Congress

চিঠি নিয়ে অনড়ই কংগ্রেসে বিক্ষুব্ধেরা

কার্যকরী নেতৃত্বের দাবি তুলে সনিয়াকে চিঠি লেখা সেই কংগ্রেস নেতারা এখনও বলছেন, তাঁরা দলের পুনরুত্থানের জন্যই চিঠি লিখেছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২০ ০৫:১০
Share:

—ফাইল চিত্র।

কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটিতে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, হাইকমান্ড ও দলকে দুর্বল করতে চেয়েছেন তাঁরা। উঠেছে শাস্তির দাবিও। সনিয়া গাঁধী নিজে জানিয়েছেন, ২৩ জন কংগ্রেস নেতার চিঠিতে তিনি ‘আহত’।

Advertisement

কার্যকরী নেতৃত্বের দাবি তুলে সনিয়াকে চিঠি লেখা সেই কংগ্রেস নেতারা এখনও বলছেন, তাঁরা দলের পুনরুত্থানের জন্যই চিঠি লিখেছিলেন। তাঁরা কোনও পদ চাইছেন না। ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক মিটে যাওয়ার পরে সনিয়াকে লেখা চিঠিতে সই করা বীরাপ্পা মইলি, কপিল সিব্বল, বিবেক তন্খা মঙ্গলবার যুক্তি দিলেন, তাঁরা দলের স্বার্থেই পুরো সময়ের সক্রিয় নেতৃত্ব, সম্মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কংগ্রেসে সাংগঠনিক নির্বাচনের দাবি তুলেছিলেন।

কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম ‘বিক্ষুব্ধ’দের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, যাঁরা চিঠি লিখেছেন, ‘‘তাঁরাও আমার বা রাহুল গাঁধীর মতোই মোদী সরকার বিরোধী।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘কেউ ‘অল ইজ ওয়েল’ বলছে না। সব সময়ই ক্ষোভ থাকে। ক্ষোভ থাকলেই বদল আসে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: সনিয়া ও মমতার ডাকে বৈঠক আজ, নিট-জেইই নিয়ে একজোট বিরোধীরা

আরও পড়ুন: করোনা-আতঙ্কে কমেছে খরচ, থমকে বৃদ্ধির হার

সনিয়াকে লেখা চিঠিতে ২৩ জন ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতার অভিযোগের পরোক্ষ তিরটি ছিল মূলত রাহুল গাঁধীর দিকে। কারণ রাহুল সভাপতির দায়িত্ব না-নিয়ে পর্দার আড়াল থেকে দল নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ। নিজের গুটিকতক আস্থাভাজন ছাড়া বাকি কারও সঙ্গে আলোচনা না-করেই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আলোচনা ছাড়াই মোদী সরকারকে নিজের মতো করে আক্রমণ করছেন। রাজস্থানের ঘটনায় দেখা গিয়েছে, সাংগঠনিক বিষয়েও তিনিই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এই কারণেই সকলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দাবি তোলেন ওই নেতারা।

দলের মধ্যে প্রশ্ন, এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ্যে এসে যাওয়ার পরে কি রাহুল তা হলে এ বার নিজের কাজকর্মের ধরন পাল্টাবেন?

কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাহুলের কাজের ধরন পাল্টাবে কি না, তার উত্তর সময়ই দেবে। তবে আপাতত সনিয়াকে সাহায্য করার জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি তৈরি হবে। ওয়ার্কিং কমিটিতে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০১২ সালে সনিয়ার অসুস্থতার সময়ও দল পরিচালনার জন্য এ কে অ্যান্টনি, আহমেদ পটেল ও তৎকালীন সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক জনার্দন দ্বিবেদীকে নিয়ে এমনই একটি গোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল।

রাহুল ওয়ার্কিং কমিটিতে ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতাদের চিঠির সময় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের আগেই কুমারী শৈলজা ‘বিক্ষুব্ধ’দের সঙ্গে বিজেপির আঁতাঁত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। ওয়ার্কিং কমিটির মধ্যে সাংসদ এ চেল্লা কুমার

বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের দিকে ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, অনেক কংগ্রেস কর্মী তাঁকে প্রশ্ন করেছেন, জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ রদের পরে সব বিরোধী দলের নেতাদের আটক করা হলেও গুলাম নবি আজাদকে কেন আটক করা হল না! ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতারা দলে পদ না পেয়ে বা পদের দাবিতে বিদ্রোহ করছেন বলেও অনেকের ইঙ্গিত।

মঙ্গলবার কপিল সিব্বলের যুক্তি, এর সঙ্গে কোনও পদের সম্পর্ক নেই। দেশের স্বার্থটাই আসল। মধ্যপ্রদেশের নেতা বিবেক তাঙ্খা বলেন, “আমরা বিক্ষুব্ধ নই। দলের পুনরুত্থানের কথা বলছি। ওই চিঠির উদ্দেশ্য নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো নয়, দলকে মজবুত করার পদক্ষেপ দাবি করা। ইতিহাস সাহসীদেরই স্বীকৃতি দেয়, অনুগতদের নয়।”

কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, মনমোহন সিংহ সরকারের মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি বলেন, “আমরা সনিয়াজিকে আঘাত দিয়ে থাকলে তার জন্য দুঃখিত। আমরা তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে কখনও প্রশ্ন তুলিনি। কিন্তু একই সঙ্গে পার্টির পুনরুজ্জীবন দরকার। তার মানে এই নয় উনি সভানেত্রী থাকবেন না।” যাঁরা এই চিঠি ফাঁস করেছেন, তাঁদেরও শাস্তির দাবি তুলেছেন মইলি।

মহারাষ্ট্রের তিন নেতা, পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ, মুকুল ওয়াসনিক ও মিলিন্দ দেওরা চিঠিতে সই করেছিলেন। তাঁদের ক্ষমাপ্রার্থনার দাবি জানিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী সুনীল কেদারের হুঁশিয়ারি, তথাকথিত বুদ্ধিজীবী নেতারা নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, এটা মানা যায় না। ওঁরা ক্ষমা না চাইলে কী ভাবে রাজ্যে ঘোরাফেরা করেন, তা কংগ্রেস কর্মীরা দেখবেন। কিন্তু চিদম্বরমের যুক্তি, দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে, ক্ষোভবিক্ষোভ সামনে আসছে মানেই পার্টি জীবন্ত রয়েছে। তাঁর মতে, ওই নেতাদের উদ্বেগ দূর করতেই এআইসিসি অধিবেশন ডেকে সভাপতি পদে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন