বিজেপির দুই মার্গদর্শককে রাজনৈতিক জীবনের উপান্তে পৌঁছে কি ফের কাঠগড়ায় উঠতে হবে? —ফাইল চিত্র।
বাবরি মসজিদ কাঁটায় আবার বিদ্ধ হতে পারেন লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর যোশীরা। ইঙ্গিত দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বাবরি ধ্বংস মামলায় ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দায়ের হয়েছিল আডবাণী, যোশী-সহ শীর্ষ বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে। রায়বরেলীর আদালত পরে ষড়যন্ত্রের দায় থেকে আডবাণীদের মুক্তি দেয়। তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই ইলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েও রায় বদলাতে পারেনি। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এ বার আভাস দিল, ফের কাঠগড়ায় উঠতে হতে পারে বিজেপির এই প্রবীণ নেতাদের।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে দিয়েছিল করসেবকদের বিশাল জমায়েত। অযোধ্যারই রামকথা কুঞ্জে সে দিন বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবার উদ্যোগে সমাবেশ আয়োজিত হয়েছিল। সেই সমাবেশ উপলক্ষেই করসেবকরা জড়ো হয়েছিলেন অযোধ্যায়। লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর যোশী, উমা ভারতী, কল্যাণ সিংহ, বিনয়, কাটিয়ার-সহ শীর্ষ বিজেপি নেতারা রামকথা কুঞ্জের মঞ্চ থেকে প্ররোচনা মূলক ভাষণ দেওয়ার পরেই বাবরি মসজিদ আক্রান্ত হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। আডবাণী, যোশী, উমা, কল্যাণ বা কাটিয়ারদের বাবরি মসজিদ চত্বরে সে দিন দেখা যায়নি। কিন্তু বিশাল জমায়েতকে উস্কে দিয়ে মসজিদ ভেঙে দেওয়ার চক্রান্ত তাঁরাই করেছিলেন, এই অভিযোগেই মামলা দায়ের হয়েছিল তাঁদের বিরুদ্ধে।
আড়াই দশক আগের সেই দিন। বাবরি ধ্বংসের পর গ্রেফতার করা হচ্ছে লালকৃষ্ণ আডবাণীকে। আবার কি ফিরবে সেই অস্বস্তি? ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে।
করসেবকদের বিরুদ্ধে বাবরি ধ্বংসের মামলা এবং আডবাণীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মামলা— দু’টিরই তদন্ত করছে সিবিআই। কিন্তু রায়বরেলীর একটি আদালত আডবাণীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ খারিজ করে দেয় এবং বিচার প্রক্রিয়া থেকে তাঁরা রেহাই পেয়ে যান। সিবিআই এর পর ইলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু হাইকোর্টও জানিয়ে দেয়, নিম্ন আদালতের রায়ই ঠিক। ২০১০ সালে ইলাহাবাদ হাইকোর্টের এই রায় পাওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে যায় সিবিআই। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সোমবার আভাস দিয়েছে, আডবাণীরা রেহাই নাও পেতে পারেন। গাঁধীনগর ও কানপুরের প্রবীণ সাংসদ লালকৃষ্ণ আডবাণী এবং মুরলী মনোহর যোশী তো বটেই, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা ভারতীও ছাড় পাচ্ছেন না সম্ভবত।
আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে শেষবেলাতেও অস্ত্র সেই মেরুকরণ
সুপ্রিম কোর্ট সোমবার বলেছে, ‘‘পদ্ধতিগত কারণে আডবাণী এবং অন্যদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ খারিজ হতে দেব না। ১৩ জনের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে, তাকে মামলার সঙ্গে জুড়ে আপনারা (সিবিআই) অতিরিক্ত চার্জশিট দিন।’’ যে আদালতে বাবরি মামলার বিচার চলছে, সেই আদালতকেই একই সঙ্গে ষড়যন্ত্রের অভিযোগের বিচার করতেও বলা হবে, এমন ইঙ্গিতও সুপ্রিম কোর্ট এ দিন দিয়েছে। ২২ মার্চ চূড়ান্ত রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু সোমবার মামলাটির বিষয়ে সিবিআই-কে যে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছে, তাতে আডবাণীদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।