বুধবার জেলের পথে শশিকলা নটরাজন। ছবি: পিটিআই।
আগের বার যখন এই জেলটায় ঢুকেছিলেন শশিকলা, তখন তিনি ‘আম্মা’র সঙ্গী হয়ে ঢুকেছিলেন। সেটা ছিল ২০১৪-র সেপ্টেম্বর মাস।
সে বার জয়ললিতা, শশিকলাদের কনভয় যখন পৌঁছেছিল বেঙ্গালুরুর পরাপ্পনা অগ্রহরা সেন্ট্রাল জেলের সামনে, তখন শোকাকুল এআইএডিএমকে সমর্থকদের বিপুল ভিড়। ‘আম্মা’র নামে ঘন ঘন স্লোগান, ‘আম্মা’র জেলযাত্রার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ।
আড়াই বছর কেটেছে মাত্র। ২০১৭-র ফেব্রুয়ারিতে ফের শশিকলা নটরাজন কনভয় নিয়ে পৌঁছলেন বেঙ্গালুরুর পরাপ্পনা অগ্রহরা সেন্ট্রাল জেলের সামনে। এ বার আর ‘আম্মা’র সঙ্গী হয়ে নয়। বরং এআইএডিএমকে-র সর্বময়ী নেত্রী তথা ‘চিন্নাম্মা’ হয়ে। কিন্তু দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি সে ভাবে নেই। ‘চিন্নাম্মা’র জেল যাত্রার প্রতিবাদ কোনও ক্ষোভ নেই। বরং শশিকলার কনভয়ের চারটে গাড়িতেই কারা ভাঙচুর চালিয়ে দিল।
বুধবার সন্ধ্যায় জেল গেটের সামনে পৌঁছেই শশিকলা নটরাজন সম্ভবত বুঝতে পেরে গিয়েছিলেন, ছবিটা অনেক বদলে গিয়েছে, সামনের দিনগুলো অনেক কঠিন হতে চলেছে। জেলে শশিকলার প্রথম রাত কী ভাবে কাটল, জেল সূত্রে তেমন কিছু খবর বাইরে এসেছে। তা থেকে আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, আগামী ৩ বছর ১১ মাসেরও একটু বেশি সময় খুব সুখে কাটবে না তাঁর।
জেলে যাওয়ার পথে আম্মার সমাধি ছুঁয়ে গেলেন চিন্নাম্মা। ছবি: রয়টার্স।
শশিকলা নটরাজন যে তাঁদের কাছে কোনও একটি রাজ্যের শাসক দলের প্রধান বা কোনও একটি রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রক নন, তিনি যে এখন শুধুই কয়েদি নম্বর ৯২৩৪, সে কথা প্রথম দিনেই ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছে জেল কর্তৃপক্ষ। প্রথম ধাক্কাটা এসেছিল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকেই। বুধবার আত্মসমর্পন করার পর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে শশিকলা নটরাজনের আবেদন ছিল, তাঁর জন্য যেন ক্লাস ওয়ান সেলের ব্যবস্থা করা হয়। তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে তাঁকে ক্লাস ওয়ান সেল দেওয়া হোক, এমনই আবেদন ছিল শশিকলার। ক্লাস ওয়ান সেলের সুবিধা পেলে সেলের মধ্যে একটি টেলিভিশন বরাদ্দ হয়। জেলের খাবার নয়, বাড়িতে রান্না খাবার খাওয়ার সুযোগ মেলে। সপ্তাহে দু’বার আমিষ খাবার দেওয়া হয়। কিন্তু এই রকম কোনও সেল শশিকলার জন্য বরাদ্দ করতে ম্যাজিস্ট্রেট রাজি হননি। শশিকলা চেয়েছিলেন, জেলের মধ্যে তাঁর জন্য একটি ধ্যান কক্ষ বরাদ্দ হোক। হয়নি। অবশেষে জেল কর্তৃপক্ষকে শশিকলা বলেছিলেন, জয়ললিতা আগের বার যে সেলে ছিলেন, তার পাশের সেলটি তাঁর জন্য বরাদ্দ করতে। জেল কর্তৃপক্ষ সে দাবিও মানেনি। তবে জেলে যাতে তাঁর মানিয়ে নিতে সুবিধা হয়, সে জন্য কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলে জেল কর্তৃপক্ষ শশিকলাকে জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: দশ হাজার শাড়ি, সাড়ে সাতশো জুতো!
আরও পড়ুন:
গরাদ সরিয়ে মায়ের পাশে বসে তাঁকে জড়িয়ে ধরেই কথা বলতে পারবে শিশুরা
জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, শশিকলা নটরাজনকে মহিলা ওয়ার্ডের সাধারণ সেলেই রাখা হয়েছে। তিনটির বেশি শাড়ি সঙ্গে রাখতে দেওয়া হয়নি তাঁকে। কম্বল, বালিশ এবং চাদর— বিছানা বলতে এই। অতএব বুধবার সেলের মেঝেতে কম্বলের উপর চাদর বিছিয়েই রাত কাটিয়েছেন পোয়েজ গার্ডেনের প্রাসাদ ছেড়ে সদ্য বেঙ্গালুরুর জেলে পা রাখা চিন্নাম্মা। ঘুম থেকে উঠে বৃহস্পতিবার সকালে তিনি প্রাতরাশ সেরেছেন ট্যামারিন্ড রাইস এবং চাটনি দিয়ে।
শশিকলা নটরাজনকে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। তাই জেলে তাঁর জন্য নির্দিষ্ট কাজ বরাদ্দ হওয়ার কথা। পরাপ্পনা অগ্রহরা সেন্ট্রাল জেল সূত্রের খবর, শশিকলা নটরাজনের জন্য মোমবাতি বানানোর কাজ বরাদ্দ হয়েছে। সেলে বসে রোজ তিনি মোমবাতি বানাবেন। তার জন্য দৈনিক মজুরি বাবদ ৫০ টাকা করে পাবেন। তবে জেলের পদস্থ কর্তারা এ সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেননি।