গগৈকে ছাড়: বিক্ষোভ সুপ্রিম কোর্টের সামনে

যৌন হেনস্থার অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি প্রধান বিচারপতিকে ক্লিনচিট দেওয়ার পরের দিন সকালে শীর্ষ আদালতের দরজায় বিক্ষোভ আছড়ে পড়ল। এরপরে বিকেলে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগকারিণী দাবি তুললেন, তাঁর হাতে শীর্ষ আদালতের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট তুলে দেওয়া হোক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৯ ০২:৪৬
Share:

পুলিশের সঙ্গে বচসা বিক্ষোভকারীদের। চলল ধরপাকড়ও। মঙ্গলবার দিল্লিতে। রয়টার্স

সকাল সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্টের সামনে অচেনা ছবি। শ’য়ে শ’য়ে জওয়ান, জলকামান। স্লোগান উঠছে ‘হল্লা বোল’। মহিলা বিক্ষোভকারীদের হাতে ধরা পোস্টারে লেখা, ‘সুপ্রিম কোর্ট: ল’মেকার না ল’ব্রেকার’, ‘কুছ তো শরম করো’। এক জনের হাতের পোস্টারে আবার প্রয়াত প্রধান বিচারপতি জে এস বর্মাকে উদ্ধৃত করে লেখা ‘তুমি যতই উঁচুতে পৌঁছে থাকো, আইনের ঊর্ধ্বে নও’।

Advertisement

যৌন হেনস্থার অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি প্রধান বিচারপতিকে ক্লিনচিট দেওয়ার পরের দিন সকালে শীর্ষ আদালতের দরজায় বিক্ষোভ আছড়ে পড়ল। এরপরে বিকেলে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগকারিণী দাবি তুললেন, তাঁর হাতে শীর্ষ আদালতের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট তুলে দেওয়া হোক।

শীর্ষ আদালতের ওই প্রাক্তন মহিলা কর্মী প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন তা খতিয়ে দেখে বিচারপতি শরদ এ বোবদের কমিটি সোমবার প্রধান বিচারপতিকে ক্লিনচিট দেয়। তারপরে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, ওই কমিটির তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা যাবে না। ২০০৩-এ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই তা বলা রয়েছে। কিন্তু বিচারপতিদের কমিটিকে চিঠি লিখে মহিলার যুক্তি, ‘‘আমার অভিযোগ ছিল প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে। যদি তদন্তের রিপোর্ট প্রধান বিচারপতির হাতে গিয়ে থাকে, তা হলে আমারও রিপোর্ট পাওয়া উচিত। আমার অভিযোগের সারবত্তানেই বলা হচ্ছে। অথচ এটা অদ্ভূত যে আমাকে তার কোনও কারণ দেখানো হচ্ছে না। এ তো ন্যায়ের মূল ধারণার বিপরীত।’’

Advertisement

তাঁকে আইনজীবীর সাহায্য দেওয়া হচ্ছে না, ঘরোয়া স্তরে তদন্ত হচ্ছে এবং শুনানির রেকর্ডিং হচ্ছে না বলে তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন ওই মহিলা। তা সত্ত্বেও কেন তদন্ত প্রক্রিয়া চালানো হল, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ধনঞ্জয় ওয়াই চন্দ্রচূড় চিঠি লিখে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। গোটা বিষয়টিকে এ ভাবে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা নিয়ে আইনজীবীরাও ঘরোয়া স্তরে প্রশ্ন তুলেছেন। মূলত মহিলা আন্দোলনকারী, বাম মহিলা সংগঠনগুলিই আজ সুপ্রিম কোর্টে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। ৫৫ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। কিন্তু ক্ষুব্ধ আইনজীবীরাও নৈতিক ভাবে তাঁদের সমর্থন জানিয়েছেন।

প্রশ্ন উঠেছে, সুপ্রিম কোর্টের অভ্যন্তরীণ কমিটি প্রধান বিচারপতিকে ক্লিনচিট দিয়ে দেওয়ার পরে অভিযোগকারিণীর সামনে কি আর কোনও রাস্তা খোলা রয়েছে?

আইনজীবীরা বিশেষ রাস্তা দেখছেন না। ২০০৩-এ কর্নাটক হাইকোর্টের বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছিল। তারপরে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, এই ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ করা যাবে না। ওই রিপোর্ট মূলত প্রধান বিচারপতির সন্তুষ্টির জন্য যে অভিযোগে সত্যতা রয়েছে কি না। এ ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির নিজের বিরুদ্ধেই অভিযোগ। কিন্তু যদি অন্য কোনও বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠত এবং তদন্তে সেই অভিযোগের সত্যতা মিলত, তাহলেও প্রধান বিচারপতির বিশেষ কিছু করার থাকত না। তিনি খুব বেশি হলে ওই বিচারপতির সামনে কোনও মামলা শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত না করতে পারেন।

সেক্ষেত্রে ওই মহিলার সামনে একমাত্র পুলিশে অভিযোগ জানানোর রাস্তা খোলা রয়েছে। কিন্তু সেখানেও বাধা রয়েছে। ১৯৯১-এ সুপ্রিম কোর্টই একটি রায়ে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টের বিচারপতিদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা বা তদন্ত করতে হলে প্রধান বিচারপতির অনুমতি নিতে হবে। খোদ প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধেই অভিযোগহলে দ্বিতীয় প্রবীণতম বিচারপতির অনুমতি নিতে হবে। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় প্রবীণতম বিচারপতি শরদ বোবদেই প্রধান বিচারপতি গগৈকে ক্লিনচিট দিয়েছেন। ফলে তিনি পুলিশি তদন্তের অনুমতি দেবেন কি না সেই প্রশ্ন উঠেছে।

মহিলা বিক্ষোভকারীদের দাবি, দেশের শীর্ষ আদালতের উচিত এমন নিয়ম তৈরি করা যাতে দেশের সর্বোচ্চ বিচার ব্যবস্থায় বিচার মেলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন