দিল্লিতে বিস্ফোরণের তদন্তে নেমেছে এনআইএ। — ফাইল চিত্র।
দিল্লি বিস্ফোরণকাণ্ডের অন্যতম মূল চক্রী চিকিৎসক উমর মহম্মদ ওরফে উমর-উন-নবির একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানে তিনি আত্মঘাতী বোমারুদের নিয়ে কিছু কথা বলেছেন। তদন্তকারীদের একটি সূত্র বলছে, নিজের ভাইকে যে মোবাইল দিয়ে এসেছিলেন উমর, তাতেই রয়েছে এই ভিডিয়ো। ওই সূত্রের আরও দাবি, দিল্লি বিস্ফোরণের কয়েক দিন আগে, চলতি মাসের শুরুতে জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় নিজের বাড়িতে গিয়েছিলেন উমর।
১০ নভেম্বর দিল্লির লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণ হয়। তাতে প্রাণ হারান ১৩ জন। প্রাণ হারান উমরও। তাঁর একটি ভিডিয়ো প্রকাশিত হয়েছে। তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, বিস্ফোরণের আগে ওই ভিডিয়োটি করেছিলেন তিনি। নভেম্বরের শুরুতে তিনি পুলওয়ামার বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে যান ফরিদাবাদের আল-ফালাহ্ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানেই কর্মরত ছিলেন উমর। কর্মস্থলে যাওয়ার আগে নিজের দু’টি ফোনের মধ্যে একটি দিয়েছিলেন ভাইকে।
এর পরে উমরের ভাই তাঁর সহকর্মীদের এক এক করে গ্রেফতার হওয়ার খবর পান। তদন্তকারীদের একটা সূত্র বলছে, উমরের ভাই জানতে পারেন, ৭ নভেম্বর শ্রীনগরে জঙ্গি গোষ্ঠীর পোস্টার সাঁটাতে গিয়ে ধরা পড়েছেন চিকিৎসক আদিল আহমেদ রাথের। এই আদিল আল-ফালাহ্তে উমরের সহকর্মী ছিলেন। এর পরে জানতে পারেন, ৯ নভেম্বর ফরিদাবাদ থেকে গ্রেফতার হয়েছেন চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিল। তার পরে শাহিন শাহিদের গ্রেফতারির খবর জানতে পারেন। সূত্রের খবর, এর পরেই ভয়ে বাড়ির কাছে একটি পুকুরে উমরের মোবাইলটি ফেলে দেন ভাই।
তদন্তকারীরা উমরের দু’টি ফোনে আড়ি পাতেন। দেখেন দু’টিই বন্ধ রয়েছে। একটি শেষ বার দিল্লিতে, দ্বিতীয়টি পুলওয়ামায় ছিল বলে জানতে পারেন তাঁরা। এর পরেই তদন্তকারীরা পুলওয়ামায় উমরের বাড়িতে যান। সূত্রের খবর, তাঁদের কাছে উমরের ভাই ফোনের কথা স্বীকার করেছেন। তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, পুকুর থেকে উমরের ফোন উদ্ধার করা হয়। দিন কয়েক পরে সেই ভিডিয়ো তারা পান।
ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, একটি ঘরের মধ্যে একা বসে রয়েছেন উমর। তার পরই তিনি আত্মঘাতী বোমারু নিয়ে বলতে শুরু করেন। উমরকে বলতে শোনা যায়, আত্মঘাতী বোমারুদের নিয়ে বেশির ভাগেরই ভুল ধারণা রয়েছে। যাঁদের আত্মঘাতী বোমারু বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আসলে তাঁরা আত্মঘাতী বোমারু নন। তাঁরা আসলে ইসলামের এক এক জন শহিদ। উমর আরও দাবি করেছেন, আত্মঘাতী বোমারু নিয়ে অনেক বাগ্বিতণ্ডা, তর্কবিতর্কও রয়েছে।
উমরের কণ্ঠে ‘মার্টারডম অপারেশন’-এর কথাও উঠে এসেছে আত্মঘাতী বোমারু সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে। তাঁর কথায়, ‘‘আত্মঘাতী হামলার সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, যখন কোনও ব্যক্তি এটা মেনে নেন যে, তাঁর মৃত্যু একটি নিশ্চিত সময়, নিশ্চিত স্থানে হবে, তখন তাঁকে একটি ভয়ানক মানসিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তখন তিনি এটাই মেনে চলেন যে, মৃত্যুই তাঁর একমাত্র গন্তব্য। একটা বিশেষ লক্ষ্যে, বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যে তাঁকে মৃত্যুবরণ করতে হয়। আর তাঁকে শুধু আত্মঘাতী বোমারু বলেই দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। আর এখানেই আত্মঘাতী বোমারু বা হামলা নিয়ে ভুল ধারণা সমাজের।’’ তদন্তকারীদের সন্দেহ, এই ভিডিয়োর মাধ্যমে মগজধোলাইয়ের চেষ্টা করা হয়েছিল।