ইরাক-সিরিয়া যেতে তৈরি পাঁচশো তরুণ

দেশ ছেড়ে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিতে মানসিক ভাবে তৈরি রয়েছেন ভারতের অন্তত ৫০০ মুসলিম যুবক। জম্মু-কাশ্মীর, কেরালা, অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি-সহ বিভিন্ন রাজ্যের এই যুবকদের লক্ষ্যই হল খিলাফত বা ইসলামি ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা করে মূলত পশ্চিমি দুনিয়াকে শিক্ষা দেওয়া। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে এই তথ্য জানিয়েছে।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৬ ০৪:০৭
Share:

দেশ ছেড়ে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিতে মানসিক ভাবে তৈরি রয়েছেন ভারতের অন্তত ৫০০ মুসলিম যুবক। জম্মু-কাশ্মীর, কেরালা, অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি-সহ বিভিন্ন রাজ্যের এই যুবকদের লক্ষ্যই হল খিলাফত বা ইসলামি ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা করে মূলত পশ্চিমি দুনিয়াকে শিক্ষা দেওয়া। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে এই তথ্য জানিয়েছে।

Advertisement

সরকারি ভাবে কেন্দ্রের হিসাব— এখনও পর্যন্ত ভারত থেকে দু’ডজন যুবক সিরিয়া ও ইরাকে গিয়ে আইএসে যোগদান করেছে। গোয়েন্দারা বলছেন, এক সময়ে

নতুন নতুন এলাকা দখল করে ক্রমশ শক্তি বিস্তার করলেও, গত কয়েক মাস ধরে আমেরিকা ও রাশিয়ার মতো শক্তিধর দেশগুলির মার খেয়ে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে এই জঙ্গি সংগঠন। একের পর এক এলাকা হাতছাড়া হচ্ছে। লাগাতার হামলায় প্রচুর যোদ্ধাও মারা পড়েছে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় উপমহাদেশের মতো জনবহুল এলাকাকে যোদ্ধা সংগ্রহের জন্য পাখির চোখ করেছে আইএস। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ফেসবুক টুইটারের মতো সামাজিক সাইটগুলি থেকে জঙ্গিদের প্রতি নরম মনোভাবাপন্ন মুসলিম যুবকদের বেছে নিয়ে তারা লাগাতার মগজ ধোলাইয়ের কৌশল নিয়েছে। তাদের কারও কারও সঙ্গে আইএস-এর আঞ্চলিক নেতারা ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগও করেছে। তারই ফলশ্রুতি হিসেবে এই মুহূর্তে অন্তত পাঁচশো ভারতীয় যুবক আইএসে যোগ দিতে মানসিক ভাবে প্রস্তুত রয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হাতে আসা রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই যুবকদের বড় অংশের লক্ষ্য হল ইরাক-সিরিয়া-সহ পশ্চিম এশিয়ায় খিলাফত প্রতিষ্ঠা। তবে রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই সব যুবকদের ক্ষোভ প্রধানত পশ্চিমি দেশগুলির একাধিপত্যের বিরুদ্ধে। ভারতীয় প্রশাসন বা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে যে তারা জঙ্গি দলে যোগ দিতে চাইছেন, বিষয়টি তেমন নয়।

সংখ্যালঘু যুবকদের এই প্রবণতা কিছুটা হলেও ধন্দে ফেলেছে ভারতীয় গোয়েন্দাদে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলছে, শুরুর দিকে যে যুবকেরা সিরিয়া বা ইরাকে পাড়ি দিয়েছিল তাদের অধিকাংশ আগে থেকেই ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, জইশ বা লস্করের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলির সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষ ভাবে জড়িয়ে পড়েছিল। ধরপাকড়ের ভয়ে তারা বিদেশে পালিয়ে যায়। কিন্তু এখন যে যুবকেরা আইএস-এ যোগ দিতে চায়, তাদের অনেকেরই কোনও জঙ্গি-যোগ নেই।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, সামাজিক সাইট-সহ যোগাযোগ মাধ্যমগুলির ওপর নিবিড় নজরদারি রেখেই গোয়েন্দারা নতুন এই প্রবণতার কথা জেনেছে। এ দেশ থেকে যারা আইএসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, তাদের উপর ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালানো হচ্ছে। নজরদারিতে পাওয়া গিয়েছে, হ্যান্ডলাররা যখন জানতে চাইছে ভারতীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তাদের কোনও ক্ষোভ রয়েছে কি না, তখন অধিকাংশ মুসলিম যুবক বলেছেন— নেই।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই দাবি করলেও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, ভারতীয় ব্যবস্থার ওপর ক্ষোভের প্রমাণ মেলেনি বলে গর্ব করার কিছু নেই। তাতে ভারতের বিপদ কমে না। নজর দেওয়ার মতো বিষয় হল— এ দেশে নিরাপত্তার এত কড়াকড়ি সত্ত্বেও আইএস দিব্যি যুবকদের বাছাই করে মগজধোলাই করে চলেছে। তা ছাড়া ভারত যে আইএসের অন্যতম নিশানা তা স্পষ্ট। মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগও সম্প্রতি নয়াদিল্লিকে সতর্ক করে জানিয়েছে, আইএস-এর একটি অংশ ভারতে হামলার প্রস্তুতি শুরু করেছে। আইএস-এর অনলাইন পত্রিকা ‘দাবিক’-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে সংগঠনের বাংলা শাখার আমির (প্রধান) শায়ক আবু ইব্রাহিম আল হানিফ দাবি করেছে, বাংলাদেশে হাসিনা সরকারকে উৎখাত করার পাশাপাশি ভারতে খিলাফত প্রতিষ্ঠাও তাদের লক্ষ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন