ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
পুলিশে ছুঁলে ঠিক কত ঘা? জানেন মিঠু সিংহ। বয়সের ভারে ন্যুব্জ তাঁর শরীর। লাঠি ঠুকিয়ে কখনও একা একা, কখনও বাড়ির কাউকে নিয়ে প্রতি মাসে এক বার করে থানায় হাজিরা দিতেন নবতিপর বৃদ্ধ। থানায় যাওয়া, রেজিস্ট্রার খাতায় সই করা, পুলিশকর্মীদের সঙ্গে দেখা করে বাড়ি ফেরা— গত ৫৫ বছর ধরে এটাই তাঁর রুটিন। অবশেষে পুলিশ তাঁকে জানাল, পরের মাস থেকে তাঁকে আর থানায় যেতে হবে না!
শুনে হাসবেন না কাঁদবেন বুঝতে পারেননি ওই নবতিপর। কানে যা শুনলেন, ঠিক শুনলেন? ঠিক? বিস্ময়ের ঘোরে পুলিশকে তাঁর জিজ্ঞাসা, ‘‘মানে... মানে আমি এখন থেকে মুক্ত? আমি স্বাধীন?’’
মিঠুর বয়স তখন বছর ৩৫। পাড়ায় একটা অশান্তিতে তাঁর নাম জড়িয়েছিল। থানা-পুলিশ হয়। তবে পাড়ায় মিটমাট হয়ে যায়। এখন আর কারও মনেও নেই সেই গোলমালের কথা। কিন্তু পুলিশ ভোলেনি। সেই শুরু। দায়ের হওয়া মামলায় হাজিরা দেওয়ার জন্য ডাকা হত মিঠুকে। তার পর ৫৫ বছর কেটেছে। গত সোমবার পর্যন্ত প্রতি মাসের শুরুতে থানায় হাজিরা দিতে গিয়েছেন তিনি।
শুধু মিঠুই নন, তাঁর মতো আরও ৫৭ জন, যাঁদের বয়স আশির কোটায়, তাঁদের আর থানায় হাজিরা দিতে হবে না বলে জানিয়েছে পুলিশ। প্রায় পাঁচ দশক পর বন্ধ হয়েছে এক এক জনের নামে কেস ডায়েরি! উত্তরপ্রদেশ পুলিশ সম্প্রতি জানিয়েছে, ৮০ থেকে ৯০ বছর বয়সি এমন ১৩০ জনের নাম ছিল তাদের খাতায়। ওই মামলাগুলিতে দেখা যায়, গত কয়েক দশক ওই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আরও কোনও অভিযোগ মেলেনি। তা ছাড়া যে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল, সেগুলোর নির্দিষ্ট প্রমাণ মেলেনি। পঞ্চাশের দশকে দায়ের হওয়া মামলা এখনও চলছে, এমন তথ্যও পান তদন্তকারীরা। তেমনই এক জন ছিলেন আগরার মিঠু।
গত সোমবার ছিল মিঠুর থানায় হাজিরার দিন। প্রতি মাসের মতো এ বারও রেজিস্ট্রার খাতায় সই করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। হঠাৎ এক পুলিশ আধিকারিক তাঁকে বলেন, আগামী মাস থেকে আর হাজিরা দিতে হবে না। বিস্মিত হয়ে যান মিঠু। পুলিশ আধিকারিক আবার বলেন, ‘‘আগামী মাসেও না, আর কখনও না। আপনাকে আর থানায় আসতেই হবে না।’’ তখনও ঘোর কাটেনি নবতিপরের। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘আমাকে তো ডিসেম্বরেও ডাকা হয়েছিল... আসতে হবে তো?’’ এ বার হেসে ফেলেন কর্তব্যরত আধিকারিক।
থানা থেকে বেরিয়ে যেন মুক্তির স্বাদ পেলেন মিঠু। এত দিন বাইরে থাকলেও, মনে মনে কারাবাস করেছেন। এত দিনের অভ্যাস। পরের মাসে আবার ভুলে গিয়ে থানায় চলে আসবেন না তো? নবতিপরের জবাব, ‘‘আমার ছেলেমেয়েরা বড় হয় গেল। ছোট থেকে তারা আমাকে প্রতি মাসে থানায় আসতে দেখছে। ওরা যখন ছোট ছিল, জিজ্ঞেস করত, ‘বাবা তুমি কী করেছ?’ এখন একই প্রশ্ন করে নাতিনাতনিরা। এ ভাবে সময় গড়িয়ে গেল। খারাপ লাগাটাই অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।’’ এক নিঃশ্বাসে কথা বলতে বলতে হাঁপিয়ে ওঠেন। একটু থেমে বৃদ্ধ আবার বলেন, ‘‘আজ আমি ঠিক কতটা খুশি বোঝাতে পারব না। বোঝানোর সাধ্য নেই।’’
এক বার থানার দিকে ফিরে তাকালেন ৯০ পার করা মিঠু। তার পর হাঁটা দিলেন সামনে বাড়ির রাস্তার দিকে।