আতঙ্ক কুয়াশা, দেশজুড়ে বাতিল দিল্লি-সহ উত্তরমুখী অন্তত ৩০০ ট্রেন

কুয়াশার আতঙ্কেই আসন্ন শীতে এ বছর দেশ জুড়ে বাতিল করা হল প্রায় তিনশোর বেশি মেল এক্সপ্রেস ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন। এর মধ্যে রয়েছে রাজধানী ও দুরন্ত এক্সপ্রেসও। রেল বোর্ড সূত্রের খবর, এই সব ট্রেন বাতিল হচ্ছে ৮ জানুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কোন কোন ট্রেন বাতিল করা হচ্ছে তার তালিকাও চূড়ান্ত করা হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ১৫:১৭
Share:

কুয়াশার আতঙ্কেই আসন্ন শীতে এ বছর দেশ জুড়ে বাতিল করা হল প্রায় তিনশোর বেশি মেল এক্সপ্রেস ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন। এর মধ্যে রয়েছে রাজধানী ও দুরন্ত এক্সপ্রেসও। রেল বোর্ড সূত্রের খবর, এই সব ট্রেন বাতিল হচ্ছে ৮ জানুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কোন কোন ট্রেন বাতিল করা হচ্ছে তার তালিকাও চূড়ান্ত করা হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

শুরুর পর থেকে এমন দিনও হয়নি, রাজধানী এক্সপ্রেসের চাকা ঘোরেনি। এ বার কুয়াশার কথা মাথায় রেখে রাজধানীর চাকাতেও বেড়ি দিতে চলেছে রেল। চাকায় বেড়ি পড়ছে শতাব্দী ও দুরন্ত এক্সপ্রেস সমেত আরও অনেক মেল এক্সপ্রেসেরও।

প্রতি বছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই কুয়াশার বাড়বাড়ন্ত হয়। ওই সময়ে মাঝেমধ্যে এমন অবস্থা হয় যে দৃশ্যমানতা একেবারে নেমে যায়। মাঝপথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেন থামিয়ে রাখতে বাধ্য হন চালক। কিন্তু তা সত্ত্বেও ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু এ বছর এমন কী হল যে এত ট্রেন বাতিল করতে হচ্ছে?

Advertisement

রেলকর্তাদের বক্তব্য, গত কয়েক বছর ধরে উত্তর ভারতে কুয়াশার বাড়বাড়ন্ত। রেলের ইঞ্জিনিয়ারেরা এর পিছনে দূষণকেই দূষছেন। তাঁদের বক্তব্য, বাতাসে রোজই বাড়ছে ধূলিকণা। শীতের রাতে বাতাস ভারী হতেই কুয়াশার সঙ্গে নেমে আসছে ওই ধূলিকণা। মাঝেমধ্যে অবস্থা এমন হচ্ছে যে ভোরের রোদকেও ছাতার মতো আটকে দিচ্ছে ওই কুয়াশা বা ধোঁয়াশা। তাতেই নেমে যাচ্ছে দৃশ্যমানতা। আটকে পড়ছে ট্রেন। মাঝপথে প্রায় ১৫-২০ ঘণ্টা আটকে পড়ায় যাত্রীরাও চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়ছিলেন।

রেলকর্তাদের বক্তব্য, যাত্রীদের কথা মাথায় রেখেই দেশ জুড়ে প্রায় তিনশোর বেশি উত্তরমুখী ট্রেন আগেভাগেই বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এমনকী, নিয়ম মেনে ওই সব মেল, এক্সপ্রেস ও প্যাসেঞ্জার ট্রেনের নিদির্ষ্ট দিনগুলির টিকিট বিক্রিও করা হয়নি।

ট্রেন কমানোর সিদ্ধান্তে কী উপকার হবে যাত্রীদের?

রেলকর্তাদের বক্তব্য, কুয়াশার জেরে দেখতে না পেয়ে চালকেরা মাঝ রাস্তাতেই দাঁড় করিয়ে দেন ট্রেন। আর একটা ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়লেই পিছনে একই ভাবে আটকে পড়ে পর পর অনেক ট্রেন। এর জেরেই তৈরি হয় ট্রেনের জট। সেই জট ছাড়িয়ে ট্রেনগুলির গন্তব্যে পৌঁছতে প্রায় দ্বিগুণ সময় লেগে যায়। কিন্তু লাইনে ট্রেন কমিয়ে দেওয়া হলে যে ট্রেনগুলি চলবে সেগুলি ধীর গতিতেও টানা চালানো সম্ভব হবে। ফলে মাঝপথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হবে না যাত্রীদের।

রেলকর্তাদের আরও বক্তব্য, গত বছর এই কুয়াশার জেরে মাঝপথে ট্রেন আটকে যাওয়ায় যাত্রীদের ঠিক ভাবে খাবার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে কালঘাম ছুটে যায় রেলকর্মীদের। তাই রেল বোর্ড আগেভাগে সব জোনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে, বিশেষ করে উত্তরমুখী ট্রেন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কী বলছেন যাত্রীরা?

ট্রেন কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না যাত্রীরা। তাঁদের বক্তব্য, কুয়াশা যে হবেই, এমন ধরে নেওয়া হল কেন? তাঁদের কথায়, এমনিতেই সারা বছর উত্তরমুখী, বিশেষ করে দিল্লিমুখী ট্রেনগুলির টিকিটই পাওয়া যায় না। তার মধ্যে এই বিরাট সংখ্যক সাধারণ মেল-এক্সপ্রেস ট্রেন কমিয়ে দিলে ওই দু’মাস যাতায়াতের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। যাত্রীদের ওই বক্তব্যের উত্তরে রেলকর্তারা জানিয়েছেন, গত ৮-১০ বছর ধরেই ঘন কুয়াশায় ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হচ্ছে। তাই এ বছরও কুয়াশা হবে ধরে নিয়েই যাত্রীদের সুবিধার জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে, কুয়াশায় রানওয়েতে অবতরণের ক্ষেত্রে একই অসুবিধায় পড়ে বিমানও। কিন্তু তা-ও অবতরণ করতে পারে বিমান। তা হলে ট্রেন বাতিল কেন?

রেলকর্তারা বলছেন, কুয়াশার মধ্যে বিমান ওঠানামা করানোর জন্য বিশেষ যে প্রযুক্তি রয়েছে তা রানওয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ট্রেনের জন্য সেই ধরনের প্রযুক্তি এখনও তৈরি হয়নি। উপযুক্ত প্রযুক্তি এলে তখন দেখা যাবে। বিদেশেও শীতের জন্য ট্রেনের আলাদা সময় সারণি তৈরি করা হয়। সেখানেও মূলত ট্রেন বাতিল করেই এই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা হয় বলে রেলকর্তারা জনিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement