জম্মু ও কাশ্মীরের বগলিহার বাঁধ। —ফাইল চিত্র।
জলধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য কাশ্মীরের দু’টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তথা বাঁধের জলাধার পরিষ্কার করাচ্ছে ভারত। সরকারের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে এমনটাই জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। প্রকাশ্যে অবশ্য এই বিষয়ে কিছু জানায়নি ভারত। তবে মনে করা হচ্ছে, সিন্ধুর জল থেকে পাকিস্তানকে ‘বঞ্চিত’ করার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ করছে নয়াদিল্লি।
এত দিন সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি বলবৎ থাকায় বাঁধের জলাধার সংস্কারের ক্ষেত্রে একাধিক বাধা ছিল। পাকিস্তানের অনুমতি ব্যতীত এই কাজ করা সম্ভবও ছিল না। কিন্তু পহেলগাঁও কাণ্ডের পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ করেছে ভারত। তার মধ্যে অন্যতম হল ১৯৬০ সালে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে দেওয়া।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, সিন্ধুর দুই উপনদী চন্দ্রভাগা এবং বিতস্তার উপর নির্মিত সালাল এবং বগলিহার বাঁধের জলাধার পরিষ্কারের কাজ শুরু হয় গত বৃহস্পতিবার। শনিবার পর্যন্ত কাজ চলেছে। প্রতিবেদন অনুসারে, কেবল ওই দুই বাঁধেই নয়, জম্মু ও কাশ্মীরের আরও বেশ কয়েকটি বাঁধে এই সংস্কারের কাজ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, দু’টি বাঁধের একটি তৈরি হয় ১৯৮৭ সালে। আর একটি ২০০৮-২০০৯ সালে। কিন্তু এই প্রথম বাঁধ দু’টির জলাধার পরিষ্কার করা হয়েছে। চুক্তি স্থগিতের ফলে শর্তগুলি কার্যত গুরুত্বহীন হয়ে যাওয়ায় সংস্কারের কাজ চলার কথা পাকিস্তানকে ভারত জানায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে।
কোনও বাঁধের জলাধার পরিষ্কার করা হলে সব জল বার করে ফেলতে হয়। এ ক্ষেত্রেও তা-ই করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে রয়টার্স। সেই কারণে কাশ্মীরের নদী উপকূলবর্তী এলাকায় বসবাসকারী সকলকে সাবধান করে দেওয়া হয়। সরকারের একটি সূত্র অবশ্য সংবাদ সংস্থাটিকে জানিয়েছে, জলধারণ ক্ষমতা, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধির স্বার্থেই এই পদক্ষেপ।
যদিও ভারতের এই পদক্ষেপে পাকিস্তানের উপর তাৎক্ষণিক কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। তবে ভারত যদি সিন্ধু অববাহিকায় থাকা সব নদীবাঁধেই এই সংস্কারের কাজ চালায়, তবে তার প্রভাব পড়তে পারে সীমান্তের ও পারে। কারণ সেচ, জলবিদ্যুতের জন্য সিন্ধুর জলের উপর নির্ভরশীল পাকিস্তান। রয়টার্সের প্রতিবেদনে কয়েক জন সরকারি আধিকারিককে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে, সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি অনুসারে, সিন্ধুর পশ্চিমবাহিনী (পাকিস্তানমুখী) উপনদীগুলির উপর অধিক মাত্রায় জলধারণ করা যায়, এমন বাঁধ নির্মাণ করতে পারবে না ভারত। সেই কারণে সিন্ধুর জল আটকে দেওয়ার মতো পরিকাঠামো এখনও পর্যন্ত ভারতের নেই। তবে পাকিস্তানে সিন্ধুর স্বাভাবিক প্রবাহকে রুখতে জলচুক্তি স্থগিত করে দেওয়া ভারত বড় বাঁধ নির্মাণ করে কি না— তা-ই এখন দেখার।