খাওয়া জুটবে তো, চাকরি পেয়েও চিন্তা

কেউ চাকরি পেয়েছেন হরিয়ানায়, কেউ উত্তরপ্রদেশে, কেউ বা পঞ্জাবে। কারও বেতনই পাঁচ অঙ্ক ছোঁয়নি। এই টাকায় দূর দেশে নিজেরটাই চালানো মুশকিল। বাড়িতে পাঠানোর তো কিছুই থাকবে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রাঁচী শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:২৭
Share:

চাকরির নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে রাঁচীর টানা ভগত স্টেডিয়ামে মাঠে বিহ্বল ভাবে বসেছিলেন দেওঘরের যুবক কৈলাস মাঝি। নিয়োগপত্র পড়ে হাসবেন না কাঁদবেন, বুঝতে পারছিলেন না। তাঁর চাকরি মিলেছে হিমাচলপ্রদেশের একটি সংস্থায়। বেতন প্রতি মাসে সাড়ে ছ’হাজার টাকা। এই বেতনে দেওঘর থেকে সুদূর হিমাচলপ্রদেশে পাড়ি দিতে হবে বছর তেইশের কৈলাসকে! থাকবেন কোথায়, খাবেন কী সেটাই ভেবে যাচ্ছেন তিনি।

Advertisement

শেষ পর্যন্ত বাড়িতে ফোন করে বাবার সঙ্গে কথা বললেন কৈলাস। তাঁর কথায়, ‘‘বাবা বললেন এত অল্প মাইনেতে হিমাচলে গিয়ে থাকা খাওয়ার খরচই তো উঠবে না। দরকার নেই চাকরির।’’ শুধু কৈলাসই নন, তাঁর মতো বহু-বহু তরুণ-তরুণীর একই অবস্থা। কেউ চাকরি পেয়েছেন হরিয়ানায়, কেউ উত্তরপ্রদেশে, কেউ বা পঞ্জাবে। কারও বেতনই পাঁচ অঙ্ক ছোঁয়নি। এই টাকায় দূর দেশে নিজেরটাই চালানো মুশকিল। বাড়িতে পাঠানোর তো কিছুই থাকবে না। গত কাল এই ছিল টানা ভগত স্টেডিয়ামের সার্বিক চিত্র। স্টেডিয়ামের এই তরুণ-তরুণীদের জমায়েত যখন তাঁদের ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন, তখনই শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস তাঁর ভাষণে বলছেন, ‘‘বিবেকানন্দের জন্ম দিবসে ঝাড়খণ্ড সরকার রোজগার মেলা বা স্কিল সামিট করে ইতিহাস তৈরি করল। একদিনে আমরা ২৫ হাজার চাকরি দিয়েছি।’’ আগামী বছর মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্য এক লক্ষ তরুণ-তরুণীকে চাকরি দেওয়া।

এ সবের মধ্যেই আবার কিছু তরুণ-তরুণীকে দেখা গেল উদভ্রান্তের মতো অনুষ্ঠান স্থলের এদিক থেকে ওদিক ঘুরছেন। এখানে ‘ইন্টারভিউ’ দিয়ে তাঁরা চাকরি পেয়েছেন। নিয়োগকারী সংস্থা একটা কাগজে ‘সিলেক্টেড’ বলে লিখেও দিয়েছিলেন। স্কিল সামিটে এসে নিয়োগপত্র নিয়ে যাওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। আজ স্কিল সামিটে সেই নিয়োগকারী সংস্থার কাউকেই খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা। যে মোবাইল নম্বর থেকে ফোন এসেছিল, তাও বন্ধ। গুল হাসান নামে এক তরুণের কথায়, ‘‘কেউই কোনও সঠিক উত্তর দিতে পারছেন না। তল্পিতল্পা গুটিয়ে কোথায় যে গেল!’’

Advertisement

আর সব দেখে শুনে ‘স্কিল সামিট’ নিয়ে ব্যঙ্গ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন বলেন, ‘‘বিজেপি সরকারের সবই হাওয়া-হাওয়া। গত বছর ঢাক ঢোল পিটিয়ে গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট সামিট হল। তারপর মাইনিং সামিট। এবার স্কিল সামিট। এতে রাজ্যের কোনও উপকার হচ্ছে না। শুধুই চমক তৈরি হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন