এই মৃত্যু কি এনকাউন্টারেই? ময়না তদন্তের রিপোর্ট সামনে আসার পর আরও ঘনীভূর হচ্ছে রহস্য। ছবি: এএফপি।
ভোপাল এনকাউন্টার নিয়ে সংশয়ও আরও বাড়িয়ে দিল ময়না তদন্তের রিপোর্ট। মৃত জঙ্গিদের দেহে বুলেটের যতগুলি ক্ষত, তার সব ক’টিই কোমরের উপরে। কয়েক জনকে দু’বারেরও বেশি গুলি করা হয়েছে। কারও কারও ক্ষেত্রে এত কাছ থেকে গুলি চালানো হয়েছে যে তা শরীর ফুঁড়ে অন্য দিক দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। এনকাউন্টারে কি ঠিক এই ধরনের ক্ষতস্থান তৈরি হতে পারে? দু’পক্ষের মধ্যে গুলির লড়াই চললে কি কাউকে লক্ষ্য করে এত কাছ থেকে গুলি চালানো সম্ভব? প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা।
ময়না তদন্তের রিপোর্টে প্রথমত জানানো হয়েছে, আট জঙ্গিরই মৃত্যু হয়েছে গুলিতে। সে বিষয়ে অবশ্য ময়না তদন্তের আগেও কোনও সংশয় ছিল না। কিন্তু দুষ্কৃতীদের পালানো রুখতে যদি গুলি চালানো হয়, তা হলে পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনী প্রথমে পা লক্ষ্য করে গুলি চালায়। কারণ দুষ্কৃতীদের মেরে ফেলা নয়, তাদের ঘায়েল করাই পুলিশের প্রাথমিক লক্ষ্য। ভোপাল এনকাউন্টারে যে আট জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে, তাদের কারও পায়ে গুলির ক্ষত নেই। সবার ক্ষতই কোমরের উপরের অংশে।
ময়না তদন্তের রিপোর্ট থেকে আরও জানা গিয়েছে, কয়েক জন জঙ্গির দেহে দু’টিরও বেশি বুলেটের ক্ষত মিলেছে। পলাতকদের ফিরিয়ে আনাই যদি লক্ষ্য হয়ে থাকে, তা হলে তাদের দু’বারেরও বেশি গুলি করার কথা নয়। অর্থাৎ, ময়না তদন্তের রিপোর্টে স্পষ্ট, হত্যা করার লক্ষ্যেই পুলিশ গুলি চালিয়েছিল।
আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে ময়না তদন্তে। কোনও কোনও বুলেট জঙ্গিদের শরীরের এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। খুব কাছ থেকে গুলি না করলে তা সাধারণত এ ভাবে শরীরকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয় না।
পুলিশ এনকাউন্টার সম্পর্ক যে বয়ান দিয়েছে, স্বাভাবিক ভাবেই তার সবটা ময়না তদন্তের রিপোর্টের সঙ্গে মিলছে না। তাই এ বার ফরেনসিক তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফরেনসিক বিশ্লেষণেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, কত দূর থেকে গুলি করা হয়েছিল পলাতকদের।
আরও পড়ুন: এনকাউন্টার তত্ত্বে বিশ্বাস নেই, এ সবই প্রতিহিংসা: ক্ষোভ প্রকাশ মমতারও
দীপাবলির রাতে ঢিলেঢালা নিরাপত্তার সুযোগ নিয়ে ভোপাল সেন্ট্রাল জেল থেকে পালিয়েছিল নিষিদ্ধ সংগঠন সিমির ৮ সদস্য। পর দিন ভোপালের কাছে আচারপুরায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে তাদের মৃত্যুর খবর মেলে। ভোপালের আইজি যোগেশ চৌধুরি সংবাদমাধ্যমকে জানান, পলাতক জঙ্গিদের কাছে চারটি দেশি পিস্তল ছিল। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছিল বলেও যোগেশ চৌধুরি জানান। বুধবার মধ্যপ্রদেশ অ্যান্টি-টেরর স্কোয়াডের প্রধান সঞ্জীব শমি কিন্তু সম্পূর্ণ বিপরীত তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, এনকাউন্টারের সময় ৮ পলাতক জঙ্গির হাতে কোনও অস্ত্র ছিল না। এতে মধ্যপ্রদেশ সরকার তথা বিজেপির অস্বস্তি আরও বাড়ল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ইতিমধ্যেই বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেছে। তথাকথিত এনকাউন্টারের যে সব ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ্যে আনা হয়েছিল, তাতে কোথাও গুলির লড়াইয়ের প্রমাণ মেলেনি। বরং খুব কাছ থেকেই পলাতকদের লক্ষ্য করে পুলিশকে গুলি চালাতে দেখা গিয়েছে ওই সব ফুটেজে। ভিডিও রেকর্ডিং কে করলেন, ভিডিও কোন সূত্র থেকে প্রকাশ করা হল, সে সব অবশ্য স্পষ্ট নয়। গোটা ঘটনায় দেশ জুড়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন মধ্যপ্রদেশের সরকার এবং পুলিশের কাছ থেকে গোটা ঘটনার বাখ্যা চেয়েছে।