National News

‘র‌্যাঞ্চো’র ভূমিকায় বিপিন, ট্রেনেই প্রসব করাতে সাহায্য মেডিক্যাল ছাত্রের

র‌্যাঞ্চোরদাস শামলদাস চাঁচোড় হাজির? র‌্যাঞ্চো হাজির? না, ছুটন্ত ট্রেনের কামরায় দিল্লির ইম্পেরিয়াল কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রটিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার বদলে পাওয়া গিয়েছে বিপিন খাডসেকে! এক প্রবল দুর্যোগের রাতে রিল-লাইফের র‌্যাঞ্চো আমির খান তারই কলেজের প্রিন্সিপ্যালের মেয়ের সন্তান প্রসব করিয়েছিলেন তাঁরই প্রণয়ী, প্রিন্সিপ্যালের আর এক মেয়ে, চিকিৎসক পিয়ার পরামর্শ মেনে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৭ ১৬:৪১
Share:

ট্রেনে ‘র‌্যাঞ্চো’র ভূমিকায় বিপিন। ছবি: সংগৃহীত।

র‌্যাঞ্চোরদাস শামলদাস চাঁচোড় হাজির? র‌্যাঞ্চো হাজির?

Advertisement

না, ছুটন্ত ট্রেনের কামরায় দিল্লির ইম্পেরিয়াল কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রটিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার বদলে পাওয়া গিয়েছে বিপিন খাডসেকে! এক প্রবল দুর্যোগের রাতে রিল-লাইফের র‌্যাঞ্চো আমির খান তারই কলেজের প্রিন্সিপ্যালের মেয়ের সন্তান প্রসব করিয়েছিলেন তাঁরই প্রণয়ী, প্রিন্সিপ্যালের আর এক মেয়ে, চিকিৎসক পিয়ার পরামর্শ মেনে। মাধ্যম ছিল ল্যাপটপের ওয়েব ক্যামেরা!

কিন্তু রিল-লাইফের র‌্যাঞ্চোর সঙ্গে রিয়্যাল লাইফের বিপিনের মিল কোথায়? হঠাৎ তাঁর প্রসঙ্গ কেন?

Advertisement

আমদাবাদ-পুরী এক্সপ্রেসে নাগপুরের দিকে রওনা হয়েছিলেন বিপিন খাডসে। বছর চব্বিশের বিপিন নাগপুরেরই একটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। তবে নাগপুরে পৌঁছনোর আগেই যে অভিজ্ঞতা হল তা বোধহয় তাঁর সারা জীবনের সঞ্চয়! গত শুক্রবার ওই ট্রেনেই সফরকারী এক যুবতীর সন্তান প্রসব করালেন বিপিন।

বিপিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ট্রেন তখন নাগপুর থেকে আর মাত্র তিরিশ কিলোমিটার দূরে। আচমকাই কেউ চেন টেনে তা থামিয়ে দেয়। তিনি যে কামরায় ছিলেন, সেখানে তখন চিকিৎসকের খোঁজ করছিলেন টিকিট কালেক্টর-সহ এক জন নিরাপত্তারক্ষী। তাঁদের কাছ থেকেই বিপিন জানতে পারেন, ট্রেনের অন্য কামরায় প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন এক যুবতী। অবিলম্বে তাঁর প্রসব করানো প্রয়োজন। তাই খোঁজ চলছে চিকিৎসকের। পরে বিপিন জানতে পারেন, ট্রেনের চেন টেনেছিলেন ওই যুবতীর আত্মীয়েরাই। প্রথমটায় কোনও সাড়া দেননি বিপিন। তিনি মনে করেছিলেন, ট্রেনে নিশ্চয় কোনও অভিজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন যিনি প্রসব করাতে এগিয়ে আসবেন। কিন্তু, তেমন কেউ ট্রেন ছিলেন না। বিপিন বলেন, “এর পর দ্বিতীয় বার যখন ওঁরা একই অনুরোধ নিয়ে এলেন, তখন আমি সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাই।”

আরও পড়ুন

মাঝ আকাশে ৪২ হাজার ফুট উপরেই জন্মাল ‘রাজকুমারী’

ট্রেনেই ভূমিষ্ঠ হল চিত্রলেখার সন্তান। ছবি: সংগৃহীত।

বিপিনের সঙ্গেই ওই ট্রেনে সফর করছিলেন বছর চব্বিশের অন্তঃসত্ত্বা চিত্রলেখা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্বামী-সহ অন্য আত্মীয়েরা। আমদাবাদে দিনমজুরির কাজ করেন চিত্রলেখা ও তাঁর স্বামী। সেখান থেকেই যাচ্ছিলেন ছত্তীসগঢ়ের রাইপুরে। ট্রেনেই প্রসববেদনা ওঠে চিত্রলেখার। বিপিন গিয়ে দেখেন, প্রচণ্ড ব্যথায় কাতরাচ্ছেন চিত্রলেখা। রক্তে ভেসে যাচ্ছে তাঁর চারপাশ। বিপিন তাঁকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলে সহযাত্রীরা সে সময়ে ট্রেনের কামরা খালি করিয়ে দেন। ওই কামরাটিই হয়ে ওঠে অস্থায়ী ডেলিভারি রুম। কিন্তু, শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ করলেও প্রসব করানোর অভিজ্ঞতা ছিল না বিপিনের। এর মধ্যে তিনি দেখেন, চিত্রলেখার গর্ভের সন্তানের মাথা নয়, কাঁধের অংশ বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। সঙ্গে সঙ্গে সেই ছবি তুলে তাঁর শিক্ষিকা ও চিকিৎসকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠিয়ে দেন বিপিন। এক জন সিনিয়র রেসিডেন্ট চিকিৎসক শিখা মালিক বিপিনকে হোয়াটসঅ্যাপেই প্রসব করানোর বিষয়ে নির্দেশ পাঠাতে থাকেন। বিপিন বলেন, “রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে বোতলের ঠান্ডা জল ব্যবহার করেছিলাম। ওই যুবতীর অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইড তখন পুরোপুরি শুকিয়ে গিয়েছে।” বিপিন জানিয়েছেন, ট্রেনে সফরকারী এক জন আয়াও তাঁকে প্রসবের কাজে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। শেষমেশ চিত্রলেখার সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। তত ক্ষণে ট্রেন পৌঁছে গিয়েছে নাগপুরে। সেখানেই রেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় মা ও সদ্যোজাতকে।

গোটা ঘটনার পর বিপিন জানিয়েছেন, প্রসব কী ভাবে করাতে হয় তা প্রত্যেক চিকিৎসকেরই জানা উচিত। কে জানে তা কখন কার উপকারে এসে যায়!

কে জানে, কখন কাকে র‌্যাঞ্চোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন