অকালবর্ষণে ধস নেমেছে পাহাড়ে। সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এক শিশুর নিথর দেহ। সোমবার পশ্চিম শ্রীনগরে। ছবি: পিটিআই।
আবার ঘর ছাড়েতে হল।
সাত মাস আগের ক্ষতটা এখনও সারেনি। রাজবাগে আমার একতলা বাড়ি ভেসে গিয়েছিল সেপ্টেম্বরের বন্যায়। শ্যাওলা পরা দেওয়ালগুলোয় এখনও লেগে আছে সেই ভয়াবহ স্মৃতি। শনিবার রাতে বৃষ্টি নামতেই ছ্যাঁত করে উঠেছিল বুক। ঘুরপাক খাচ্ছিল প্রশ্নটা— ফের ঘরছাড়া হতে হবে না তো?
সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। স্ত্রী আর দুই সন্তানের হাত ধরে বেরিয়ে পড়লাম ঘর ছেড়ে। গন্তব্য সনৎনগর। এক আত্মীয় আশ্রয় দিয়েছেন। আপাতত সেটাই ঠিকানা। জায়গাটার আরও একটা নাম আছে। ‘আইল্যান্ড অব হোপ’। গত বছর গোটা জম্মু-কাশ্মীর ডুবে গেলেও এই জায়গাটা অক্ষত ছিল। অপেক্ষাকৃত উঁচু বলে এ বারও হয়তো বেঁচে যাবে।
বাড়ি ছাড়ার পথেই দেখলাম, ফুলে ফেঁপে উঠছে ঝিলম। কালই হাঁটু ছুঁইছুঁই জল ছিল বাড়ির সামনের রাস্তাটায়। এখন সেটা আরও বেড়েছে। ভাগ্যিস ঝুঁকি না নিয়ে পড়শিদের দেখাদেখি বাক্সপ্যাঁটরা বাঁধতে শুরু করে দিয়েছিলাম। গত বার সব হারিয়েছি। একটা কিচ্ছু বাঁচেনি।
পড়শিদের বেশির ভাগেরই বাড়ি দোতলা। তাই যেটুকু না নিলেই নয়, ওঁরা সেটুকুই সঙ্গে নিয়েছেন। বাকি আসবাবপত্র থেকে জামাকাপড়, বাসন সবই তুলে দিয়েছেন বাড়ির উপরের তলায়। আমার একতলা বাড়িতে সে সুযোগও নেই। গত বার বন্যায় সব হারানোর পর সরকারের তরফে ৩৭০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল। ওতে আর কী হয়! মনকে শুধুই বুঝিয়ে চলেছি, এ বারে হয়তো আর ও রকম কিছু হবে না। জানি, কিছুই হাতে নেই।
দু’দিনেই এই অবস্থা হলে আরও তিন-চার দিনের বৃষ্টিতে কী হবে! আবহাওয়া দফতর তো পূর্বাভাস দিয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বৃষ্টি চলবে। যদিও বৃষ্টি এখন কিছুটা ধরেছে। এর মধ্যেই কানে আসছে টুকরো টুকরো খবর। আত্মীয়ের বাড়িতে বসে ল্যাপটপে প্রতিবেদনটা লিখতে লিখতেই ফোন পেলাম, —বদগাম জেলার লাইদেন গ্রামে ধসে চাপা পড়েছে কয়েকটা বাড়ি। প্রশাসনের আশঙ্কা, অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আপাতত উদ্ধার করা গিয়েছে ছ’জনের দেহ।
প্রশাসন বন্যা-বিপর্যয় ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্র-রাজ্য দু’পক্ষই নেমেছে উদ্ধারকাজে। চলে এসেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও (এনডিআরএফ)। শুনেছি অনন্তনাগের সঙ্গম ও রামমুন্সি বাগে, বিপদসীমার উপরে বইছে ঝিলম। নদীর পার ঘেঁষা লালচকের দোকানিরা জিনিস সরাতে শুরু করে দিয়েছেন। খবর পেলাম শ্রীনগরের বন্যাবিধ্বস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মুফতি সইদ। তিনি ৩২ কোটি টাকা সাহায্যও ঘোষণা করেছেন।
ফের উঁকি মারল পুরনো স্মৃতি। গত বারও শুনেছিলাম, মুখ্যমন্ত্রী রাজবাগ ঘুরে গিয়ে সমস্ত সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন। আর তার পর..., সেই আমি দাঁড়িয়ে আধভাঙা বাড়িটার সামনে। হাতে নিয়ে ৩৭০০ টাকা।