প্রতীকী ছবি।
এত দিন শালবনি টাঁকশালে ছাপা হচ্ছিল শুধুই ২০০০ টাকার নোট। এ বার শুরু হল ৫০০ টাকার নোট ছাপা। এবং সেই কাজে গতি আনতে কাজে নামানো হল বায়ুসেনাকেও। নোট বাতিলের ফরমানের পর থেকে দম ফেলার ফুরসৎ নেই টাঁকশাল-কর্মীদের। রাতভর চলছে নোট ছাপার কাজ। বাদ নেই রবিবারও। সেই কাজে আরও গতি বাড়াতে মঙ্গলবার থেকে কাজে নামেন ১০০ জন বায়ুসেনা। কাছেই কলাইকুণ্ডা বাসুসেনা ঘাঁটি থেকে তাঁদের আনা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, নোট ছাপানোর প্রশিক্ষণ যাঁদের নেই, তাঁদের কেন এই কাজে লাগানো হচ্ছে? কেন নতুন নিয়োগ করা হচ্ছে না? একই প্রশ্ন ‘ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নোট মুদ্রণ প্রাইভেট লিমিটেড এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’-এর সহ-সভাপতি নেপাল সিংহও।
নোট মুদ্রণ প্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানকার উন্নয়নে বেশ কিছু দিন ধরেই পদক্ষেপ করা হচ্ছে। আগে থেকেই ১২০ জন দক্ষ কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছিল। কিন্তু তা চূড়ান্ত হয়নি। এর মধ্যেই কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার ছাপাখানার দক্ষ কর্মীদের যেমন কাজে লাগানো হচ্ছে, তেমনই ব্যবহার করা হচ্ছে বায়ুসেনাকেও। জওয়ানদের দু’টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি দলকে গুদাম থেকে নোট ছাপানোর কাগজ বয়ে নিয়ে যাওয়া, যন্ত্রে কাগজ লাগানো, নোট বাক্সবন্দি করা, সেই বাক্স অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার মতো কাজে লাগানো হয়েছে। আর যে সব জওয়ানের কারিগরি জ্ঞান রয়েছে, তাঁদের নিয়োগ করা হয়েছে এমন জায়গায়, যেখানে সহজ কয়েকটি প্রযুক্তির ব্যবহারে কাজ হয়।
প্রেসের এক আধিকারিক জানান, বায়ুসেনার অনেক জওয়ানের পলিটেকনিক ডিপ্লোমা রয়েছে। বিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্রও রয়েছেন অনেকে। তাঁরা একটু চেষ্টা করলেই নোট ছাপানোর কাজের সহজ কয়েকটি প্রযুক্তিগত বিষয় আয়ত্ত করতে পারবেন। তাঁর কথায়, ‘‘নোট ছাপানোর কাজের সম্পূর্ণ দায়িত্ব জওয়ানদের হাতে ছাড়া হচ্ছে না। ছাপার কাজে যেখানে ৪ জন দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন, সেখানে ৩ জন কর্মীর সঙ্গে এক বা দু’জন জওয়ানকে কাজে লাগানো হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে প্রতিদিন যে সব টাঁকশাল কর্মীকে তিন শিফ্টে কাজ করতে হচ্ছে, তাঁরা কিছুটা সময় বিশ্রামও নিতে পারবেন।” তবে, নোট ‘ফিনিশিং’-এর কাজে বায়ুসেনাকে লাগানো হবে না। এত দিন সড়কপথে এবং খড়্গপুর-আদ্রা রেলপথে বিভিন্ন জায়গায় নোট পাঠানো হচ্ছিল। দ্রুত নতুন নোট পাঠাতে এ বার বায়ুসেনার বিমানও ব্যবহার করা হবে।
দেশে টাকা ছাপার ব্যবস্থা রয়েছে চার জায়গায়। নাসিক (মহারাষ্ট্র), দেওয়াস (মধ্যপ্রদেশ), মহীশূর (কর্নাটক) এবং শালবনিতে। শালবনি টাঁকশালে স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা যথাক্রমে ৭৫০ ও ৫৫০ জন। বেশির ভাগ সময় দু’টি শিফ্টে ৮ ঘণ্টা করে ১৬ ঘণ্টা কাজ হয়। জরুরি ভিত্তিতে নোট ছাপা হয় তিন শিফ্টে।
নোট মুদ্রণ প্রেস সূত্রে খবর, ২০০০ টাকার নোট ছাপা এখন বন্ধ রয়েছে। ১০, ২০ ও ১০০ টাকার নোট ছাপা হচ্ছিল ক’দিন ধরে। সোমবার থেকে নতুন ৫০০-র নোট ছাপানো শুরু হয়েছে। নতুন নোট তৈরি করতে ৩-৪ দিন সময় লাগে।
এত দিন কেন ৫০০-র নোট ছাপানো শুরু হয়নি? প্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, নোট বাতিলের ঘোষণার পর শুধু নাসিক ও দেওয়াসেই ৫০০-র নতুন নোট ছাপা হচ্ছিল। ওই দু’টি প্রেসের ছাপানোর ক্ষমতা শালবনির থেকে অনেক কম। এখনও দেশের অনেক জায়গাতেই নতুন ৫০০ টাকার নোট পৌঁছয়নি। তাই পরে হলেও শালবনির প্রেসেও ৫০০ টাকার নোট ছাপার কাজ শুরু করল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।