ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া রোডের বাড়িতে কফিন আঁকড়ে সিআরপিএফ অফিসার প্রমোদ কুমারের স্ত্রী। সঙ্গে মেয়ে। ছবি: শৈলেন সরকার।
কাশ্মীরের ক্ষতে মলম লাগাতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরুর প্রস্তাব উঠেছে। কিন্তু তা নিয়ে এখনও কোনও পদক্ষেপ করেনি নরেন্দ্র মোদী সরকার। বরং স্বাধীনতা দিবসে জঙ্গি হানায় সিআরপিএফের এক কম্যান্ডিং অফিসারের মৃত্যুর পরে ফের অগ্নিগর্ভ উপত্যকা। বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে আজ আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পরে ৩৯ দিন ধরে কার্ফু জারি রয়েছে উপত্যকায়। সম্প্রতি পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছে বলে মনে করছিলেন কেন্দ্র ও রাজ্যের কর্তারা। কিন্তু গত কাল নওহাট্টা এলাকায় টহলদারির সময়ে জঙ্গি হামলার মুখে পড়ে সিআরপিএফের একটি দল। সেই সংঘর্ষে নিহত হন সিআরপিএফের কম্যান্ডিং অফিসার প্রমোদ কুমার। এর পর আজ বদগাম জেলার আরিপাঠানে সিআরপিএফের গাড়ি লক্ষ করে পাথর ছোড়ে জনতা। বাহিনীর গুলিতে নিহত হন ৪ জন। আবার অনন্তনাগে বাহিনীর গুলিতে নিহত হন ১ জন। রাতে পুলওয়ামায় গ্রেনেড হানায় আহত হয়েছেন ৫ পুলিশকর্মী।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, সিআরপিএফ অফিসারের মৃত্যুর পর থেকে মরিয়া হয়ে উঠেছেন জওয়ানরা। বিক্ষোভকারীদের অন্য কোনও ভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে সরাসরি গুলি চালাচ্ছেন তাঁরা। ফলে হতাহতের সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ।
কাশ্মীরের পরিস্থিতির ফের অবনতি হওয়ায় আজ দিল্লিতে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সরকারি সূত্রের খবর, কাশ্মীরে বাহিনীর হামলায় নাগরিকদের মৃত্যুর ঘটনা এড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু এই নির্দেশে পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হবে তা নিয়ে সন্দিহান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারাই।
পুরো বিষয়টিই মোদী সরকারের রাজনৈতিক ব্যর্থতার ফল বলে মনে করছেন বিরোধীরা। সংসদে কাশ্মীর নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনায় এই বিষয়টি নিয়ে সরবও হয়েছিলেন তাঁরা। সেই আলোচনায় সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেছিলেন, ‘‘২০১০ সালে কাশ্মীরে অশান্তির সময়ে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিল মনমোহন সিংহ সরকার। সেই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ভূস্বর্গে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। তার পরেই গোলমাল কমে আসে।’’ এখনও এমন পদক্ষেপ করা যেতে পারে বলে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। পরে সর্বদল বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু মোদী সরকার এখনও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু নিয়ে উদ্যোগী হয়নি বলেই মনে করেন বিরোধীরা। ফলে অশান্তি কমারও কোনও লক্ষণ নেই। নিহত সিআরপিএফ অফিসার প্রমোদ কুমারের কফিনবন্দি দেহ আজ সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ঝাড়খণ্ডের মিহিজামে জামতাড়া রোডের বাড়িতে পৌঁছয়। তার অনেক আগে থেকেই বাড়ির সামনে ভিড় জমিয়েছিলেন এলাকার বহু মানুষ। দুঃসংবাদটা আগের দিন দুপুরে পেলেও মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত প্রমোদের বৃদ্ধ বাবা-মাকে তা জানাননি স্ত্রী নেহা দেবী। বাড়ি থেকে চিত্তরঞ্জনের শ্মশান পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা স্থানীয় বাসিন্দারা প্রমোদের দেহ কাঁধে বয়ে নিয়ে যান। শ্মশানে গান স্যালুট দেওয়া হয়।