হাওড়া রাজধানী এক্সপ্রেস হোক বা মুম্বই দুরন্ত, দেরির প্রতিযোগিতায় কেউ এখন কারও থেকে পিছিয়ে নেই! এবং রেল মহলেরই একাংশ জানাচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে এই সমস্যা মেটার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। অর্থাৎ গন্তব্যে দেরি করে পৌঁছনোটাই ট্রেনযাত্রীদের ভবিতব্য।
কেন? রেলের বর্তমান ও প্রাক্তন কর্তাদের অনেকেই বলছেন, সুষম খাদ্য আর ভিটামিনের অভাবে মানুষের শরীরে রোগ বাসা বাঁধে। একই ভাবে রেলে দেরির ব্যাধি জাঁকিয়ে বসেছে পরিকাঠামোর ঘাটতিতে। পরিকাঠামো না-বাড়ালে ট্রেনের গতি বাড়ানো যাবে না। ট্রেনের ভিড়ে লাইনগুলির অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে, নির্দিষ্ট ন্যূনতম গতি মেনে চলা তো দূরের কথা, তার চেয়েও গতি কমিয়ে চলতে বাধ্য হচ্ছে ট্রেন। যেখানে-সেখানে থেমেও যাচ্ছে হুটহাট। আর তাতেই হচ্ছে দেরি। পরিকাঠামো বাড়ালে তবেই এই দেরির দাপট কমবে বলে জানাচ্ছেন পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার এস এন অগ্রবাল।
রেল শিবির জানাচ্ছে, দু’টি মূল ক্ষেত্রেই পরিকাঠামোর ঘাটতি ব্যাপক। প্রথমত, কর্মী-পরিকাঠামো। দ্বিতীয়ত, স্থানগত পরিকাঠামো। কর্তা-কর্মীর অভাব কতটা প্রকট, অগ্রবাল নিজেই তার বড় উদাহরণ। পূর্ব রেলে পৃথক জেনারেল ম্যানেজার নেই অনেক দিন ধরে। শেষ যিনি জিএম ছিলেন, তিনি চলে গিয়েছেন রেল বোর্ডের সদস্য-পদে। তাঁর জায়গায় নতুন স্থায়ী জেনারেল ম্যানেজার না-আসায় পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেল দু’টি জোনে এখন জেনারেল ম্যানেজার এক জনই। এস এন অগ্রবাল। এটা যদি কর্তা-স্তরের অবস্থা হয়, সাধারণ কর্মী-ঘাটতির ছবিটা তার থেকে অনেক খারাপ বলে জানাচ্ছেন রেলের কর্মী-অফিসারেরা।
স্থানগত পরিকাঠামোর সমস্যা সব থেকে বেশি ঘোরালো। রেলের নিজস্ব জায়গা কম নেই। কিন্তু তার বেশির ভাগই জবরদখল হয়ে গিয়েছে। অগ্রবালের অভিযোগ, পূর্ব রেলে জবরদখলের সমস্যা সব থেকে বেশি। এতটাই যে, এই রেলের সেফটি অফিসার প্রমোদ কুমার যাত্রী-নিরাপত্তার স্বার্থে ট্রেন চালানোর অনুমতিই তুলে নিতে চাইছেন! জবরদখলের জট কাটাতে পারে রাজ্য সরকারই। তাই পূর্ব রেল শীঘ্রই এই বিষয়ে রাজ্যের সঙ্গে বৈঠকে বসবে বলে জানান অগ্রবাল।
বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্ন ছিল, প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের পরেও ট্রেন এত দেরিতে চলছে কেন? ‘‘বিভিন্ন জোনের প্রতিটি লাইন এখন সম্পৃক্ত অর্থাৎ তাদের সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার হয়ে গিয়েছে। নতুন পরিকাঠামো তৈরি না-হওয়ায় ট্রেন চালানোর জায়গা মিলছে না। তাই সময়ে ট্রেন চলছে না,’’ জবাব দেন অগ্রবাল। কেন জায়গার অভাব হচ্ছে? রেলকর্তাদের একাংশ বলছেন, কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক মুনাফা লুটতে ট্রেন বাড়ানো হয়েছে। ফলে কোথাও আর লাইন ফাঁকা নেই। তাতেই সমস্যা হচ্ছে।
জিএম জানান, পূর্ব রেলের এখন ট্রেন চালানোর জন্য লাইনের ক্ষমতা যদি ১০০ শতাংশ হয়, ট্রেন চলছে ১৪০ শতাংশ। অর্থাৎ ক্ষমতার চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি। একই ভাবে দক্ষিণ-পূর্ব রেলকেও ক্ষমতার বাইরে গিয়ে আরও ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত ট্রেন চালাতে হচ্ছে। অতএব দেরি।
সমস্যা মিটবে কী ভাবে?
অগ্রবাল জানান, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বিভিন্ন জায়গায় অতিরিক্ত লাইন বানানোর কাজ শুরু হয়েছে। তৃতীয় লাইনের কাজ শেষ হয়েছে হাওড়া-খড়্গপুর শাখায়। হাওড়া-টিকিয়াপাড়া তৃতীয় লাইন পাতার কাজও চলছে। হাওড়া-খড়্গপুরের মধ্যে চতুর্থ লাইনের সমীক্ষা হচ্ছে। একই ভাবে পূর্ব রেলের উত্তরবঙ্গমুখী ট্রেনগুলিকে সময়মতো চালানোর জন্য আলাদা রুটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিদ্যুদয়নের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় পরিকাঠামো বাড়ানোর কাজও চালু হয়েছে। এই সব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ট্রেন অনেকটাই গতি ফিরে পাবে বলে অগ্রবালের আশা।