জোট-লক্ষ্যে এক পথেই মমতা-চন্দ্র

বিজেপি-বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলির জোটের প্রধান অনুঘটক হয়ে উঠছে রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর এ বার দিল্লিতে এসে ফেডারাল ফ্রন্টের সলতে পাকানোর কাজে নামলেন সদ্য এনডিএ-ত্যাগী চন্দ্রবাবু নায়ডু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৩৫
Share:

উত্তর বনাম দক্ষিণের বিবাদে, দক্ষিণের সঙ্গেই থাকছে পূর্ব।

Advertisement

বিজেপি-বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলির জোটের প্রধান অনুঘটক হয়ে উঠছে রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর এ বার দিল্লিতে এসে ফেডারাল ফ্রন্টের সলতে পাকানোর কাজে নামলেন সদ্য এনডিএ-ত্যাগী চন্দ্রবাবু নায়ডু। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনকে ২০১১-র জনগণনা অনুযায়ী অর্থ বণ্টন করতে দেওয়া হয়েছে বলে এত দিন দক্ষিণের রাজ্যগুলি সরব ছিলেন। এ বার একই বিষয়ে সরব হল তৃণমূল।

গত সপ্তাহে দিল্লিতে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আঞ্চলিক দলগুলির জোট তৈরির মহড়া সেরে গিয়েছিলেন। এ বার একই লক্ষ্যে সোমবার রাতে দিল্লি এসে পৌঁছেছেন চন্দ্রবাবু। তাঁর দল তেলুগু দেশম মোদী সরকার অন্ধ্রের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণা করেনি বলেই কেন্দ্রের সরকার থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। আজ দলের সাংসদদের সঙ্গে টেলি-কনফারেন্সে চন্দ্রবাবু জানান, জাতীয় রাজনীতিতে আসার আগ্রহ তাঁর নেই। রাজ্যবাসীর স্বার্থ রক্ষাই তাঁর একমাত্র ভাবনা।

Advertisement

অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী কাল থেকেই বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের নেতাদের সঙ্গে দৌত্য শুরু করে দেবেন। সেখানেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আশ্চর্য মিল। মমতা যেমন সংসদে গিয়েই প্রায় সব দলের নেতার সঙ্গে আলোচনা সেরেছিলেন, চন্দ্রবাবুও একই ভাবে সংসদের সেন্ট্রাল হলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। মমতার সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন চন্দ্রবাবু।

এনডিএ-ত্যাগের পরে এটাই চন্দ্রবাবুর প্রথম দিল্লি সফর। কাল আঞ্চলিক দলের নেতাদের নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি। সেখানে তৃণমূলের লোকসভা ও রাজ্যসভার নেতারা যোগ দেবেন। সকালে তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীর সঙ্গেও কথা বলতে চেয়েছেন চন্দ্রবাবু।

ঠিক তার আগে আজ তৃণমূল অভিযোগ তুলেছে, পঞ্চদশ অর্থ কমিশন ২০১১-র জনগণনা অনুযায়ী জনসংখ্যা ধরে অর্থ বণ্টন করলে পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক ক্ষতি হবে। ঠিক এই অভিযোগেই দক্ষিণের রাজ্যগুলি গত কয়েক দিন ধরে একজোট হয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব রয়েছে। তাদের আপত্তির কারণ হল, এত দিন অর্থ কমিশন ১৯৭১-এর জনগণনার তথ্য মেনে অর্থ বণ্টনের হিসেব কষত। কোন রাজ্যের করের ভাগ কত হবে, জনসংখ্যা তার অন্যতম মাপকাঠি।

তামিলনাড়ু, কর্নাটক, কেরলের মতো রাজ্যগুলির যুক্তি, উত্তর ভারতের তুলনায় দক্ষিণের রাজ্যগুলি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বেশি সফল হয়েছে। তার জন্য তারা আর্থিক ভাবে বঞ্চিত হবে কেন? দক্ষিণের রাজ্যগুলির আরও যুক্তি, এমনিতেই অর্থ কমিশন গরিব রাজ্যগুলিকে বেশি অর্থ দেয়। দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি অর্থনৈতিক ভাবে অপেক্ষাকৃত এগিয়ে বলে সে দিক দিয়েও বঞ্চিত।

এ দিন একই প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূলও। তাদের দাবি, চতুর্দশ অর্থ কমিশন যদি ২০১১-র জনগণনা অনুযায়ী অর্থ বণ্টন করত, তা হলে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হত। অন্ধ্র, তামিলনাড়ু, কেরল, কর্নাটক, ওডিশা, অসমের মতো ১২টি রাজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হত। ডিএমকে নেতা স্ট্যালিন ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এ নিয়ে চিঠি লিখেছেন। ১০ এপ্রিল মোদী করুণানিধির সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন চেন্নাই। সেখানে তিনি এ বিষয়ে তামিল নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন।

অর্থ বিষয়ক সচিব সুভাষচন্দ্র গর্গের যুক্তি, চতুর্দশ অর্থ কমিশন নিজে থেকেই ২০১১-র জনগণনার পরিসংখ্যান দেখেছিল। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনকে ১৯৭১ ও ২০১১-দু’টি জনগণনার হিসেবই দেখতে বলা হয়েছে। ফলে কোন রাজ্য জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কতটা উন্নতি করেছে, তা-ও ধরা পড়বে। ফলে বঞ্চনার কোনও প্রশ্নই নেই। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্বের প্রশ্ন, কেন্দ্রে এ বিষয়ে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করে একতরফা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন