মোমের আলোয় স্মরণ উরিতে জঙ্গি হামলায় নিহত জওয়ানদের। শনিবার হাওড়ায়। — নিজস্ব চিত্র
উরির জঙ্গিহামলার জেরে এক দিকে পাক অভিনেতা অভিনেত্রীদের দেশ ছাড়ার ফতোয়া দিচ্ছে রাজনৈতিক সংগঠন, তেমনই সীমান্তের ওপারে বলিউডের সিনেমা অবিলম্বে বন্ধ করার আর্জি জমা পড়ছে আদালতে!
মাসকয়েক আগেই মুম্বইয়ে শিবসেনার বিরোধিতায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানের গজল গায়ক গুলাম আলির অনুষ্ঠান। সে বারও কাশ্মীর সমস্যা এবং সীমান্তে বার বার পাক সেনার হামলার খবর সামনে এনেই এমন ফতোয়া জারি করেছিল শিবসেনা। আর এ বার কাশ্মীরের উরিতে জঙ্গি হানায় ১৮ জন ভারতীয় জওয়ানের মৃত্যু, রাষ্ট্রপুঞ্জে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বক্তৃতায় কাশ্মীরের ‘আজাদি’কে সমর্থন করে বুরহান ওয়ানিকে যোদ্ধার তকমা দেওয়ায় চড়েছে উত্তেজনার পারদ।
কালই বলিউডে কর্মরত পাক অভিনেতা ফাওয়াদ খান এবং অভিনেত্রী মাহিরা খানকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশে ফিরে যাওয়ার ফতোয়া দিয়েছে রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস)। আজ, এমএনএসের সেই ফতোয়াকে সম্পূর্ণ সমর্থন করে করাচির একটি অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন কৌতুকশিল্পী রাজু শ্রীবাস্তব। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা তো শিল্পী। বন্দুক নিয়ে সীমান্তে যুদ্ধ করতে যেতে পারি না। কিন্তু যে ভাবে আমার দেশের নিরস্ত্র জওয়ানদের ঘুমের মধ্যে খুন করা হয়েছে, তার প্রতিবাদে করাচির অনুষ্ঠান বাতিল করেছি।’’
ক্ষোভের আগুন: পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিজেপির বিক্ষোভ ভোপালে। ছবি: পিটিআই।
এমএনএসের পক্ষ নিয়ে রাজু বলছেন, ‘‘এ দেশে কয়েক শো কোটি লোক থাকে। আমাদের দেশে তাবড় তাবড় শিল্পী রয়েছে। আমি বুঝতে পারছি না, সীমান্তের ওপার থেকে শিল্পী আনার দরকারটা কোথায়? কোনও পাকিস্তানি গায়ক আসছেন, অভিনেতারা আসছেন— ওরা না থাকলে কি বলিউডে তালা পড়ে যাবে?’’ শুধু বড়পর্দাতেই নয়, পাকিস্তান বিরোধী অবস্থানে অনড় ভারতের ছোটপর্দাও। উরি হামলার প্রেক্ষিতে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানের অনুষ্ঠানের সম্প্রচার। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বক্তৃতাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দিয়ে ওই চ্যানেলের শীর্ষ কর্তা সুভাষ চন্দ্র এই সিদ্ধান্তের কথা টুইট করেছেন। ২০১৪ সালে শুরু হওয়া ওই চ্যানেলটিতে তুরস্ক, মিশর, পাকিস্তানের মতো বিভিন্ন দেশের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হতো। মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার ফতোয়া সামনে আসার পরেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ।
কাশ্মীর সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত দেশের সিনেমা হলগুলোয় ভারতীয় সিনেমা দেখানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার আর্জি জানিয়ে লাহৌর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন আজহার সিদ্দিকি নামে এক আইনজীবী। তাঁর দাবি, কাশ্মীরে অত্যাচার চালাচ্ছে ভারতীয় সেনা। সেই দেশের সিনেমা দেখা শুধু কাশ্মীরিদেরই নয়, পাকিস্তানিদেরও অপমান। মাহিরা খান-ফাওয়াদ খানকে দেশ ছাড়তে বলার প্রসঙ্গ টেনে ওই আবেদনে বলা হয়েছে, এর প্রতিবাদে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাকিস্তানে ভারতীয় সিনেমার ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হোক।