National news

সরকারি কয়েক লাখ টাকা ফিরিয়ে গ্রামবাসীদের চাঁদাতেই ঘরে ঘরে শৌচালয়!

না! কোনও জোরাজুরিতে নয়। একেবারেই স্বেচ্ছায় এবং সাগ্রহে শৌচালয় গড়ার ওই সরকারি অনুদান তাঁরা ফিরিয়ে দিয়েছেন। তা হলে শৌচালয় তৈরি হবে কী ভাবে? হবে না, ইতিমধ্যেই প্রশাসনকে অবাক করে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই তা তৈরি হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৭ ১৪:১২
Share:

প্রতীকী ছবি।

টাকার অঙ্কটা নেহাত কম নয়। সাড়ে ১৭ লাখ! যার গোটাটাই সটান ফিরিয়ে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। একটা কড়িও তাঁরা নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। না! কোনও জোরাজুরিতে নয়। একেবারেই স্বেচ্ছায় এবং সাগ্রহে শৌচালয় গড়ার ওই সরকারি অনুদান তাঁরা ফিরিয়ে দিয়েছেন।

Advertisement

তা হলে শৌচালয় তৈরি হবে কী ভাবে? হবে না, ইতিমধ্যেই প্রশাসনকে অবাক করে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই তা তৈরি হয়ে গিয়েছে। গ্রামের প্রায় ৫০০টি বাড়িতে ওই শৌচালয় তৈরি হয়েছে গ্রামবাসীদের চাঁদা তোলা টাকাতেই। যা দেখে প্রশাসন খুশি হয়ে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম মুক্ত গ্রামের তকমা দিয়েছে উত্তরপ্রদেশের বিজনৌরের মুবারকপুর কলা গ্রামকে। গতকাল শুক্রবারই ওই ঘোষণা করা হয়েছে।

কিন্তু, টাকা ফেরত দেওয়ার কারণ কী?

Advertisement

গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, এখন রমজান মাস চলছে। এই সময় কোনও ভাল কাজের জন্য অর্থ সাহায্য করা পবিত্র ব্যাপার। সে কারণেই সরকারি ওই অনুদান ফিরিয়ে শৌচাগার গড়ার মতো ভাল কাজে তাঁরা এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু, প্রায় ৫০০টি বাড়িতে ওই পরিকাঠামো গড়ে তোলায় তো বিপুল খরচ। সে ক্ষেত্রে সরকারি ওই সাড়ে ১৭ লাখ টাকা নিলে তো তাঁদের সুবিধাই হতো! গ্রামবাসীদের মত, মাঠেঘাটে না গিয়ে বাড়িতে শৌচকর্ম করাটাই স্বাস্থ্যসম্মত। আর সেই কাজে সরকার নয়, তাঁদের আগ্রহী হওয়াটাই প্রাথমিক কর্তব্য। রমজান মাসে তাই সেই ‘ভাল’ কাজটাই করে দেখিয়েছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: রোগীকে ২৫ বছর চিনি, তাই অত রাতেও ছুটে এসেছিলাম: ডাক্তার

প্রশাসন সূত্রে খবর, বিজনৌরের হালদাওর ব্লকের মুবারকপুর কলা গ্রামে মোট ৬৬১টি পরিবারের বাস। জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার। মূলত মুসলিম অধ্যুষিত ওই গ্রাম। গ্রামের মাত্র ১৪৬টি পরিবার বাড়ির শৌচালয় ব্যবহার করত। বাকিরা খোলা জায়গাতেই শৌচকর্ম করতেন। মাস দুয়েক আগে গ্রামবাসীরা সকলে মিলে এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেন, তাঁদের গ্রামকে ‘খোলা জায়গায় শৌচকর্ম মুক্ত’ করতে হবে। সেই উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসনকে চিঠি লেখেন গ্রাম প্রধান কিশওয়ার জানহা। এর পরেই জেলা প্রশাসনের লোকজন গ্রামে আসেন। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা ফিরে গিয়ে ওই টাকা অনুমোদন করেন। পঞ্চায়েত প্রধান এবং গ্রাম সেক্রেটারির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ওই টাকা দেওয়া হয়। বলা হয়, গ্রামবাসীদের ওই টাকা ভাগ করে দিতে, যাতে তাঁরা নিজেদের বাড়িতে শৌচাগার বানিয়ে নিতে পারেন।

টাকা মেলার পর ফের গ্রামের মানুষ বৈঠকে বসেন। আর সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় সরকারি টাকায় নয়, নিজেদের পয়সাতেই তাঁরা শৌচাগার গড়ে তুলবেন। জানিয়ে দেন, এটা পবিত্র রমজান মাস। এই সময় ভাল কাজের জন্য তাঁদের অর্থ সাহায্য করা উচিত, সাহায্য নেওয়া নয়। আর ওই অর্থেই শৌচাগার বানানোর মতো ভাল কাজ করা হবে। পাশাপাশি স্পষ্ট ভাবে জানানো হয়, বাড়িতে শৌচাগার বানানোটা তাঁদের কর্তব্য। কাজেই সকলে মিলেই এটা করা হবে। সরকারি সাহায্য কোনও মতেই নেওয়া হবে না। কিন্তু, সকলের তো অত টাকা চাঁদা দেওয়ার ক্ষমতাই নেই। তখন ঠিক হয়, যাঁদের সামর্থ নেই তাঁরা শ্রম দেবেন। এর পরেই বাকি বাড়িগুলিতে শৌচাগার বানানো হয়।

জেলা প্রশাসনের কর্তা তথা চিফ ডেভেলপমেন্ট অফিসার (সিডিও) ইন্দ্রমণি ত্রিপাঠি জানিয়েছেন, শুধু উত্তরপ্রদেশে নয় গোটা দেশে এমন নজির নেই বোধহয়। সরকারি টাকা ফিরিয়ে দিয়ে নিজেদের উদ্যোগে গ্রামবাসীদের টাকায় শৌচাগার তৈরির এমন অভিনব উদ্যোগকে তিনি কুর্নিশযোগ্য মনে করেন। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, এটা গোটা দেশের কাছে একটা উদাহরণ হয়ে থাকল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন