উত্তরপ্রদেশকে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর জন্য বেছে নিলেন অমিত শাহ

গৃহযুদ্ধে নড়বড়ে সমাজবাদী পরিবার। অস্তিত্ব রক্ষায় এখন ধর্মনিরপেক্ষতার নামে মহাজোটের চেষ্টা চলছে। ঠিক এই সময়টাকেই উত্তরপ্রদেশে “সার্জিক্যাল স্ট্রাইক”-এর জন্য বেছে নিলেন অমিত শাহ। ছেলে ও ভাইয়ের বিবাদ ধামাচাপা দিয়ে আপাতত উত্তরপ্রদেশে ‘মহাগঠবন্ধন’ তৈরির কাজ শুরু করেছেন মুলায়ম সিংহ যাদব।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৪০
Share:

গৃহযুদ্ধে নড়বড়ে সমাজবাদী পরিবার। অস্তিত্ব রক্ষায় এখন ধর্মনিরপেক্ষতার নামে মহাজোটের চেষ্টা চলছে। ঠিক এই সময়টাকেই উত্তরপ্রদেশে “সার্জিক্যাল স্ট্রাইক”-এর জন্য বেছে নিলেন অমিত শাহ।

Advertisement

ছেলে ও ভাইয়ের বিবাদ ধামাচাপা দিয়ে আপাতত উত্তরপ্রদেশে ‘মহাগঠবন্ধন’ তৈরির কাজ শুরু করেছেন মুলায়ম সিংহ যাদব। তাঁর দূত হয়ে ভাই শিবপাল যাদব পৌঁছে গিয়েছেন শরদ যাদব, অজিত সিংহের কাছে। এই দুই নেতার মাধ্যমে যোগাযোগ করা হচ্ছে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গেও। মুলায়ম যখন লখনউয়ের তখত থেকে বিজেপিকে দূরে রাখতে ব্যস্ত, সেই সময় তাঁর গড়ে ঢুকে একেবারে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কায়দায় আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। সমাজবাদী পার্টির দুর্গ বলে পরিচিত এটাওয়াতে বিশাল জনসভায় আজ অমিত শাহ একই সঙ্গে সমাজবাদী পার্টি-বিএসপি-কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন। তাঁর দাবি, উত্তরপ্রদেশে এ বার দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসছে বিজেপি।

এটাওয়া জেলায় সমাজবাদী পার্টির প্রভাব প্রশ্নাতীত। এলাকাটাকে তাই মুলায়মের গড় বলা হয়। সেই এটাওয়াকেই “সঙ্কল্প মহাসভা”-র জন্য বেছে নিয়েছেন অমিত শাহ। এর লক্ষ্য যে সমাজবাদী পার্টিকে দুর্বল করা, তাতে কোনও রাখঢাক করছেন না বিজেপি নেতারা। সেই কারণেই এই সভায় এক লক্ষেরও বেশি জমায়েতের পরিকল্পনা নিয়েছিল বিজেপি। বিএসপি ছেড়ে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া ব্রিজেশ পাঠক বলেন, “আজকের সমাবেশ থেকেই পুরো রাজ্যে বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে, এটাওয়ার মানুষও সমাজবাদী পার্টিকে সরিয়ে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনতে মনস্থির করে ফেলেছে।”

Advertisement

সমাজবাদী পার্টির ভাঙা ঘরের ছবিটা আজও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ দিন লখনউয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পুরস্কার দিয়েছেন অখিলেশ। কিন্তু এই অনুষ্ঠানে হাজির হননি মুলায়ম। তবে দলের এই সঙ্কটের মধ্যে বিজেপির মরিয়া আক্রমণের সামনে যে কোনও উপায়ে ঢাল দিতে চাইছেন মুলায়ম। গত কালই তাঁর ভাই, রাজ্য সভাপতি শিবপাল যাদব দিল্লিতে জেডি(ইউ) নেতা শরদ যাদব, কে সি ত্যাগী, রাষ্ট্রীয় লোকদলের নেতা অজিত সিংহের সঙ্গে বৈঠক করেন। নীতীশ কুমারের সঙ্গেও তাঁর ফোনে কথা হয়। আগামী ৫ নভেম্বর সমাজবাদী পার্টির রজত জয়ন্তী সমারোহের মঞ্চ থেকেই মহাজোটের ডাক দিতে চাইছে

দলের নেতৃত্ব।

কিন্তু উত্তরপ্রদেশে কি এখন মহাজোট হওয়া সম্ভব?

রাজনৈতিক সূত্রের খবর, শিবপালের সঙ্গে বৈঠকের পর শরদ যাদব সনিয়ার সঙ্গেও কথা বলেছেন। তবে দিল্লিতে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা জানিয়ে দিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশে এখন কোনও দলের সঙ্গেই সমঝোতায় যাওয়ার কথা ভাবছে না কংগ্রেস। তাঁর মতে, কংগ্রেস বলে আসছে গত ২৭ বছর ধরেই রাজ্যের বেহাল পরিস্থিতি। রাহুল গাঁধী ক্ষমতার জন্য কিষাণ যাত্রা করেননি, রাজনীতিকে বদলাতে চেয়েই পথে নেমেছেন। কংগ্রেস মুখপাত্র এ দিন বিজেপির পাশাপাশি সমাজবাদী পার্টি, বিএসপিরও সমালোচনা করেছেন। তবে কংগ্রেস নেতাদের একাংশ এখনও মনে করছেন, ধর্মনিরেপেক্ষ দলগুলির একজোট হওয়া দরকার। সমাজবাদী পার্টির নেতারা মনে করছেন, কংগ্রেসের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় লোকদলের সঙ্গে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে আসন সমঝোতায় যাওয়া যেতে পারে। লালুর দলও মুলায়মের সমর্থনে প্রচারে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শত্রুশিবিরের তোড়জোড় দেখেই অমিত শাহ সমাজবাদী পার্টির গড়ে গিয়ে বিএসপি ও কংগ্রেস নেতৃত্বকেও আক্রমণ করেছেন। মুলায়মের ঘরের লড়াই নিয়ে কটাক্ষ করে বলেছেন, মোদী সরকারের ফসল বিমা যোজনা নিয়ে উত্তরপ্রদেশে কাজ হচ্ছে না। কারণ কে কমিশন খাবে, তা নিয়ে কাকা-ভাইপোর লড়াই চলছে। মায়াবতী বিজেপিকে দলিত-বিরোধী তকমা দিতে চাইছেন। আজ তার জবাবে অমিত শাহ বলেন, মায়াবতীর রাজত্বে এ রাজ্যে ১১০০ দলিত হত্যা হয়েছিল। তাই ভাইপোর বদলে পিসি গদিতে এলেও রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি হবে না। আর রাহুল গাঁধীকে নিয়ে রসিকতা করে বলেছেন, “এক জন আছেন রাহুল বাবা, আরে হেসো না ভাইয়েরা, বড় নেতা উনি, কিষাণ যাত্রা করে আগরায় পৌঁছে বলেছেন, আলুর কারখানা তৈরি করে দেবেন। ইনি উত্তরপ্রদেশের কী উপকার করবেন? জানেনই না যে আলু কারখানায় হয় না, খেতে ফলে।”

সেনা-জওয়ানদের নামে ভোট টানার কৌশল আগেই নিয়েছিল বিজেপি। আজ এটাওয়াতে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে সেনার সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের জয়গান গেয়েছেন অমিত শাহ। তার রাজনৈতিক কৃতিত্ব নিতে বলেছেন, এত দিন কংগ্রেস সরকার হামলার জবাব জিতে পারত না। সেই কংগ্রেস সরকারকে সমর্থন করত বিএসপি ও সমাজবাদী পার্টি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement