জেপিসিতে চূড়ান্ত নাগরিকত্ব বিল, ৭ জানুয়ারি লোকসভায় 

লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে ফের বিতর্ক উস্কে দিল বিজেপি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৪৬
Share:

লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে ফের বিতর্ক উস্কে দিল বিজেপি। আজ এই সংক্রান্ত যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) ১১-৫ ভোটে বিরোধীদের সব আপত্তি, সংশোধনী খারিজ করে বিলটিতে চূড়ান্ত রূপ দিল। আগামী ৩ জানুয়ারি কমিটির বৈঠকে দেওয়া হবে চূড়ান্ত অনুমোদন। তার পরেই ৭ জানুয়ারি বিলটি সংসদে পেশ হওয়ার কথা। চেষ্টা চলছে চলতি অধিবেশনে ওই সংশোধনী লোকসভায় পাশ করানোর।

Advertisement

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, রাজ্যসভায় বিলটি বিরোধীরা আটকে দিলেও তাতে বিজেপির অসুবিধা হবে না। লোকসভা ভোটে হিন্দু ভোটব্যাঙ্ককে সংগঠিত করতে এই বিলকে সামনে রেখে প্রচারে নামবে তারা। উল্লেখ্য, আজ জেপিসির এই সিদ্ধান্তের ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই বাঙালি অধ্যুষিত অসমের বরাক উপত্যাকায় সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মনে করা হচ্ছে, এই কারণেই আজ তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকে জেপিসি বিলটি চূড়ান্ত করেছে।

এ দিকে, আজই অসমে নাগরিক পঞ্জিতে (এনআরসি) খসড়া-ছুটদের পুনরায় আবেদনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। অসমের বিভিন্ন এনআরসি সেবাকেন্দ্রের সামনে রাত পর্যন্ত ভিড় রয়েছে। রাত বারোটা পর্যন্ত আবেদন জমা নেওয়া হয়েছে। মনে করা হচ্ছে সব মিলিয়ে ৩২ লক্ষের মতো আবেদন শেষ পর্যন্ত জমা পড়বে। খসড়া-ছুটের সংখ্যা ৪০ লক্ষ ৭ হাজার ৭০৭। মনে করা হচ্ছে, ৮ লক্ষের মতো মানুষ তালিকায় ঢোকার আর কোনও সুযোগই পাবেন না। সে ক্ষেত্রে বিদেশির তকমা লাগবে তাঁদের গায়ে। এই পরিস্থিতিতে নাগরিকত্ব বিল সংক্রান্ত আজকের সিদ্ধান্ত হিন্দুদের স্বস্তি দেবে। সঙ্কটে পড়বেন বাংলাভাষী মুসলিমরা। অসমের স্বরাষ্ট্র কমিশনার এল এস চাংসান জানান, ‘‘যাঁদের আবেদন জমা পড়বে না, নিয়ম মতো তাঁদের নাম ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে।’’

Advertisement

বিলটিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা, যেমন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিখ প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মানুষ ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার হয়ে ভারতে এলে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের এই সংশোধনীতে বলা হয়, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে আসা সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা এ দেশে ছ’বছর বাস করলেই ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ২০১৬ সালে অসম বিধানসভা ভোটের আগে ওই স‌ংশোধনী পেশ করা হয় লোকসভায়।

ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি তোলে বিরোধীরা। অসমেও বিলটি ঘিরে শুরু হয় বিরোধিতা। বিলটি পাশ হলে অসমে অসমিয়ারই সংখ্যালঘু হয়ে পড়তে পারে, সেই আশঙ্কায় পথে নামে একাধিক রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সংগঠন। বিলটি পাঠানো হয় জেপিসির কাছে। আজ কার্যত কমিটির শেষ বৈঠক ছিল। অসমে পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি ভাল ফল করায় দল চাইছিল, চলতি অধিবেশনেই বিলটি নিয়ে আসতে। আজ তাই বিলের সংশোধনীর বিভিন্ন ধারা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বিরোধীরা যে সংশোধনী এনেছিলেন তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।

তৃণমূল অবশ্য বৈঠকে বিলটি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। সূত্রের খবর, বৈঠকে এক তৃণমূল সাংসদ ক্ষোভের সুরেই জানান, ওই বিলের কারণে অসমে হিন্দু বাঙালিরা নিযার্তনের শিকার হচ্ছেন। জেপিসি সদস্য, তৃণমূলের আর এক সাংসদ সৌগত রায় ধর্মের ভিত্তিতে শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিবাদ জানান। তাঁকে সমর্থন করেন কংগ্রেসের সুস্মিতা দেব, সিপিএমের মহম্মদ সেলিমরা।

সংশোধনীতে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের মতো দেশগুলির নাম বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দেন বিরোধীরা। কিন্তু দু’টি প্রস্তাবেই ১১-৫ ভোটে হেরে যান বিরোধীরা।

অবশ্য গৃহীত হয়েছে বিজেপি সাংসদ মীনাক্ষী লেখির সংশোধনী। তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কোনও আবেদনকারীর নাগরিকত্ব বিচারের সময় তাঁর নামে থাকা অভিযোগ যেন বিচার না করা হয়। সংখ্যাধিক্যের জোরে সেই সংশোধনী পাশ হয়ে বৈঠকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন