরা শহরে ‘স্মার্ট সিটি’ প্রজেক্টে জমি পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লগ্নিকারী এবং আমানতকারীদের থেকে কোটি কোটি টাকা তুলেছেন সংস্থার মালিকদ্বয় এবং তাঁদের সহযোগীরা। সীকর জেলার বাসিন্দা সুভাষ এবং রণবীর ওই কোম্পানিটি তৈরি করেন বছর কয়েক আগে। প্রথমে ঢোলেরা শহরের ‘স্মার্ট সিটি’ প্রোজেক্টে ফ্ল্যাটবাড়ি এবং জমি বিক্রির নামে ‘ভুয়ো ব্যবসা’ শুরু করেন দুই ভাই। অভিযোগ, অন্যের ‘হাউসিং প্রোজেক্ট’-এর ছবি দেখিয়ে তাঁরা দাবি করেন এগুলোই তাঁদের আগামী দিনের প্রকল্প!

Advertisement

প্রায় ৭০ হাজার মানুষ বিনিয়োগ করেছিলেন এই ভুঁইফোড় সংস্থায়। তাঁরা সকলেই এখন পড়েছেন বিশ বাঁও জলে! পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, এই ‘দুর্নীতি’র শুরু ২০১৪ সালে। প্রথমে ঢোলেরা শহরে একটি জমি কেনেন রণবীর। তাঁর ভাই সুভাষ ছিলেন সেনাবাহিনীতে। তিনি অবসরের পরে ৩০ লক্ষ টাকা দিয়ে আরও একটি জমি কেনেন ওই জায়গায়। কিছু দিনের মধ্যে তৈরি হয় ‘নেক্সা এভারগ্রিন।’ তবে সংস্থাটির রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ২০২১ সালে। অহমদাবাদ থেকে। নিজেদের ‘ঢোলেরা স্মার্ট সিটি’ প্রকল্পের অংশীদার দাবি করে বাজার থেকে টাকা তোলে সংস্থাটি। তারা নিজেদের ১৩০০ বিঘা জমির মালিক বলে দাবি করে। ওই বিশাল জায়গাটিতে বিশ্বমানের ‘স্মার্ট সিটি’ তৈরি হবে।

অপেক্ষাকৃত সস্তায় ভাল মানের ফ্ল্যাটবাড়ি এবং জমির লোভে প্রচুর মানুষ বিনিয়োগ করতে থাকেন দুই ভাইয়ের সংস্থায়। শুধু জমি-বাড়িই নয়, স্বল্প বিনিয়োগে বড় লভ্যাংশের টোপ দেওয়া হয়েছিল বিনিয়োগকারীদের। অভিযোগ, এই ভাবে এজেন্টদের দিয়ে ২৬৭৬ কোটি টাকা তোলে সংস্থাটি। এজেন্টদের কমিশন বাবদ দেওয়া হয় প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা। এর পর প্রতারণার অর্থে ১৩০০ বিঘা জমি কেনেন অভিযুক্তেরা। তদন্তে উঠে এসেছে, অভিযুক্তেরা গত কয়েক বছরে দামি দামি গাড়ি কিনেছেন। রাজস্থানে হোটেল করেছেন। অহমদাবাদ এবং গোয়ায় অন্তত ২৫টি রিসর্ট গড়েছেন। তার পর নগদে নেওয়া ২৫০ কোটি টাকা দিয়ে বিভিন্ন ভুয়ো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। এই সব কারবারের পরে হঠাৎ করে ‘নেক্সা এভারগ্রিন’-এর ঝাঁপ ফেলে দেওয়া হয়।

বহু আমানতকারী এবং বিনিয়োগকারী পুলিশের দ্বারস্থ হন। তাঁদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজস্থান পুলিশ মামলা রুজু করে। পরে আর্থিক তছরুপ প্রতিরোধ আইন (পিএমএলএ)-এর আওতায় পৃথক একটি মামলা রুজু করে ইডি। ওই মামলার সূত্রেই গত বৃহস্পতিবার গুজরাত এবং রাজস্থানে হানা দেন তদন্তকারীরা। রাজস্থানের জয়পুর, যোধপুর, ঝুনঝুনু, সীকর এবং গুজরাতের অহমদাবাদ-সহ প্রায় ২৪টি জায়গায় একযোগে তল্লাশি চালায় ইডি। প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া টাকা কোন পথে ঘুরেছে, কোথায় রাখা হয়েছে, কোন কোন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়েছে, সেই সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন ইডির তদন্তকারী আধিকারিকেরা।

উল্লেখ্য, কেন্দ্র এবং গুজরাত সরকার যৌথ ভাবে তৈরি করছে ‘ঢোলেরা স্মার্ট সিটি।’ওই প্রকল্পটি হতে চলেছে ভারতের বৃহত্তম গ্রিনফিল্ড ‘স্মার্ট সিটি।’ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বহুজাতিক সংস্থা তৈরি হচ্ছে। ২০৪২ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement