ডাহা ফেল ইডি-সিবিআই, মুখ পুড়ল মোদী সরকারের

এমনকী, কোনও আর্জি বা জবাবেও সিবিআইয়ের অফিসার, আইনজীবীরা দায়িত্ব নিয়ে সই করতে চাইতেন না। সবই শেষবেলায় ইনস্পেক্টর মনোজ কুমারকে দিয়ে সই করানো হতো।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:১২
Share:

সরকারি কোষাগারের ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগ। সাত বছর ধরে শুনানি। ১৫৫ জন সাক্ষী। ৮০ হাজার পাতার নথি। কাঠগড়ায় মন্ত্রী-আমলা-কর্পোরেট রথী-মহারথীরা। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসের সবথেকে স্পর্শকাতর মামলা।

Advertisement

আর সেই পরীক্ষায় ডাহা ফেল সিবিআই। দোসর ইডি-ও।

টু-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে এ রাজা, কানিমোঝি-সহ ৩৫ জন অভিযুক্তের এক জনকেও আদালতে দোষী সাব্যস্ত করতে পারল না তারা। বিশেষ আদালতের বিচারত ও পি সাইনি আজ তাঁর রায়ে বলেছেন, ‘‘আমার বলতে কোনও দ্বিধা নেই যে, সুন্দর করে সাজানো চার্জশিটে কোনও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগও প্রমাণ করতে তদন্তকারীরা নিদারুণ ভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।’’ একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, সিবিআই কী প্রমাণ করতে চাইছে, সেটাই বোঝা মুশকিল ছিল। ফলে সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার, আইনজীবীদের দক্ষতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনই নরেন্দ্র মোদী সরকারকেও অস্বস্তিতে ফেলেছে।

Advertisement

সেই অস্বস্তি বাড়িয়ে সদ্যপ্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি এই রায়কে সঠিক বলেই আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, এর মধ্যে কোনও দিনই অপরাধমূলক কিছু ছিল না। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে এত বছর ধরে কার বুদ্ধিতে মামলা চালাচ্ছিল সিবিআই? আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, শুরুতে সিবিআই খুব উৎসাহ নিয়ে, তেড়েফুঁড়ে মামলা শুরু করেছিল। কিন্তু পরে সাবধানী ও দিশাহীন হয়ে পড়ে। এমনকী, কোনও আর্জি বা জবাবেও সিবিআইয়ের অফিসার, আইনজীবীরা দায়িত্ব নিয়ে সই করতে চাইতেন না। সবই শেষবেলায় ইনস্পেক্টর মনোজ কুমারকে দিয়ে সই করানো হতো।

আরও পড়ুন: ওয়ানাক্রাই: না বলল পিয়ংইয়ং

তদন্তের শুরুতেই প্রাক্তন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এ রাজাকে গ্রেফতার করে তাঁকে ‘প্রধান ষড়যন্ত্রী’ আখ্যা দিয়েছিল সিবিআই। আদালত বলেছে, এমন কোনও প্রমাণ নেই। সিবিআই জানিয়েছে, আদালতে পেশ করা প্রমাণ সঠিক পরিপ্রেক্ষিতে দেখা হয়নি। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন জানানো হবে। ইডি-ও সেই পথে হাঁটবে। কিন্তু তাতে ফল মিলবে কি না, সে প্রশ্ন থাকছেই। কারণ বিচারক সাইনির আইনি দক্ষতা সম্পর্কে কারও মনেই সংশয় নেই।

সিবিআই কর্তাদের পাল্টা যুক্তি, বিবেক প্রিয়দর্শীর মতো সৎ, দক্ষ অফিসার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন। বিদেশ থেকে প্রমাণ জোগাড় করে আনা হয়েছে। সিএজি, ভিজিল্যান্স কমিশন, সংসদীয় কমিটিও বলেছিল, দুর্নীতি হয়েছে। তার পরেও এই রায় অপ্রত্যাশিত। যাঁর আমলে রাজা গ্রেফতার হন, সিবিআইয়ের সেই প্রাক্তন অধিকর্তা এ পি সিংহ-ও এই রায়ে ‘বিস্মিত’। তাঁর দাবি, তদন্তে স্পষ্ট ছিল, রাজা সোয়ান টেলিকম ও ইউনিটেককে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিলেন। সিবিআইয়ের পাশাপাশি টাকার লেনদেনের তদন্তে ছিল ইডি। তাদের অভিযোগ ছিল, ঘুষের ২০০ কোটি টাকা করুণানিধির পরিবারের মালিকানাধীন কালাইগনার টিভির কোষাগারে ঢুকেছিল। যা ঘুরপথে করুণানিধির দ্বিতীয় স্ত্রী দয়ালু আম্মালের অ্যাকাউন্টে ঢোকে। কিন্তু সেই লেনদেন প্রমাণে পেশ করা তথ্য খারিজ করে দিয়েছে আদালত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন