গোরক্ষকদের ‘জবাব’ দিয়ে খুশি অলওয়ার

হরিয়ানা সীমানার এই জেলার অধিকাংশ মানুষের পেশা গবাদি পশুপালন। বেশির ভাগই দুধ ব্যবসায়ী। যেমন ছিলেন পেহলু খান। ২০১৭-য় তাঁকে পিটিয়ে খুন করেছিল গোরক্ষক বাহিনী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:৫২
Share:

স্বস্তির হাসি। ছবি: পিটিআই।

বাড়ির উঠোনে পাতা খাটিয়ায় বসে বলছিলেন সন্দীপ মীনা— ‘‘রাতে টর্চ জ্বালিয়ে বসে থাকতে হয়। আতঙ্কে ভাল করে ঘুমোতেও পারি না। কোনও গরু যদি এদিক-ওদিক চলে যায়, রাজ্যের সীমানা পেরিয়ে!’’ ভোটের দিন কয়েক আগে।

Advertisement

অলওয়ার জেলার মুন্দাওয়াড় গ্রাম। গোরক্ষকদের তাণ্ডবের গ্রাউন্ড জিরোতে বসেই সে দিন বিজেপির ভরাডুবির ইঙ্গিত পেয়েছিলাম। মঙ্গলবার ফলপ্রকাশের পরে দেখা গেল, গোরক্ষকদের তাণ্ডবে কুঁকড়ে থাকা অলওয়ার জবাব দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের দলকে। ২০১৩-র বিধানসভা ভোটে ৯টি আসনে জেতা বিজেপি এ বারে নেমে এসেছে দুইয়ে!

হরিয়ানা সীমানার এই জেলার অধিকাংশ মানুষের পেশা গবাদি পশুপালন। বেশির ভাগই দুধ ব্যবসায়ী। যেমন ছিলেন পেহলু খান। ২০১৭-য় তাঁকে পিটিয়ে খুন করেছিল গোরক্ষক বাহিনী। যাদের প্রকাশ্যেই মদত দেয় বিজেপি। একই ভাবে ২০১৮য় খুন করা হয়েছিল রাকব্বর খানকে। দু’ক্ষেত্রেই গোরক্ষকরা বলেছিল, ওরা নাকি হরিয়ানায় গরু পাচার করছিল। পরপর দু’বছরে দু’টি ঘটনা গোটা এলাকাকে মুড়ে ফেলেছিল আতঙ্কে। গোরক্ষকদের আতঙ্ক।

Advertisement

রঘুনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা রমেশ সিনসিনাওয়াড় বলছিলেন তাঁর গত দু’বছরের অভিজ্ঞতার কথা। ‘‘পেহলু খান খুনের পরে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছিল। সবাই বেকসুর ছাড়া পেয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরছে! শুধু ওই পাঁচ জন তো নয়, সেই রাতে প্রায় ২০০ জন চড়াও হয়েছিল পেহলুর উপরে।’’ গত বছর মুসলমান প্রধান এই গ্রামের প্রায় ৪০টি বাড়ি লুঠপাট করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। অপরাধ, এরা নাকি গোহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছেন।

‘‘অলওয়ার মুখের উপর জবাব দিয়েছে। এই খুনিদের যারা পিছন থেকে উস্কে দিয়েছিল, আজ তাদের কথা বন্ধ’’— ভোটের ফলপ্রকাশের পরে একসুরে বলছে রঘুনাথপুর। গোটা এলাকায় খুশির রেশ। গোরক্ষকদের তাণ্ডবের ফলে ওখানে যে ক্ষোভ ছড়াচ্ছে, তা বুঝে কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিধায়ক বনোয়ারি লাল সিঙ্ঘলকে এ বারের ভোটে টিকিট দেয়নি বিজেপি। তার বদলে দাঁড় করানো হয়েছিল তুলনায় নরম মুখ সঞ্জয় শর্মাকে। কিন্তু তাতেও দুর্গরক্ষা হয়নি। কংগ্রেসের জেলা প্রধান টিকারাম জুলির কথায়, ‘‘বিজেপি এখানে বরাবরই ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা করেছে। ছলছুতোয় মিথ্যা অভিযোগ এনে তাণ্ডব করেছে। গোটা এলাকা জুড়ে উন্নয়নের কোনও নামগন্ধ নেই! কংগ্রেস নয়, এ বার ওদের জবাব দিয়েছে মানুষ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন