আরুষি-হেমরাজ জোড়া হত্যা মামলার রায়ের প্রথম কয়েক পাতা টাইপ করেছিলেন সিবিআই আদালতের বিচারকের ছেলে। আর তা শুরু হয়েছিল রায়দানের অনেক আগে থেকেই। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এল এই হত্যা মামলা নিয়ে সাংবাদিক অভিরুক সেনের লেখা ‘আরুষি’ বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর।
২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর আরুষির বাবা-মা দীপক ও নূপুর তলোয়ারের যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করেন সিবিআই বিচারক শ্যাম লাল। লেখকের দাবি, এ নিয়ে বই লেখার জন্য নানা বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিচারক তাঁকে জানিয়েছিলেন, আরুষি মামলার রায় লেখাটা সাধারণ বিষয় ছিল না। এই জন্য তিনি তাঁর আইনজীবী ছেলে আশুতোষ যাদবের উপর নির্ভর করেছিলেন।
আশুতোষ লেখককে জানান, রায় টাইপ করার জন্য এক জন ভাল টাইপিস্ট বা স্টেনোর দরকার ছিল। কারণ এই রায়টির গুরুত্ব অন্যান্য মামলার রায়ের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু গাজিয়াবাদে ইংরেজি জানা টাইপিস্ট সহজলভ্য নয়। তাই বিশেষ ব্যবস্থা করে তিনি এই রায়ের ভূমিকা হিসেবে প্রথম দশ পাতা ২৫ নভেম্বরের মাসখানেক আগে থেকেই টাইপ করে রেখেছিলেন। তলোয়ারদের আইনজীবী তাঁর শেষ পর্যায়ের সওয়াল শুরু করেছিলেন ২৪ অক্টোবর। দু’সপ্তাহ ধরে চলেছিল সেই সওয়াল-পর্বে তত দিনে কিন্তু রায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রথম দশটি পাতা লেখা হয়ে গিয়েছে। এটা কী করে সম্ভব হল, প্রশ্ন তুলেছেন বইয়ের লেখক। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, এই সব কথা বলার সময়ে আশুতোষের চোখেমুখে অস্বস্তি ধরা পড়ছিল। এবং কথাগুলো শোনামাত্র আশুতোষের বাবা সিবিআই বিচারক শ্যাম লাল বলে ওঠেন, ‘‘না না, এক মাস নয়, আশুতোষ টাইপ শুরু করেছিল দিন পনেরো আগে।’’
রায়ের প্রথম অংশ এ ভাবে বিচারকের ছেলেকে দিয়ে আগেভাগে লিখিয়ে রাখার ফলে মামলার নিরপেক্ষতা এবং গোপনীয়তা কতটা রক্ষিত হয়েছে, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
আরও কিছু নতুন তথ্য ওই বইয়ে উঠে এসেছে রাজেশ তলোয়ারের ডায়েরি থেকে। জেলে থাকার সময় ৩ ডিসেম্বর রাজেশ লিখেছেন, ‘‘বুঝতে পারছি না আমাদের সঙ্গে কী করে এমনটা হল। এমনকী প্রিয় আরুকেও বাঁচাতে পারলাম না আমি। ওকে ছাড়া বাঁচা অসম্ভব।’’ আবার এর ক’দিন পরেই তিনি লেখেন, ‘‘আরুর কথা ভীষণ মনে পড়ছে। আমাদের এ অবস্থায় দেখলে ও যে কী ভাবত! কেউ কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি। আমাদের শুধু একটাই দোষ, আমাদের জবাব কাউকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।’’