শেষ কবে বিধায়ককে এলাকায় দেখা গিয়েছে তা মনে করতে পারছেন না হাইলাকান্দির আম-আদমি! তার উত্তর মেলেনি বিধায়কের ঘনিষ্ঠ শিবিরেও।
নাগরিকদের প্রশ্ন একটাই— কোথায় থাকেন তিনি? কী-ই বা করেন? হাইলাকান্দির বিধায়ক আব্দুল মুহিব মজুমদারকে নিয়ে এমনই আলোচনা শোনা যায় কান পাতলেই।
অসম-রাজনীতির অত্যন্ত পরিচিত মুখ মজুমদার। বর্তমানে রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের সভাপতি তিনি। ১৯৮৫ সালে অসম আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর আসাম চুক্তি স্বাক্ষরের সময় রাজ্যের ভাষিক এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুর নিরাপত্তার স্বার্থে আইএমডিটি আইনের খসড়া তৈরিতে অন্যতম দায়িত্ব ছিল ওই আইনজীবী নেতার। তা হলে খাস তাঁরই বিধানসভা এলাকার মানুষ এ সব কথা বলছেন কেন?
এ সব অভিযোগ মানতে নারাজ মজুমদার। তাঁর বক্তব্য, ‘‘৮৪ বছর বয়সেও মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। গুরুত্বপূর্ণ কাজে গুয়াহাটিতে থাকতে হলেও আমার বিধানসভা এলাকায় উন্নয়নমূলক সব কাজকর্ম ঠিকমতোই চলছে।’’
পাঁচ বারের বিধায়ক এবং দু’বার রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য আব্দুল মুহিবের অসমের সংখ্যালঘু মানুষের মধ্যে ভাল প্রভাব রয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, রাজনৈতিক স্বার্থে তিনি বার বার সংখ্যালঘু তাস খেলেন। একাধিক বার দলবদলও করেছেন। ১৯৯৬ সালে ‘ইউনাইটেড পিপলস পার্টি অব আসাম’ নামে নতুন একটি দল গঠন করে ভোটে লড়েছিলেন। এক সময় মুসলিম লিগের ঘনিষ্ঠ ছিলেন মজুমদার। ভাল সম্পর্ক ছিল সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়ম সিংহ যাদব ও প্রয়াত বিজেপি নেতা প্রমোদ মহাজনের সঙ্গেও।
এমন মাপের এক জন
নেতার বিরুদ্ধে এখন চাপা ক্ষোভ জমেছে হাইলাকান্দিতে। জেলার বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, এনআরসি নিয়ে সাধারণ মানুষ যখন দিশাহারা, তখনও দেখা মিলছে না বিধায়কের। তাঁর জানিয়েছেন, ২০১২ সালে শেষ বার হাইলাকান্দিতে এসেছিলেন বিধায়ক মজুমদার। তার পর থেকে আর তাঁর দেখা মেলেনি। বছরের পর বছর ধরে বিধায়ক এলাকায় না থাকার জেরে হরেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। থমকে গিয়েছে উন্নয়নের কাজও।
দিসপুরে বিধায়ক মজুমদারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘‘গুয়াহাটিতে থাকলেও আমার নির্বাচন চক্রের উন্নয়নমূলক কাজ ঠিকঠাক চলছে। মানুষকে টাকা দিয়ে পঙ্গু করার রাজনীতিতে আমি বিশ্বাসী নই।’’ বিধানসভা এলাকায় বছরের পর বছর ধরে না আসলেও কি ফের সেখানে ভোট চাইতে যাবেন? বিধায়কের জবাব, ‘‘সময় আসলে তা দেখা যাবে।’’
বিধায়ক মজুমদার হাইলাকান্দিবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন জেলা অধিবক্তা পরিষদের সভাপতি উজ্জ্বলকুমার দাস। তিনি বলেন, ‘‘তিন বছর ধরে বিধায়ক তাঁর বিধানসভা ক্ষেত্রের বাইরে রয়েছেন। দায়িত্ব পালন করতে না পারলে তাঁর ইস্তফা দেওয়া উচিত।’’ উল্লেখ্য, ২০১২ সালে হাইলাকান্দিতে আসার পর এই কারণে সার্কিট হাউসে তাঁকে ঘেরাও করেন কংগ্রেস কর্মী, সমর্থকরা। দিসপুরে বসে তাঁর এই রাজনীতি মেনে নিতে পারছেন না জেলার কংগ্রেস কর্মীরাও। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ঘনিষ্ঠ শিবিরে দলের কয়েক জন জানিয়েছেন, মজুমদারের অনুপস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে তাঁদের জবাবদিহি করতে হচ্ছে।
বিধায়ক মজুমদারকে ‘পলাতক নেতা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন হাইলাকান্দি জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সৈকত দত্ত চৌধুরী । তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে এক জন বিধায়ক জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করবেন, তা মেনে নেওয়া যায় না।’’ একই কথা শোনা গিয়েছে এআইইউডিইফ শিবিরেও।
হাইলাকান্দিতে বিধায়কের দু’জন প্রতিনিধি রয়েছেন। তাঁদেরই এক জন আব্দুল কায়ুম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘হাইলাকান্দিতে বিধায়ক তহবিলের টাকায় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চলছে। সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা নিয়মিত তাঁর কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। সেই মতো পদক্ষেপও করা হচ্ছে।’’