ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতি নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েই বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছাঁটল বিশ্বব্যাঙ্ক

বিশ্ব ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, এপ্রিলে তারা মনে করেছিল, চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধি দাঁড়াবে ৭.৫ শতাংশে। কিন্তু এই মুহূর্তে ভারতীয় অর্থনীতির যা ছবি, তাতে তা ৬ শতাংশে নেমে আসবে বলে তাদের ধারণা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৫৩
Share:

ভারতের বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেড় শতাংশ বিন্দু কমিয়ে দিল বিশ্ব ব্যাঙ্ক।—ছবি রয়টার্স।

কেউ বলছেন, নতুন প্রজন্ম অ্যাপ-ক্যাবে চড়ে বলে গাড়ি বিক্রি কমছে! কেউ বলছেন, তিন সিনেমা মিলিয়ে এক দিনে ১২০ কোটির ব্যবসা বোঝাচ্ছে অর্থনীতি কত ভাল! কেউ বলছেন, এত আলোচনা না করলেই অর্থনীতির হাল ভাল হবে!

Advertisement

সত্যিটা মানছেন না কেউই। কিন্তু বাস্তব হল, বিশ্ব অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়ার খেসারত যে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশকেই সব থেকে বেশি গুনতে হবে, সেই হুঁশিয়ারি ইতিমধ্যেই দিয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ)। চাহিদাকে চাঙ্গা করতে নাগাড়ে সুদ কমানোর পরেও বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছাঁটাই করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এ বার এক ধাক্কায় ওই পূর্বাভাস দেড় শতাংশ বিন্দু কমিয়ে দিল বিশ্ব ব্যাঙ্কও। চলতি অর্থবর্ষে আগে যেখানে ৭.৫% বৃদ্ধির সম্ভাবনা ধরা ছিল, এখন তা মেরেকেটে ৬% হবে বলে মনে করছে তারা। সব মিলিয়ে অর্থনীতির কঙ্কালসার চেহারাটা ক্রমশ ফুটে উঠছে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রীরা তো এই সঙ্কটের কথা মানতেই নারাজ! বরং কার্যত ‘কিছুই হয়নি’ ভাব ফুটে উঠছে তাঁদের বয়ানে।

বিশ্ব ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, এপ্রিলে তারা মনে করেছিল, চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধি দাঁড়াবে ৭.৫ শতাংশে। কিন্তু এই মুহূর্তে ভারতীয় অর্থনীতির যা ছবি, তাতে তা ৬ শতাংশে নেমে আসবে বলে তাদের ধারণা। সে ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই ‘জখম’ আর্থিক ক্ষেত্র আরও দুর্বল হবে বলে আশঙ্কা। একই ভাবে বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৯% থেকে ৬.১ শতাংশে নামিয়ে এনেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ৬.২% থেকে তা কমিয়ে ৫.৮% করেছে মূল্যায়ন সংস্থা মুডি’জও।

Advertisement

শুধু বৃদ্ধির পরিসংখ্যানে নয়, ভারতীয় অর্থনীতির বিবর্ণ ছবি ফুটে উঠছে প্রায় সমস্ত মাপকাঠিতেই। চাহিদা তলানিতে। উৎসবের মরসুমেও বিক্রিবাটায় ভাটা। মাসের পর মাস বিক্রিতে ‘মন্দার’ দুঃসংবাদ শোনাচ্ছে গাড়ি শিল্প। শুধু গাড়ি শিল্পেই কাজ খুইয়েছেন কয়েক লক্ষ কর্মী। অর্থনীতি যে খাদের মুখে, সে বিষয়ে সতর্ক করেছেন শীর্ষ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনও। রাজনের আশঙ্কা, পরিস্থিতি আসলে কতটা সঙ্গিন, হয়তো তা বুঝতেই পারছে না কেন্দ্র। আর নয়তো বুঝেও তা এড়িয়ে যাচ্ছে। কারণ, চাহিদায় আকালের কারণে শুধু যে বৃদ্ধি ধাক্কা খেয়েছে, তা নয়। তাকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর মতো বিশেষ রসদও হাতে নেই মোদী সরকারের।

তাঁর মতে, কেন্দ্র রাজকোষ ঘাটতিকে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রাখার কথা বলছে বটে, কিন্তু বিস্তর ধুলো জমে আছে তার হিসেবের কার্পেটের নীচে। অর্থাৎ ইঙ্গিত, হিসেবের কারিকুরিতে ঘাটতি মাত্রা ছাড়াচ্ছে না। কিন্তু আসলে তার পরিমাণ অনেক বেশি।

তা ছাড়া, একের পর এক ঘোষণা করা প্রকল্পে বিপুল খরচের দায় কেন্দ্রের ঘাড়ে চেপে রয়েছে। জিএসটি আদায় লক্ষ্যের ধারেকাছে নেই। বৃদ্ধি ঢিমে হওয়ায় যার সাপেক্ষে ঘাটতি মাপা হয়, সেই জিডিপি-ও সে ভাবে বাড়বে না। তাই রাজকোষ ঘাটতিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি কিংবা কর ছাড়ের সুবিধা দেওয়া আর কতখানি সম্ভব, সেই প্রশ্ন থাকছেই। হালে মূল্যবৃদ্ধিও মুখ তুলছে।

অথচ এখনও ‘অর্থনীতির অসুখ’ মানতে আপত্তি মোদীর মন্ত্রীদের! অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, নতুন প্রজন্ম অ্যাপ-ক্যাবে চড়ছেন বলে গাড়ি বিক্রি কমেছে! রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলে দিয়েছেন, বৃদ্ধির অঙ্ক কষে মাথা খারাপ করার দরকারই নেই। শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ারের দাবি, দেশে কাজ প্রচুর। অভাব আসলে দক্ষ প্রার্থীর। সঙ্ঘ-প্রধান মোহন ভাগবতের সওয়াল, বেশি আলোচনা করলেই ক্ষতি অর্থনীতির। সব কিছুর উপরে আবার এক দিনে তিন সিনেমার ১২০ কোটি টাকার ব্যবসা মানেই অর্থনীতি চাঙ্গা, এই ‘তত্ত্ব আওড়ে’ সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। যদিও পরে সেই মন্তব্য ফিরিয়ে নেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন