Same Sex Marriage in Sundarban

‘ভালবাসাটা আসল, কাকে বাসছি সেটা বড় নয়’, সুন্দরবনের দুই তন্বী বিয়ে করলেন মন্দিরে, সাক্ষী গ্রাম

দু’জনে জানতেন, কাজটা সহজ হবে না। সামাজিক বাধা আসবে। আসবে কটাক্ষ, কটূক্তি। তবু তাঁরা একসঙ্গে থাকার লড়াই থেকে সরেননি। শেষমেশ মঙ্গলবার এল সেই শুভদিন। ভয়, সঙ্কোচকে দূরে রেখে সাতপাকে বাঁধা পড়লেন সুন্দরবনের দুই যুবতী।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৫ ১০:৩৪
Share:

সাতপাকে বাঁধা: সুন্দরবনের রাখী নস্কর ও রিয়া সর্দার। —নিজস্ব চিত্র।

‘অন্য ভালবাসার’ সাক্ষী থাকল সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রাম। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজার থানা এলাকার রিয়া সর্দার এবং কুলতলি ব্লকের বকুলতলার বাসিন্দা রাখী নস্কর আবদ্ধ হলেন বিবাহবন্ধনে। স্থানীয় একটি ক্লাব কর্তৃপক্ষের সহায়তায় মঙ্গলবার মন্দিরে বিয়ে করেন দুই নারী। তাঁরা বললেন, ‘‘জীবনের পথে চলতে গেলে ভালবাসাটাই আসল। কাকে ভালবাসছি, সেটা বড় কথা নয়।’’

Advertisement

ছোটবেলাতেই মা-বাবাকে হারিয়েছেন রিয়া। বড় হয়েছেন মাসি-মেসোর কাছে। রাখীর শৈশব কেটেছে একান্নবর্তী পরিবারে। দু’জনেই পেশায় নৃত্যশিল্পী। তাঁদের পরিচয় হয়েছিল ফোনে। সেখান থেকে বন্ধুত্ব এবং প্রেমের পর দুই যুবতী সিদ্ধান্ত নেন একসঙ্গে থাকবেন তাঁরা। দু’জনে জানতেন, কাজটা সহজ হবে না। সামাজিক বাধা আসবে। আসবে কটাক্ষ ও কটূক্তি। তবু তাঁরা একসঙ্গে থাকার লড়াই থেকে সরেননি। শেষমেশ মঙ্গলবার এল সেই শুভদিন। ভয়, সঙ্কোচকে দূরে রেখে সাতপাকে বাঁধা পড়লেন সুন্দরবনের দুই যুবতী।

রিয়া জানান, সম্পর্কের কথা তিনি বাড়িতে জানিয়েছিলেন। কিন্তু রাখীর বাড়ি কেউ মেনে নেননি। তিনিও ঠিক করেন, যাঁকে ভালবাসেন, তাঁকে হারাতে দেবেন না। তাই বাড়ি ছেড়ে রিয়া তাঁর বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। রিয়ার পরিবার অবশ্য তাঁদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলোচনা করে দুই যুবতীর বিয়ের আয়োজন করে স্থানীয় এক মন্দিরে। মঙ্গলবার সাতপাকে ঘুরে, মালাবদল করে নতুন জীবন শুরু করলেন রিয়া ও রাখী।

Advertisement

বিয়ের পর রাখী বলেন, ‘‘আমাদের ২ বছরের সম্পর্ক। ফোনে পরিচয় হয়েছিল। অনেকেই বলেছিল মেয়েতে মেয়েতে আবার সম্পর্ক কী! কিন্তু আমরা ঠিক করেছি, একসঙ্গেই থাকব। সারাজীবন থাকব।’’ নৃত্যশিল্পীর সংযোজন, ‘‘ওর (রিয়ার) বাড়িতে সকলে মেনে নিয়েছেন। আমার বাড়িতে আবার কেউই সম্পর্কটা মেনে নেয়নি। বাবা বলেছে, থাকতে দেবে না। কী আর করা যাবে... ওর বাড়িতেই থাকব।’’ আর রিয়ার কথায়, ‘‘আমরা আমাদের ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়েছি। ভালবাসাটাই তো বড় কথা। মহিলা পুরুষকে ভালবাসবে, পুরুষ মহিলাকে ভালবাসবে— কে বলে দিয়েছে?’’

দুই মেয়ের সিঁদুরদান, সাতপাক আগে দেখেনি সুন্দরবন। লক্ষ্মী মিস্ত্রি নামে স্থানীয় এক প্রৌঢ়া উপস্থিত ছিলেন দুই যুবতীর বিয়েতে। তিনি বলেন, ‘‘ওরা বলল, বিয়ে করবে। আমরা শান্তি সঙ্ঘ মন্দিরে বিয়ে দিয়েছি।’’ জলধর মণ্ডল নামে ক্লাবের এক সদস্যের কথায়, ‘‘ ক্লাবের ছেলেরা দু’জনকে সহায়তা করেছি। এর আগে এমন বিয়ে হয়নি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এমন বিয়ে মোবাইলে দেখেছি। বাস্তবে এই প্রথম দেখলাম।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement