স্বপ্ন: পরের প্রজন্মের সঙ্গে মণিমানিক গগৈ। গুয়াহাটিতে। ছবি: ফেসবুক
সশস্ত্র জঙ্গি ছিলেন মণিমানিক গগৈ। ১৯৮৮ সালে আলফার এই জঙ্গি ধরা পড়ে জেলে যান। জেল থেকে বেরিয়ে আর ফিরে যাননি সশস্ত্র পথে। বরং সমাজ বদলের এক ভিন্ন পথ বেছে নেন তিনি। গ্রাম্য পর্যটন ক্ষেত্র গড়ার পাশাপাশি কৃষি ক্ষেত্রেও বিভিন্ন উদ্যোগী ভাবনা চিন্তা নিয়ে কাজ চালিয়ে যান তিনি। প্রাক্তন এই আলফা জঙ্গিকে ২০১৮ সালের কৃষি মেলার শেষ দিনে ‘কৃষি উদ্ভাবক’ পুরস্কারে সম্মানিত করল ইন্ডিয়ান এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইএআরআই)। কেন্দ্রীয় কৃষি প্রতিমন্ত্রী পুরুষোত্তম রুপালা তাঁর হাতে তুলে দেন এই পুরস্কার।
এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে সমাজসেবার জন্য পুরস্কার ও অয়েল ইন্ডিয়ার ‘ইয়ং অ্যাচিভার’ পুরস্কারও পেয়েছেন মণিমানিক। দিল্লি থেকে পুরস্কার নিয়ে আজই গুয়াহাটি ফিরেছেন মণিমানিক। তাঁর কথায়, ‘‘এই ধরনের সম্মান দায়বদ্ধতা ও প্রত্যাশা আরও বাড়িয়ে দেয়।তবে আমি লড়াই চালিয়েই যাব।’’
জেল থেকে বেরিয়ে টিংখং ও নাহরকাটিয়ার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে, বিশেষ করে তরুণদের নিয়ে গড়েন দীঘলিয়া যুব সঙ্ঘ। ধীরে ধীরে আশপাশের গ্রামে কৃষি ও পর্যটন ভিত্তিক অনেকগুলি স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে তোলেন গগৈ। স্থানীয় যুবকদের সঙ্গে নিয়ে ও সরকারি সাহায্য নিয়ে ২০১০ সালে গড়ে তোলেন ‘সাসনি মেরবিল প্রকৃতি-পর্যটন কেন্দ্র’। ওই পর্যটন কেন্দ্রে ছোট দ্বীপ তারি করেছে তাঁরা। সেখানেই গড়ে উঠেছে অর্কিড ও ওষধি গাছের এক ছোটখাটো অরণ্য। আছে বিভিন্ন জলচর প্রাণী। প্রতি শীতেই পরিযায়ী পাখিরাও উড়ে আসে ওই পর্যটন কেন্দ্রে।
মণিমাণিক স্থানীয় দু’টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পাঠাগার ও সংস্কৃতিকেন্দ্রের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। ‘গতিশীল কৃষি ফার্ম’ নামে আদর্শ কৃষিকেন্দ্র গড়ে শালমারি, দীঘলিয়া, নাহারনি, নাগাকোটা-সহ বিভিন্ন গ্রামের যুবকদের রবি শস্য ও সবজি চাষে টেনে এনেছেন গগৈ। বেকার যুবকরা পেয়েছেন জীবিকার সন্ধান। নিজের সাত একর জমিতে তিনি বিভিন্ন ধরণের নতুন কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধান, কলা, চা ও নারকেল চাষ করেই মেটান নিজেদের প্রয়োজনটুকু।
প্রাক্তন এই আলফা জঙ্গির রূপান্তর ও কর্মকাণ্ডে আকর্ষিত হয়ে রাজ্য পুলিশের এডিজি ভাস্করজ্যোতি মহন্ত তাঁকে নিয়ে তৈরি করেছেন এক তথ্যচিত্রও।