Maoists

মাওবাদী ‘রাজধানী’তে ৫০ বছর ধরে কেন ঢুকতে পারেনি পুলিশ? গঢ়চিরৌলীর কমান্ড সেন্টারে অবশেষে উড়ল জাতীয় পতাকা

‘রেড করিডর’ (মাওবাদী পরিভাষায়, কমপ্যাক্ট রেভলিউশনারি জ়োন)-এর ভরকেন্দ্র হিসাবে পরিচিত সেই প্রত্যন্ত গ্রাম ফুলনারে অবশেষে গড়ে তোলা হল পুলিশ ফাঁড়ি। দীর্ঘ ৫০ বছর পরে মাওবাদীদের কমান্ড সেন্টারেই উড়ল তেরঙা পতাকা।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৯
Share:

— ফাইল চিত্র।

শেষ বার গ্রামবাসীরা যখন ‘সরকারের অস্তিত্ব’ দেখেছিলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী তখন ইন্দিরা গান্ধী! তার পর অর্ধশতক পেরিয়ে গেলেও মহারাষ্ট্রের গঢ়চিরৌলি জেলার ভমরাগঢ় মহকুমার ওই এলাকায় ‘প্রবেশ নিষিদ্ধ’ ছিল পুলিশ-প্রশাসনের। কারণটা হল অধুনা সিপিআই (মাওবাদী) এবং তাদের ‘খণ্ডিত পূর্বসূরি’ জনযুদ্ধের (‘পিপল্‌স ওয়ার গ্রুপ বা পিডব্লিউজি) জারি করা নিষেধাজ্ঞা।

Advertisement

‘রেড করিডর’ (মাওবাদী পরিভাষায়, কমপ্যাক্ট রেভলিউশনারি জ়োন)-এর ভরকেন্দ্র হিসাবে পরিচিত সেই প্রত্যন্ত গ্রাম ফুলনারে অবশেষে গড়ে তোলা হল পুলিশ ফাঁড়ি। দীর্ঘ ৫০ বছর পরে মাওবাদীদের কমান্ড সেন্টারেই উড়ল তেরঙা পতাকা। তৈরি হল পুলিশ ফাঁড়ি এবং গ্রামবাসীদের সাহায্যের জন্য প্রশাসনিক কেন্দ্র। ছত্তীসগঢ় সীমানা লাগোয়া অবুঝমাঢ়ের জঙ্গলের অন্দরে গড়া ‘গুন্ডুরওয়াহি’ ক্যাম্প আগামী দিনে মাওবাদী দমন অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মহারাষ্ট্র পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় আধাসেনার দাবি।

কী ভাবে দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে সশস্ত্র নকশালপন্থী-মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে রইল ফুলনার-গুন্ডুরওয়াহি এলাকা? মহারাষ্ট্র পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা এই দুর্গম উপত্যকা মাওবাদীদের ‘প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ’ হিসাবে কাজ করত। বর্ষাকালে পাহাড়ি খরস্রোতা নদী পার্লকোটার জল বেড়ে যাওয়ায় এবং ঘন ঘন হড়পা বানের কারণে প্রায় সাত মাস তা পারাপার করা যেত না। নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানগুলিতে মাওবাদী সশস্ত্র শাখা পিএলজিএ (পিপল্‌স লিবারেশন গেরিলা আর্মি)-র বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন, কোম্পানি এবং মিলিশিয়া দলমের সদস্যেরা মোতায়েন থাকতেন। এলাকা জুড়ে পেতে রাখা হয়েছিল, ল্যান্ডমাইন, ডাইরেকশনাল মাইন, বুবি ট্র্যাপ, আইইডি (ইম্প্রোভাইজ়ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস)-র ‘ফাঁদ’, ফলে যৌথবাহিনীর নাগালের বাইরে থেকে গিয়েছে ‘জনতানা সরকারে’র (মাওবাদীদের নিজস্ব প্রশাসনিক ব্যবস্থা) রাজধানী হিসাবে পরিচিত ফুলনার-গুন্ডুরওয়াহি।

Advertisement

পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে গত বছর থেকে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে ভারতকে ‘মাওবাদী মুক্ত’ করার কর্মসূচি ঘোষণার পরে। ছত্তীসগঢ়, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশার পাশাপাশি বিদর্ভেও মাওবাদী ঠিকানাগুলিতে ধারাবাহিক ভাবে হানা দিতে থাকে যৌথবাহিনী। কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআরপিএফের জঙ্গলযুদ্ধে প্রশিক্ষিত ‘কোবরা’ ব্যাটালিয়নের পাশাপাশি মহারাষ্ট্র পুলিশের বিশেষ মাওবাদী দমন বাহিনী সি-৬০-র জওয়ানেরা ধারাবাহিক অভিযান শুরু করেন গঢ়চিরৌলী জেলায়। পরিণামে একের পর এক মাওবাদী নেতা-কর্মী নিহত। আত্মসমর্পণে বাধ্য হন দেড় দশক আগে পশ্চিমবঙ্গে নিহত মাওবাদী নেতা মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজির ভাই মাল্লোজুলা বেণুগোপাল রাওয়ের মতো শীর্ষস্থানীয় নেতা। বস্তুত, গত ১৪ অক্টোবর ৬০ পিএলজিএ গেরিলা-সহ বেণুগোপালের আত্মসমর্পণের পরেই ফুলনার-গুন্ডুরওয়াহিতে ভেঙে পড়েছিল মাওবাদী প্রতিরোধ। চলতি মাসের গোড়ায় সেখানে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হল প্রশাসনের কর্তৃত্ব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement