আতঙ্ক কাটেনি বড়খলার, ট্রাকচালক খুনে ধৃত ২৭

ট্রাক চালককে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনায় ২৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশের দাবি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্বস্তিতে নেই কেউ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৩৭
Share:

খুনের ঘটনায় ধৃতদের আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শুক্রবার শিলচরে। ছবি: স্বপন রায়।

ট্রাক চালককে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনায় ২৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশের দাবি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্বস্তিতে নেই কেউ। বনধের গুজবে আজও বড়খলার বিভিন্ন অঞ্চল এবং হাফলং-শিলচর সড়কে যানবাহন চলেছে কম। রাজনৈতিক দলগুলি একে অপরকে দোষারোপ করছে। মন্ত্রী সিদ্দেক আহমেদ চালক হত্যার ঘটনায় বিজেপির হাত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। এআইইউডিএফ থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক আতাউর রহমান মাঝারভুঁইঞারও একই সন্দেহ। বিজেপি নেতারা তাঁদের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানান। উল্টে সিদ্দেকদেরই ‘উস্কানিদাতা’ বলে অভিযুক্ত করে। বুধবার দুপুরে বড়খলা থানার ময়নাগড় এলাকায় সড়ক দুঘটনায় বাদল সাঁওতাল নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। ক্ষুব্ধ জনতা ট্রিপার-ট্রাকের চালককে পিটিয়ে জ্বলন্ত ট্রাকে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। একে ঘিরে দু’দিন ধরে উপত্যকার বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধ চলছে। গত কাল দুপুরে পুলিশ চালক হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ময়নাগড়ের তিন জনকে গ্রেফতার করে। গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে ধরা হয় আরও ২৪ জনকে। আজ আদালত সকলকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়েছে।

Advertisement

এসপি রজবীর সিংহ জানান, পুলিশ বাহিনী রাতে অভিযানে নামলে ময়নাগড় চা বাগানের শ্রমিকরা প্রথমে তির-ধনুক নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। তাতে কয়েক জন পুলিশ সামান্য জখম হন। এরপরও তাঁরা পিছু হটেননি। একে একে তুলে আনা হয় ২৪ অভিযুক্তকে। প্রচুর তির-ধনুক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

ময়নাগড় কাণ্ড নিয়ে দু’দিন নীরব থাকলেও বিজেপি প্রতিনিধিদল আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যেতে চেয়েছিল। তা জেনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আপত্তি করা হয়। তাঁদের যুক্তি, পরিস্থিতি ক্রমে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এই অবস্থায় রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশে পেলে অবস্থা নতুন মোড় নিতে পারে। বিজেপি নেতারা তাঁদের যুক্তি মেনে নিয়ে আর সে মুখো হননি। তাঁরা জেলাশাসক এস বিশ্বনাথনের সঙ্গে দেখা করে একগুচ্ছ দাবি জানান। তার অন্যতম হল, নিহত গাড়িচালক ও পথচারী দু’জনের পরিবারকেই আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। তাঁরা চালকের মৃত্যুর জন্য পুলিশকেই দায়ী করেন। বিধায়ক দিলীপকুমার পাল ও বিজেপির জেলা সভাপতি কৌশিক রাই বলেন— ‘‘বড়খলা থানায় আর ক-জন পুলিশ! সীমিত ক্ষমতা নিয়েই ওসি সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু শিলচর থেকে অতিরিক্ত বাহিনী যেতে সময় লেগেছে আড়াই ঘণ্টা। ততক্ষণে বিশাল জনতা লোকটিকে মেরে ফেলে। পুলিশ পুরো শক্তি নিয়ে দ্রুত উপস্থিত হলে তাঁকে এ ভাবে প্রাণ হারাতো হতো না।’’ তাঁরা দু’টি ঘটনাতেই শোক প্রকাশ করেন।

Advertisement

কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন সংগঠন চালক খুনের ঘটনাতেও গেরুয়া বাহিনীর উস্কানি রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে। বিজেপি নেতারা পাল্টা তাঁদের দোষারোপ করেন। বলেন, শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী সিদ্দেক আহমেদ ও বিধায়ক আতাউর রহমান মাঝারভুঁইঞাই উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখছেন। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ বলেন, ‘‘প্রশাসনকে অহেতুক ব্যতিব্যস্ত রাখতে চাই না। না হলে কি আজ আমরা জেলা প্রশাসনের আপত্তি মেনে যাত্রাভঙ্গ করতাম।’’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষিনী শঙ্করণ জানান, এটি কোনও গোষ্ঠী সংঘর্ষ বা রাজনৈতিক ঘটনার জের নয়। দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যুর পর স্বাভাবিক যে উত্তেজনা দেখা দেয়, সেখানেও তা-ই হচ্ছিল। কিন্তু পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা কোনও মতে মেনে নেওয়া যায় না। পুলিশ দোষীদের সবাইকে গ্রেফতার করে শাস্তির ব্যবস্থা করবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।

এ দিকে, গত সপ্তাহে মেহেরপুরের উত্তেজনা এবং এখন বড়খলায় যে অস্বস্তিকর পরিবেশ, তাতে সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন। তাঁরা নিজেরাই শান্তিরক্ষায় সভা-সমিতি করছেন। গত কাল মেহেরপুরের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষ এক সভায় মিলিত হন। সংস্কৃতি কর্মী আশিস ভৌমিক এতে পৌরোহিত্য করেন। যে কোনও পরিস্থিতিতে এলাকায় সদ্ভাব বজায় রাখার ব্যাপারে সবাই একমত হন। আনোয়ার হোসেন মজুমদারকে সভাপতি ও বাপন দেবকে সম্পাদক করে একটি শান্তি কমিটিও তৈরি করা হয়। আজ একই ধরনের সভা হয় সদরঘাটের অভয়াচরণ পাঠশালায়। সেখানেও শান্তি-শৃঙ্খলার পক্ষে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement