রাজপথে আজ যোগ-যজ্ঞ, মহা ধুমধাম

ভেবেছিলেন নিচুতলার কর্মীদের পাঠিয়েই দায় সারবেন। নিজেরা আর রোববার সকালের ঘুমটা নষ্ট করবেন না। কিন্তু উপ-সচিব থেকে সচিব পর্যন্ত সব কেন্দ্রীয় আমলার কাছেই যে পৌঁছে গিয়েছে সাদা টি-শার্ট, যোগাসনের বই ও ডিভিডি! এর পর কি আর ঘরে থাকা যাবে রবিবারের সকালে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৫ ০৩:৪১
Share:

বিশ্ব যোগ দিবসের প্রাক্কালে প্রস্তুতি। শনিবার দিল্লির রাজপথে পিটিআইয়ের ছবি।

ভেবেছিলেন নিচুতলার কর্মীদের পাঠিয়েই দায় সারবেন। নিজেরা আর রোববার সকালের ঘুমটা নষ্ট করবেন না। কিন্তু উপ-সচিব থেকে সচিব পর্যন্ত সব কেন্দ্রীয় আমলার কাছেই যে পৌঁছে গিয়েছে সাদা টি-শার্ট, যোগাসনের বই ও ডিভিডি! এর পর কি আর ঘরে থাকা যাবে রবিবারের সকালে! দিনের আলো ফোটার আগেই ভোর ৪‌টে থেকে মেট্রো রেল চালু হয়ে যাবে। পৌনে ৬টার মধ্যে পৌঁছে যেতে হবে রাজপথে, ইন্ডিয়া গেটের সামনে। না পৌঁছে উপায় কী? ৬টা ৪০-এর মধ্যে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চলে আসবেন যে!

Advertisement

এমন সাজো সাজো রব বহু দিন দেখেনি দিল্লি। এত দিন বছরে একটি দিনকে ঘিরেই রাজধানীতে এমন রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন হতো। ২৬ জানুয়ারির কুচকাওয়াজ। প্রস্তুতি আর নিরাপত্তার বহরে তাকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে আগামিকালের বিশ্ব যোগ দিবস। আজ দুপুর ১টাতেই রাইসিনা হিলের নর্থ ব্লক, সাউথ ব্লক এবং রাজপথের আশেপাশে সব সরকারি দফতর ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছে। যেমনটি হয়ে থাকে প্রজাতন্ত্র দিবসের আগের দিন। রাজপথের প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশ ও তার দু’পাশের লন সবুজ কার্পেটে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। তার উপর পেতে দেওয়া হয়েছে চিন থেকে আনানো ৩৭ হাজার নরম ম্যাট। ওই ম্যাটের উপরেই যোগাসন করবেন সরকারি কর্মী, ছাত্রছাত্রী, এনসিসি ক্যাডেট, সেনা ও আধাসেনারা। শুধু জওয়ানরা নন, তিন সামরিক বাহিনীর প্রধানও যোগাসনে যোগ দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী রাজপথে এই অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন ঠিকই। কিন্তু নিজে যোগাসনে অংশ নেবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে রামদেব-সহ চার জন যোগ-গুরু যোগাসন করে দেখাবেন বলে আয়ুষ মন্ত্রক সূত্রের খবর। ক্যাবিনেট মন্ত্রীরাও দেশের বিভিন্ন শহরে বা নিজেদের লোকসভা কেন্দ্রে যোগ দিবসের অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে রওনা দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ লখনউয়ে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর মেরঠে, স্মৃতি ইরানি শিমলায়, বেঙ্কাইয়া নায়ডু চেন্নাইয়ে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নড্ডা হায়দরাবাদে। আর যাঁর ইস্তফার দাবিতে গত এক সপ্তাহ ধরে দিল্লির রাজনীতি সরগরম, সেই সুষমা স্বরাজ আজ সাতসকালে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে নিউ ইয়র্ক রওনা হলেন। রাষ্ট্রপুঞ্জে বিশ্ব যোগ দিবসের অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন বিদেশমন্ত্রী। মন্ত্রী-পারিষদরা তো থাকছেন। কিন্তু বিরোধীরাও কি মোদীর সঙ্গে এই যোগাসন যজ্ঞে যোগ দেবেন? এখন পর্যন্ত তেমন ইঙ্গিত নেই। সনিয়া ও রাহুল গাঁধী থেকে শুরু করে কংগ্রেসের সব নেতার কাছেই আমন্ত্রণ গিয়েছে। কিন্তু তাঁরা কেউই রাজপথের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না। কংগ্রেসের নেতা জয়রাম রমেশের ব্যাখ্যা, ‘‘এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। বিশ্ব যোগ দিবসের প্রচার হচ্ছে, খুবই ভাল কথা। আমিও ছোটবেলা থেকে যোগাসন করি। কিন্তু যোগাসন করতে কাউকে বাধ্য করা যায় না।’’ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল আবশ্য যোগ দেবেন ওই অনুষ্ঠানে।

Advertisement

এমনিতেই কংগ্রেসে ললিত মোদীকে নিয়ে বিতর্কে সরকারকে বিঁধতে ঘোষণা করে রেখেছে, রাজপথে যোগাসন পর্ব মেটার পর কালই তারা যন্তর-মন্তরে বিক্ষোভ দেখাবে। যে কর্মসূচির নাম দিয়েছে তারা ‘ললিত-আসন’। ফলে বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজপথে কাল বিভ্রাট-বিপত্তি কিছু ঘটলেই সমালোচনার ঝড় তুলবে তারা। তাই যোগাসনের এই যজ্ঞে কোথাও যাতে সুর না কাটে, সে ব্যবস্থাও রয়েছে। অভ্যাসের অভাবে ‘সেতুবন্ধাসন’ করতে গিয়ে কেউ যদি চোট পান, তার জন্য কাছেই মোতায়েন থাকবে ৪০টি অ্যাম্বুলেন্স।
যোগ-বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী থাকবেন প্রায় দু’‌শো জন।

এই বিপুল যজ্ঞের খরচ কত?

সরকারি সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে অন্তত ৪০ কোটি টাকা। বিশ্ব যোগ দিবসের প্রচারের জন্য তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রক খরচ করেছে সাড়ে ৫ কোটি টাকা। দেশে ও বিদেশে প্রচারে আরও প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয় করছে পর্যটন মন্ত্রক। এর সঙ্গে রাজপথে অনুষ্ঠানের খরচ তো আছেই।

আয়ুষ মন্ত্রকের এক কর্তা বললেন, ‘‘আমাদের ধারণা, গোটা দেশে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ কাল সকালে একসঙ্গে যোগাসন করবেন।’’ এটাকে বিশ্বরেকর্ড হিসেবে নথিভুক্ত করানোর জন্য গিনেস বইয়ের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করে রাখতে ডাক বিভাগ বিশেষ ডাকটিকিট প্রকাশ করবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে বিশেষ মুদ্রাও প্রকাশ করা হবে।

কাল শুধু নয়, যোগাসন নিয়ে পরশুও সরগরম থাকবে দিল্লি। একটি বণিকসভা জানিয়েছে, যোগাসন ঘিরে মোদী সরকারের উৎসাহ দেখে অনেকেই উৎসাহিত হবেন। তাই যোগ প্রশিক্ষকদের চাহিদাও বাড়বে। এবং তা আঁচ করেই সোমবার দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে জাতীয় যোগ প্রশিক্ষক সম্মেলন বসছে। যে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি।

মন্ত্রীরা ছুটছেন মোদীর যোগ ‘উৎসাহে’। ব্যস্ত বড় সরকারি কর্মী, আমলারাও। রাজপথে যোগযজ্ঞের আয়োজন, তার প্রচার সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা, কাজ কি কম! এই পর্যন্ত তা-ও ঠিক ছিল। প্রতি আমলেই সরকার কিছু না কিছু নিয়ে বেশি মাতে। তা-ই বলে শেষ রাতে উঠে সাদা টি-শার্টে সেজে রাজপথে ছোটা! এই চিন্তা নিয়েই আজ একটু সকাল-সকাল ঘুমোতে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে সংক্ষেপে কথা সারলেন কয়েক জন প্রবীণ আমলা।

চিন্তা তাঁদের এটাও, অনভ্যাসের যোগ শরীরে সইবে তো!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন