Education

শিক্ষায় বরাদ্দ কম, নবনীতির পুরনো লক্ষ্য

প্রথমত, নতুন নীতিতেই লেখা রয়েছে, ৬ শতাংশের ওই লক্ষ্য বাঁধা হয়েছিল ৫২ বছর আগে! ১৯৬৮ সালে শিক্ষা নীতি তৈরির সময়ে। তার পরে ১৯৮৬ সালে নতুন নীতি তৈরি এবং ১৯৯২ সালে তাতে সংশোধনের সময়েও ফের লক্ষ্য ছিল ওই ৬ শতাংশ।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২০ ০৪:৩০
Share:

প্রতীকী ছবি

অর্ধ শতাব্দী পেরিয়েও তির রয়ে গিয়েছে গাণ্ডীবেই। শিক্ষায় কেন্দ্র আর সমস্ত রাজ্যের মিলিত সরকারি বরাদ্দ মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি-র) ৬ শতাংশে পৌঁছয়নি এখনও!

Advertisement

বুধবার নতুন শিক্ষা নীতি ঘোষণার সময়ে শিক্ষা সচিব অমিত খারে বলেন, “শিক্ষায় সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রের মিলিত বরাদ্দ এখন জিডিপি-র প্রায় ৪.৪৩%। দ্রুত তাকে ৬ শতাংশে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য।”

উদ্দেশ্য সাধু। কিন্তু পিছু টেনে ধরছে ইতিহাস আর পরিসংখ্যান। গত কেন্দ্রীয় বাজেটের সময়ে কেন্দ্র ও সব রাজ্য মিলিয়ে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল জিডিপি-র ৪ শতাংশের আশেপাশে। কিন্তু তার মধ্যে কেন্দ্রের বাজেট থেকে গিয়েছে মোটে ০.৪৪%! বেঙ্গালুরুর সেন্টার ফর বাজেট অ্যান্ড পলিসি স্টাডিজ়ের ডিরেক্টর জ্যোৎস্না ঝা এবং সিনিয়র রিসার্চ অ্যাডভাইজ়র মধুসূদন রাও গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন, ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ যেখানে ০.৫৩% ছিল, ২০২০-২১ সালে তা কমে হয়েছে ০.৪৪%। বাজেট নথি অনুযায়ী, ২০০৪-০৫ থেকে ২০১১-১২ সালের মধ্যে (ইউপিএ জমানায়) ওই বরাদ্দের অনুপাত ঘোরাফেরা করেছে ০.৬ থেকে ১.১ শতাংশের মধ্যে। অর্থাৎ, মোদী সরকার যতই নতুন শিক্ষা নীতির হাত ধরে বিপ্লব আনার কথা বলুক, আসলে জিডিপি-র সাপেক্ষে শিক্ষায় বরাদ্দ কমেছে তাদের সময়ে। সম্ভবত সেই কারণেই নতুন শিক্ষা নীতিতে পুরনো লক্ষ্য আওড়ানো নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।

Advertisement

কেন্দ্রীয় বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ

বছর জিডিপি-র
অনুপাতে (%)

২০১৪-১৫ ০.৫৩
২০১৫-১৬ ০.৫০
২০১৬-১৭ ০.৪৭
২০১৭-১৮ ০.৪৮
২০১৮-১৯* ০.৪৪
২০১৯-২০** ০.৪৫
২০২০-২১** ০.৪৪

* সংশোধিত হিসেব। ** বাজেটে প্রাথমিক বরাদ্দ।
তথ্যসূত্র: কেন্দ্রীয় বাজেট ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক

প্রথমত, নতুন নীতিতেই লেখা রয়েছে, ৬ শতাংশের ওই লক্ষ্য বাঁধা হয়েছিল ৫২ বছর আগে! ১৯৬৮ সালে শিক্ষা নীতি তৈরির সময়ে। তার পরে ১৯৮৬ সালে নতুন নীতি তৈরি এবং ১৯৯২ সালে তাতে সংশোধনের সময়েও ফের লক্ষ্য ছিল ওই ৬ শতাংশ। মাঝে সেই লক্ষ্যের কথা বার বার বলেছে পূর্বতন যোজনা কমিশন এবং পরে নীতি আয়োগ। কিন্তু তা হয়নি। সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা শশী তারুরও।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের আক্ষেপ, এতগুলো বছরে ভারত তথা বিশ্বের অর্থনীতি শুধু শ্রম-নির্ভর না-থেকে তা হয়ে উঠেছে জ্ঞান ও দক্ষতা নির্ভর। তার সঙ্গে তাল মেলাতে শিক্ষায় বরাদ্দ বিপুল পরিমাণে বাড়িয়েছে অনেক উন্নত, এমনকি উন্নয়নশীল দেশ। পড়শি চিনই গবেষণা ও উদ্ভাবনে অর্থ বাড়িয়েছে বহু গুণ। কিন্তু ভারতের নজর নিবদ্ধ ৬ শতাংশেই। এক শিক্ষা উপদেষ্টার কথায়, “৫২ বছরের পুরনো লক্ষ্যও অধরা!”

দ্বিতীয়ত, কত দিনের মধ্যে ওই ৬ শতাংশের লক্ষ্য ছুঁতে হবে, সেই সময়সীমা নির্দিষ্ট করা হয়নি এ বারও। শুধু বলা হয়েছে, ‘যত দ্রুত সম্ভব।’ ফলে প্রশ্ন, তাড়াতাড়ি মানে কি ফের দীর্ঘ অপেক্ষা?

তৃতীয়ত, এই ৬ শতাংশের ফিতে ছোঁয়া নির্ভর করবে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ের উপরেই। সেখানে তারা বরাদ্দ কতটা বাড়াবে, তা কি অন্তত এ বার স্পষ্ট করবে কেন্দ্র? বিশেষত করোনার ধাক্কা সামাল দিতে গিয়ে অধিকাংশ রাজ্যের যেখানে ভাঁড়ে মা ভবানী দশা, সেখানে শিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধির বাড়তি দায়িত্ব কিছুটা হলেও নিতে রাজি হবে কেন্দ্র? প্রতিবাদী পড়ুয়াদের অভিযোগ, সেই ‘ট্র্যাক রেকর্ড’ মোদী সরকারের নেই। বরং সরকারি শিক্ষার পরিসর সঙ্কুচিত করে আনার পক্ষপাতী তারা।

চতুর্থত, শিক্ষায় বরাদ্দের বেশির ভাগটাই যায় বেতন-পেনশনের মতো বাঁধা খরচে। নতুন ক্লাসরুম, স্কুল, কলেজের মতো পরিকাঠামো গড়তে জোটে নামমাত্র। ২০১৯-২০ সালে শিক্ষায় সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট বাজেট বরাদ্দ মোট সামাজিক ব্যয়ের ৩৫.১৫%। কিন্তু তার মধ্যে নতুন পরিকাঠামোয় মোটে ১.৩২%। কেন্দ্রের বরাদ্দ যোগ করলেও ছবি বিশেষ আলাদা নয়। প্রশ্ন, কেন্দ্র যেখানে ২০৩৫ সালের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় ৩.৫ কোটি নতুন শিক্ষার্থীর উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করতে চাইছে, সেখানে ওই নামমাত্র বাজেট যথেষ্ট কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন