ভূতের চাঁদায় রমরমা সব জাতীয় দলের

এ যেন ভূতের চাঁদা। কোটি কোটি টাকায় রাজনৈতিক দলগুলির তহবিল ভরে উঠছে। কিন্তু শতকরা ৬৯ ভাগ ক্ষেত্রেই কোথা থেকে চাঁদা আসছে, তা কেউ জানে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৭
Share:

এ যেন ভূতের চাঁদা। কোটি কোটি টাকায় রাজনৈতিক দলগুলির তহবিল ভরে উঠছে। কিন্তু শতকরা ৬৯ ভাগ ক্ষেত্রেই কোথা থেকে চাঁদা আসছে, তা কেউ জানে না।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলছেন, দুর্নীতি কমাতে রাজনৈতিক দলগুলির চাঁদার হিসেবনিকেশে স্বচ্ছতা প্রয়োজন। কিন্তু বলাই সার। এখনও মোদী সরকার এ নিয়ে কাজের কাজ কিছুই করেনি। অন্য রাজনৈতিক দলগুলিরও উৎসাহ নেই। সকলের তহবিলেই যে ভূতের বাসা! কার ণ ২০০৪-’০৫ থেকে ২০১৪-’১৫। এই ১১ বছরে দেশের রাজনৈতিক দলগুলির তহবিলে মোট ১১,৩৬৭ কোটি টাকা চাঁদা জমা পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই চাঁদার উৎস কী, তা কেউ জানে না।

দেশে এতদিন ৬টি জাতীয় রাজনৈতিক দল ছিল। কংগ্রেস, বিজেপি, বিএসপি, এনসিপি, সিপিএম ও সিপিআই। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে তৃণমূলও জাতীয় দলের মর্যাদা পেয়েছে। আজ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এডিআর (অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস) তথ্য প্রকাশ করেছে, ওই ১১ বছরে আগের ৬টি জাতীয় দলের মধ্যে সব থেকে বেশি ভূতুড়ে চাঁদা ঢুকেছে কংগ্রেসের তহবিলে। প্রায় ৮৩ শতাংশ।
তার পরেই রয়েছে বিজেপি। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের দলের ৬৫ শতাংশ চাঁদা কোথা থেকে আসে, কারা জোগায়, তারও কোনও হিসেবনিকেশ নেই। আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে এ ব্যাপারে সব থেকে এগিয়ে উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টি এবং পঞ্জাবের শিরোমণি অকালি দল। কয়েকদিনের মধ্যেই দু’টি রাজ্যেই বিধানসভা নির্বাচন। দুই রাজ্যের বর্তমান শাসক দলের যথাক্রমে ৯৪ শতাংশ ও ৮৬ শতাংশ আয়ের উৎস কেউ জানে না।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গে শাসক দল তৃণমূলের এই ১১ বছরে মোট আয় ৫২.৩১ কোটি টাকা। তৃণমূলের ২৩ শতাংশ আয়ের উৎসের কোনও তথ্য নেই। এডিআর-এর তথ্য বলছে, রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূলের আয় বেড়েছে। ক্ষমতায় আসার আগের বছরেই আয় ছিল ৬.১৬ কোটি টাকা। ক্ষমতায় আসার পরেই তা বেড়ে হয় ১০.৫৬ কোটি টাকা। আয়ের দিক থেকে অবশ্য সিপিএম অনেক এগিয়ে। ওই ১১ বছরে সিপিএমের মোট আয় প্রায় ৮৯৩ কোটি টাকা।

চলতি আইন অনুযায়ী, ২০ হাজার টাকা বা তার কম নগদ চাঁদার ক্ষেত্রে দাতার নামধাম জানাতে হয় না। এই অর্থের উৎস নিয়ে কারও খোঁজখবর করার ক্ষমতা নেই। রাজনৈতিক দলগুলির দাবি, তাঁদের এই অজানা উৎস থেকে আয় আসলে ২০ হাজার টাকার কম চাঁদা থেকেই এসেছে। এ ব্যাপারে সব থেকে এগিয়ে মায়াবতীর দল বিএসপি। মায়াবতীর দাবি, তাঁর দলের আয়ের সবটাই এসেছে মাথা পিছু ২০ হাজার টাকার কম চাঁদা থেকে। অথচ সেই চাঁদা দিয়েই মায়াবতীর দলের আয় ১১ বছরে ২০৫৭ শতাংশ বেড়েছে। ৫.১৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১১১.৯৬ কোটি টাকা।

কালো টাকা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করার কথা বলে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। মনে করা হয়েছিল, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যের ভোটে এর ফলে মায়াবতীর দল যথেষ্ট বিপাকে পড়বে। কিন্তু পরে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের আমলারাই স্পষ্ট করে দেন, তেমন কোনও বিপাকে পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ বাড়ি, সম্পত্তি, চাঁদা, মূলধনী আয় বা অন্য সূত্র থেকে আয়ের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলিকে কোনও আয়কর দিতে হয় না। তারা যত খুশি বাতিল নোটে নগদ টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করতে পারে। কারও সেখানে আয়কর দফতরের নজরদারির ক্ষমতা নেই। শুধুমাত্র ২০ হাজার টাকার বেশি কারা চাঁদা দিয়েছে, আয়-ব্যয়ের হিসেব পেশের সময় তা নির্বাচন কমিশন ও আয়কর দফতরকে জানালেই যথেষ্ট।

আজ এডিআর-এর মঞ্চে প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি থেকে অর্থনীতিবিদ অরুণ কুমার, সকলেই রায় দিয়েছেন, নোট বাতিলের ফলে নির্বাচনী খরচে কালো টাকার রমরমা বন্ধ হয়নি। নোট বাতিলের পরে ডিজিটাল লেনদেনে গুরুত্ব দিচ্ছেন মোদী। এডিআর-এর ত্রিলোচন শাস্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘সরকার বলছে, সবজিওয়ালা, মুদি দোকানেও ডিজিটালে দাম মেটান। তা হলে রাজনৈতিক দলগুলি কেন চেক বা ডিজিটালে চাঁদা নেবে না?’’

এডিআর-এর আর এক সদস্য জগদীপ ছোকার বলেন, ‘‘চেক-এ চাঁদার প্রশ্ন উঠলেই দলগুলি বলে, কর্পোরেট সংস্থাগুলি উৎসাহী নয়। কারণ এক দলকে চাঁদা দিয়েছে জানাজানি হলে অন্য দলের কোপে পড়বে। আবার কর্পোরেট সংস্থাগুলি বলে, আমরা চেক-এ টাকা দিতে রাজি হলেও রাজনৈতিক দলগুলি নিতে চায় না।’’ অর্থনীতিবিদ অরুণ কুমার বলেন, ‘‘বাজারে নগদ টাকা থাকলে, রাজনৈতিক দলগুলির তহবিলেও কালো টাকা জমা পড়বে। কারণ রাজনৈতিক দলগুলিরও ভোটারদের মনোরঞ্জন, গুণ্ডা ভাড়ার জন্য কালো টাকা প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন