গভীর আলোচনায় মুলায়ম ও অমর সিংহ। —ফাইল চিত্র।
রামায়ণে যুবরাজ রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে কৈকেয়ীকে নিরন্তর উস্কে দিতেন মন্থরা। সমাজবাদী পার্টির নেতারা বলছেন, এই কলিযুগে মন্থরার ভূমিকা নিয়েছেন অমর সিংহ। ছেলে মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশের বিরুদ্ধে সমাজবাদী পার্টির ‘নেতাজি’ মুলায়ম সিংহ যাদবের কান ভাঙিয়ে বিবাদ বাড়াচ্ছেন তিনি।
উত্তরপ্রদেশে ভোটের মুখে যাদব কূলের বিবাদ গত কাল প্রকাশ্যে চলে আসে। কাকা শিবপাল যাদবের অনুগত হিসেবে পরিচিত মুখ্যসচিবকে কাল অখিলেশ যেই সরিয়ে দিয়েছেন, দলের দায়িত্ব থেকে অখিলেশকে সরিয়ে মুলায়ম সে দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন শিবপালকে। এর পরে সন্ধ্যা নামতেই পাল্টা প্যাঁচে কাকা কাৎ। মন্ত্রিসভা থেকে শিবপালকে সরিয়েই দিলেন অখিলেশ। সব কিছু দেখে সপা-র অন্য নেতারা বলছেন, এই সব কিছুর পিছনেই মন্থরা, অর্থাৎ অমর সিংহ। তাঁর ‘কুপরামর্শকেই’ আবার গুরুত্ব দিয়ে জটিলতা বাড়াচ্ছেন নেতাজি। আভাসে-ইঙ্গিতে অখিলেশ আজ বলেই ফেললেন— পরিবারে বাইরের লোকের ইন্ধনেই এ সব ঘটছে। আর যাঁকে নিয়ে এত আলোচনা, সেই অমর সিংহ হাত উল্টে বলছেন, ‘‘আমি এ সবের মধ্যেই নেই!’’
সমাজবাদী পার্টি সূত্রের মতে, যাদব পরিবারের এই লাভা উদ্গীরণ আকস্মিক নয়। আগ্নেয়গিরি তৈরি হয়েই ছিল। অখিলেশের অনুগত নেতা রামগোপাল যাদবের ডানা ছাঁটতে শিবপালই নেতাজি কে বলে দলে ফিরিয়েছেন অমরকে। কিন্তু অখিলেশ বুঝতে পারছিলেন, অমর-শিবপালের নিশানায় আসলে তিনি। অনুগত মুখ্যসচিব দীপক সিঙ্ঘলের মাধ্যমে অমর-শিবপাল জুটি নানা কলকাঠি নাড়ছিলেন রাজ্যে। শোনা যাচ্ছে— উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে সপা হেরে গেলেও যাতে দলের রাশ ধরে রাখা যায়, সে জন্যই অনুগত শিবপালের হাতে দলের দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব অমর দেন মুলায়মকে। কারণ ভোটে হেরে গেলে অখিলেশের শিরদাঁড়াও ভেঙে যাবে।
দলের এক নেতার কথায়, নেতাজি এখন অমর সিংহের হাত ধরে ‘বড় কিছু’ হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। সেটা রাষ্ট্রপতি পদও হতে পারে। অথবা বিজেপি-বিরোধী জোটের মুখ হয়ে প্রধানমন্ত্রী। অমর দলে ফিরে পুরনো ‘নেটওয়ার্কিং’ ফের শুরু করে দিয়েছেন। দিল্লির ভিভিআইপি মহলে ঘোরাফেরা, পার্টি দেওয়া— সব আগের মতোই শুরু করে দিয়েছেন। তাঁকে সরিয়ে যে ভাবে শিবপালকে দলের মাথা করা হয়েছে, তাতে ক্ষুব্ধ অখিলেশ। আজ তিনি বলেন, ‘‘কিছু সিদ্ধান্ত নেতাজি নেন। তাঁর উপরে কিছু বলার নেই। আবার কিছু সিদ্ধান্ত আমিও নিই।’’ শিবপালকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে অখিলেশ বুঝিয়ে দিলেন, কোনও ভাবেই তিনি লড়াই ছাড়ছেন না। মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ে শিবপাল অবশ্য আজই হন্তদন্ত হয়ে দিল্লি ছুটে আসেন মুলায়মের সঙ্গে দেখা করতে। বৈঠকের আগে তিনি বলেন, ‘‘নেতাজি যা বলবেন, তা-ই মেনে নেব।’’
ভোটের ঠিক মুখে যাদব কূলের এই বিবাদে মায়াবতীর বসপা হোক বা বিজেপি, কিংবা কংগ্রেস— প্রত্যেকেই উল্লসিত। মুখে সকলে বিষয়টিকে সপা-র ‘ঘরোয়া’ ব্যাপার বলে উড়িয়ে দিতে চাইলেও তলে তলে হাসাহাসি করতে ছাড়ছেন না। আর সে কারণেই সপা-র দুই শিবিরই এখন ঝগড়া ধামাচাপা দিতে তৎপর হয়েছে। কিন্তু মন্থরা কী খেলা খেলেন, তাই নিয়ে শঙ্কিত দলের সব নেতাই।