মেঘ না চাইতেই জল, পারবেন কি রাহুল

এ যেন পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা। কিছু দিন আগেও রাহুল গাঁধীর অবস্থা ছিল কংগ্রেসের দিশাহারা সেনাপতির মতো। বাজেট অধিবেশন শুরু হল, তিনি চলে গেলেন ছুটিতে। তাঁর সেই দু’মাসের ‘অজ্ঞাতবাস’ ঘিরে রাজনীতির আড্ডায় জল্পনা তো বটেই, হাসিমস্করাও কম হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৫ ০০:১৭
Share:

এ যেন পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা।

Advertisement

কিছু দিন আগেও রাহুল গাঁধীর অবস্থা ছিল কংগ্রেসের দিশাহারা সেনাপতির মতো। বাজেট অধিবেশন শুরু হল, তিনি চলে গেলেন ছুটিতে। তাঁর সেই দু’মাসের ‘অজ্ঞাতবাস’ ঘিরে রাজনীতির আড্ডায় জল্পনা তো বটেই, হাসিমস্করাও কম হয়নি।

ছুটি থেকে ফিরে নতুন উদ্যমে মাঠে নেমেছিলেন রাহুল। কংগ্রেসের নেতারা বলছিলেন, এ হল ‘রাহুল ২.০’। মোদী সরকারকে নিশানা করে একের পর এক তির ছুড়তে শুরু করেন কংগ্রেসের সেনাপতি। নরেন্দ্র মোদী একসময় ইউপিএ সরকারকে ‘মা-বেটে কি সরকার’ বলে কটাক্ষ করতেন। রাহুল ‘স্যুট-বুট কি সরকার’ বলে তার জবাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। আক্রমণের কোনওটা ‘হিট’ হয়েছে, বেশ কিছু ‘মিস’-ও হয়েছে।

Advertisement

এর মধ্যেই মেঘ না চাইতেই জলের মতো সুষমা স্বরাজ-বসুন্ধরা রাজেকে ঘিরে বিতর্ক রাহুলের সামনে নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে। গত এক বছরে মোদী সরকার বা বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তেমন কোনও অনৈতিকতা বা দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে পারেনি কংগ্রেস। কিন্তু সুষমা-বসুন্ধরা, তার পরে স্মৃতি-পঙ্কজাদের জড়িয়ে বিতর্ক শুরু হতেই বিজেপিকে চাপে ফেলার যাবতীয় অস্ত্র এখন কংগ্রেসের হাতে মজুত। মন্ত্রীদের ইস্তফার দাবিতে রাহুল কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আক্রমণে নামিয়েছেন। ইস্তফার দাবিতে তিনি নিজেও সরব। বসুন্ধরা সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাতে সচিন পায়লট রাজস্থানের মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন। ধাপে ধাপে সুর চড়িয়ে সংসদের বাদল অধিবেশন পর্যন্ত মোদী সরকারের উপর চাপ বজায় রাখার রণকৌশল নিয়েছেন রাহুল।

প্রশ্ন হল, রাহুল কি এই পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা সুযোগকে ষোল আনা কাজে লাগাতে পারবেন?

চলতি মাসেই ৪৫-এ পা দিয়েছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত রাহুলের রাজনৈতিক জীবনে চোখধাঁধানো সাফল্য কিছু নেই। কংগ্রেসের নেতারা যতই রাহুলকে তুলে ধরার লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে যান, ছোটখাটো কিছু নির্বাচন ছাড়া রাহুল কোনও বড় জয় এনে দিতে পারেননি। কংগ্রেসের নেতারা বারবার প্রচার করেছেন, রাহুলের হাতে দায়িত্ব এলেই কংগ্রেসের সাফল্য আসতে শুরু করবে। কিন্তু হয়েছে উল্টো। প্রথমে একের পর এক বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। শেষে লোকসভা নির্বাচনে রাহুলকে সামনে রেখে লড়তে গিয়েও একেবারে ধরাশায়ী হয় কংগ্রেস। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটের মতো লোকসভায় বিরোধী দলনেতার আসনও কংগ্রেসকে দেওয়া হয়নি।

লোকসভা ভোটের পর দলের নেতা-কর্মীদের মনোবল একেবারে তলানিতে চলে গিয়েছিল। কংগ্রেসের নেতারা মনে করছেন, সুষমা-বসুন্ধরার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই মনোবলকে চাঙ্গা করার জন্য রাহুলের সামনে একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছে। একে কাজে লাগানো কংগ্রেসের জন্য যতটা প্রয়োজনের, রাহুলের জন্যও ঠিক ততটা জরুরি।

কংগ্রেসের জন্য আশার খবর, এক দিকে যেমন নিয়মিত ‘স্যুট-বুট কি সরকার’ বা ‘মোদীর পিছনে মোদী’-র মতো ‘ক্যাচলাইন’ দিচ্ছেন রাহুল, তেমনই সংসদে বক্তৃতা করার অনীহাও আর তাঁর মধ্যে নেই। বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে ছোটখাটো বিষয় নিয়েও সরব হয়েছেন রাহুল। কখনও কৃষক, কখনও মৎস্যজীবীদের সমস্যা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। মোদী সরকারকে বড়লোকদের সরকার, শিল্পপতিদের সরকার, গরিব-বিরোধী বলে তুলে ধরে আমজনতার সমর্থন পাওয়ার রণকৌশলও স্পষ্ট। জমি বিল নিয়েও সরকারের পালের হাওয়া কেড়ে নিতে অনেকটাই সফল হয়েছেন তিনি। আবার ‘নেট নিউট্রালিটি’ নিয়ে সরব হয়ে শহুরে মানুষের মন জয়ের চেষ্টা করতে চেয়েছেন। টুইটারেও রাহুলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, ‘দের আয়ে, দুরুস্ত আয়ে।’

সংশয় অবশ্য থাকছে। কারণ দু’টি। শুধু দলের বাইরে নয়, কংগ্রেসের অন্দরমহলেও রাহুলকে বৃদ্ধতন্ত্র-র বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে। ‘রাহুলকে দিয়ে হবে না’ এমন প্রচার সুযোগ পেলেই ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাহুল এই ঘরোয়া লড়াইয়ে কতখানি সফল হবেন, তার থেকেও বড় সংশয়, রাহুল নিজেও কিছু দিনের মধ্যে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন না তো? কারণ, অতীতে রাহুল ভাট্টা-পারসৌল বা নিয়ামগিরিতে গরিবদের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন। কিন্তু কিছু দিন পরে হঠাৎই উধাও হয়ে যান। ফলে এ বারও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তির যাবতীয় সংশয় বহাল থাকছে। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা বলছেন, ধৈর্য্য ধরে রাহুল টানা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন কি না, তার উপরেই সব কিছু নির্ভর করবে। বোঝা যাবে, রাহুল এই পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনাকে কাজে লাগাতে পারছেন কি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন